ক্লিনফিডের পরও বিদেশি চ্যানেল না চালালে মোবাইল কোর্ট
বিদেশি চ্যানেলগুলো ক্লিনফিড দেওয়ার পরও ক্যাবল অপারেটররা না চালালে, বুধবার থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
বিজ্ঞাপন ছাড়া অর্থাৎ ক্লিনফিড না দিলে দেশে বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করা হয় ১ অক্টোবর থেকে। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সম্প্রচার সাংবাদিকদের সংগঠন বিজেসির নেতারা। ক্যাবল অপারেটররা ডিশ লাইনের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি চ্যানেল দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে বছরে হাজার কোটি টাকা নিলেও তা থেকে চ্যানেলগুলো কোনো অর্থ পায় না বলে এ সময় তুলে ধরেন বিজেসি নেতারা। বিষয়টি দেখার পাশাপাশি, কোনো পক্ষের চাপেই এবার ক্লিনফিড ছাড়া বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচারের অনুমতি দেওয়া হবে না বলে জানান তথ্যমন্ত্রী।
বিদেশি চ্যানেলের বিজ্ঞাপনমুক্ত সম্প্রচার বা ক্লিনফিড বাস্তবায়নে বলিষ্ঠ পদক্ষেপের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদকে অভিনন্দন জানান দেশের সম্প্রচার সাংবাদিকদের বৃহত্তম সংগঠন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার-বিজেসি।
আজ সচিবালয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে মতবিনিময়কালে বিজেসি ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
তথ্যমন্ত্রী এ সময় বিজেসিকে তাদের অবস্থানের জন্য ধন্যবাদ জানান এবং বলেন, ‘আমরা দেশের স্বার্থে আইন কার্যকর করেছি, গণমাধ্যমের স্বার্থে, গণমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত সাংবাদিক, শিল্পী-কলাকুশলী সবার স্বার্থে, এবং এ আইন সমগ্র পৃথিবীতে আছে। প্রতিবেশী সব দেশে এই আইন অনেক আগেই কার্যকর হয়েছে। আমাদের দেশে একটি মহল নানা অজুহাতে এ আইন কার্যকর করতে দেয়নি। আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাই এবং আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশির ভাগ মন্তব্যই এই সিদ্ধান্তের পক্ষে দেখেছি।’
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সব সাংবাদিক এই সিদ্ধান্তের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন, যারা টেলিভিশনের মালিক তারা দাঁড়িয়েছেন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট এর পক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন। সুতরাং এটি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। শুধু একটি পক্ষই বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করেছে তা নয়, সেটিকে পুঁজি করে আরো কেউ কেউ বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা করেছিল। সেগুলো হালে পানি পায়নি।’
ক্লিনফিড নিয়ে অন্যান্য দেশগুলো কত যত্নবান সেই উদাহরণ তুলে ধরে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত সরকারের সাথে চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ টেলিভিশন ভারতে এবং দূরদর্শন এদেশে সম্প্রচার হয়। ভুলক্রমে একবার বিটিভির ইত্যাদি অনুষ্ঠানের ফিডে একটি বিজ্ঞাপন ছিল, সাথে সাথে তারা সম্প্রচার থামিয়ে আমাদের নোটিশ করেছিল। নেপালে এ আইন কার্যকর করার সময় নানা পক্ষ বিরোধিতা করেছিল, এখন নেপালের মতো দেশেও সংশ্লিষ্ট চ্যানেলগুলো ক্লিনফিড পাঠায়। তবে আমাদের এখানে পাঠাতো না। আমাদের এখানে তাদের পক্ষে ওকালতি করার একটা পক্ষ ছিল। কিন্তু এখন সেটি করতে হবেই।’
আইন কার্যকর করতে সরকার বদ্ধপরিকর এবং এ নিয়ে কেউ বিভ্রান্তি ছড়ালে সেটির বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে উল্লেখ করে সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন, দেশে অনেক চ্যানেলে ক্লিনফিড আসে, সেগুলো প্রথমে কেউ চালায়নি, এখন অনেকেই চালানো শুরু করেছেন। আমরা আজকেও সময় দিচ্ছি সেগুলো চালানোর জন্য। আগামীকাল থেকে ক্লিনফিড আসা সত্ত্বেও চালানো না হলে, সেটার জন্য মোবাইল কোর্ট চলবে। অন্যান্য ক্যাবল অপারেটিংয়ের শর্তও যদি কেউ না মানে, মোবাইল কোর্টের আওতায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ক্যাবল অপারেটিং লাইসেন্সের শর্ত অনুযায়ী আমাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় এমন কিছু চালানো যায় না স্মরণ করিয়ে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, কেউ ক্লিনফিড পাঠালেও এমন কিছু যা সমাজ ও পরিবারে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে বা ছেলেমেয়েদের বিপথে ঠেলে দিতে পারে এই ধরনের কনটেন্ট যাতে না যায় সে বিষয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন বলে মনে করি।
মন্ত্রী এ সময় গণমাধ্যমকর্মী আইন দ্রুত পাস করা এবং ওটিটি প্লাটফর্ম নীতিমালা ও আইপিটিভি নির্দেশিকা দ্রুত প্রণয়নে মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলে জানান।
তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ক্লিনফিডের উদ্যোগকে যুগান্তকারী উদ্যোগ বলে বর্ণনা করেন।
বিজেসি সভাপতি রেজওয়ানুল হক রাজা বলেন, গত ১৫ বছর ধরে যে আইন কার্যকর করা যায়নি তা এখন করার মতো দৃঢ় ভূমিকার জন্য আমরা তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদকে অকুণ্ঠ অভিনন্দন জানাই। সরকারের এই সিদ্ধান্তের পক্ষে আমরা আছি। আমরা সংবাদ, টক শো, ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে আমরা এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছি বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি নিরসনের জন্য। সেই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা একটা রাউন্ড টেবিলও করছি।
বিজেসি ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য নূর সাফা জুলহাস বলেন, ‘আমরা দেখেছি বছরে ক্যাবল অপারেটর, ডিস্ট্রিবিউশন, বিজ্ঞাপন মিলে সাত হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়। গত ১৫ বছরে যদি অঙ্কটা করি আমরা তিন লাখ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে। দেশের সম্প্রচার অর্থনীতি স্বার্থ রক্ষায় তথ্যমন্ত্রী খুবই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’