কোভিড-১৯ : র্যাপিড টেস্ট চালু করল গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র
কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য আরটিপিসিআর পরীক্ষা কার্যক্রম বা র্যাপিড টেস্ট চালু করেছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। আজ শনিবার দুপুরে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, র্যাপিড টেস্ট করতে বাইরের একজন রোগীকে গুনতে হবে তিন হাজার টাকা। আর গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে যাদের স্বাস্থ্যবিমা আছে তাদের দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা দিতে হবে।
র্যাপিড টেস্টের উদ্বোধন উপলক্ষে আজ শনিবার সকাল ১১টায় গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের গেরিলা কমান্ডার মেজর এ টি এম হায়দার বীর উত্তম মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পরে দুপুর ১২টায় হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় অত্যাধুনিক মলিউকিউলার ল্যাবরেটরির উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। গণস্বাস্থ্যের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফরহাদ পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
গণবিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক লায়লা পারভীন বানুর সভাপতিত্বে ও ডা. মহিবুল্লাহ খন্দকারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি টেস্টের উদ্ভাবক দলের প্রধান অণুজীব বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল, র্যাপিড কিট টেস্টের গবেষক নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. ফিরোজ আহমেদ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি সন্ধ্যা রায়, অধ্যাপক ডা. ব্রিগেডিয়ার জেলারেল (অব.) মামুন মোস্তাফী, অধ্যাপক ডা. নাজিব মোহাম্মদ, গণস্বাস্থ্যের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, গণস্বাস্থ্যের ল্যাবরেটরি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মাহবুবুর রহমান, গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের পরিচালক ডা. বদরুল হক, প্যাথলজি বিভাগের প্রধান ডা. গোলাম মোহাম্মদ কোরেইশী, অধ্যাপক শওকত আরমান প্রমুখ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আপনারা অনেক ভালো উদ্যোগ নিয়েছেন। টেস্টের ক্ষেত্রে কর্মীরা যেন সংক্রামিত না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে সর্বোচ্চ সতর্ক থেকে টেস্টগুলো করতে হবে। আবার নমুনারও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং রেজাল্ট নির্ভুল করতে হবে। আমাদের নমুনা সংগ্রহে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। এতে ভুল হলে পজেটিভ একজন মানুষ কিন্তু নেগেটিভ হতে পারে। সবকিছু ঠিক হলো কিন্তু একজনের নামের জায়গায় আরেকজনের নাম চলে এলো- তখনো ভুল হতে পারে। সবকিছু স্বীকার করেই যত্ন নিয়ে কাজ করতে হবে।’
টেস্টের পাশাপাশি গবেষণায় জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কোভিড নিয়ে গবেষণার সুযোগ আছে। ল্যাবরেটরিতে শুধু রুটিন টেস্ট হবে না, গবেষণাও হবে বলে আমি আশা করছি।’
অণুজীব বিজ্ঞানী ডা. বিজন কুমার শীল বলেন, জানুয়ারি মাসে যখন আমরা কাজ শুরু করি তখনই আমাদের এই ল্যাবরেটরির পরিকল্পনা ছিল। এখন আমাদের ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা হয়ে গেছে। সব মেশিনারিজ চলে আসছে। বলে রাখি, ২০০৩ সালে করোনাভাইরাসের পিসিআর টেকনিকটি সিঙ্গাপুরে আমরা তৈরি করেছিলাম। ২০২০ সালে করোনাভাইরাস যখন আবার ফিরে এলো। আমরা মূলত সেই স্রোতধারার সঙ্গে আজকে মিলিত হতে যাচ্ছি।
ডা. ফিরোজ আহমেদ বলেন, এখান থেকে আমরা প্রতিদিন ২০০টি টেস্ট করতে পারব। আমরা চেষ্টা করব যাতে আমাদের টেস্টের মান খারাপ না হয়, নির্ভুল হয়। আমরা চেষ্টা করেছি প্রাইভেট হাসপাতালে যে দামে টেস্টটি করানো হয়, এখানে তার চেয়ে কমে করাতে। আশা করি, এখান থেকে টেস্ট করে কেউ বলবে না যে, আমি ভুয়া টেস্টের শিকার হয়েছি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘টেস্টের পাশাপাশি আমরা গবেষণায় মনোযোগী হচ্ছি। আমরা ৫০ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছি গবেষণার জন্য। আর আমরা সর্বোচ্চ গুণগত মান বজায় রাখছি।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সারা বিশ্বে নাম করেছে তার ওষুধ নীতির কারণে। ঠিক একইভাবে বাংলাদেশ পৃথিবীতে নাম করত যদি অ্যান্টিবডি টেস্টের অনুমতি দিত।’ এ সময় তিনি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে ব্যবসায়ীসহ সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানান।