ক্ষমতায় এসে আমরা কাউকে ফুলের টোকাও দিইনি : শামীম ওসমান
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেছেন, সরকারকে নিয়ে বর্তমানে দেশের বাইরে ও ভেতরে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় নানা ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের চলতে হয়েছে। অথচ, ক্ষমতায় এসে আমরা কাউকে একটা ফুলের টোকাও দিইনি।
শনিবার (১৫ এপ্রিল) বিকেলে ফতুল্লা থানার কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে দোয়া ও ইফতার মাহফিলে শামীম ওসমান এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘ফতুল্লায় ফাজিলপুর মাদ্রাসা মাঠে বিএনপি তাদের ঢাকা বিভাগীয় ইফতার মাহফিলের নামে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটাতে চেয়েছিল। এগুলো কোনো রাজনীতি না। বিএনপিকে সুস্থ ধারার রাজনীতি করার আহ্বান জানাই।’
আওয়ামী লীগের এই নেতা আরও বলেন, ‘আমি বিএনপির উদ্দেশে বলতে চাই, ওনারাও ভাই আমার, ভালো-মন্দ সব দলের ভিতরেই আছে। আমি কিন্তু দেখেন, ২০০১ এর পরে আমাদের ওপর যে অত্যাচার হয়েছে, আমাদের একটা দুইটা তিনটা না, আমাদের প্রায় ১৭ জন মানুষকে মারা হয়েছিল। আগের যে এমপি ছিল ওনার দ্বারা সংগঠিত হয়েছিল। এমনকি, বিএনপি তৈমুর আলম খন্দকার ভাইয়ের ভাই সাব্বির কোনো পার্টি করত না, মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলেছিল, তাকেও হত্যা করা হয়েছিল। ২০০১ এর পরে আমাদের ভাইয়ের ফ্যাক্টরিতে, জানেন আপনারা, অনেকে যারা মুরব্বি আছেন, তারা জানেন, সাংবাদিকেরা আপনারা জানেন, হামলা করা হয়েছিল। অথচ, আমার ভাই সেলিম ওসমান রাজনীতি করতেন না।’
শামীম ওসমান বলেন, ‘৩০০ গরুর দুধের বাট কেটে দেওয়া হয়েছিল, রাজহাঁসের গলা কেটে দেওয়া হয়েছিল, আমাদের বাড়ি হিরা মহলে গিয়ে আগুন দেওয়া হয়েছিল। এগুলো তো সম্পদ, এগুলো কিছু এসে যায় না; মানুষ মারা হয়েছিল। এই হাত দিয়ে ৪৯ জনকে আমরা দাফন-কাফন করেছিলাম। অথচ, ক্ষমতায় আসার পর আমরা কাউকে কিছু বলিনি, একটা ফুলের টোকাও দিইনি।’
হঠাৎ করে নারায়ণগঞ্জকে অস্থির করে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে উল্লেখ করে শামীম ওসমান বলেন, ‘আমি সব দলের ত্যাগী নেতাদের সম্মান করি। সে বিএনপি হোক, জাতীয় পার্টি হোক আর আওয়ামী লীগই হোক। যে ত্যাগী তাকে আমি সম্মান করি। কিন্তু, একটি লোক রাজনীতিতে ছিলেন না, এই লোকটি রাজনীতিতে আসার পর নারায়ণগঞ্জে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়ে গেল। কী হলো? একটা ছেলে, নাম বলা উচিৎ না, তবুও বলি, আমিও তাকে এইটুক থেকে দেখছি, বেয়াদব ছিল না, ভালো ছেলে ছিল। ওর নাম হলো জাকির। বিএনপি আসার আগে অনেক কিছু করল। এই ছেলেটা দেশের বাইরে ছিল। বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে তাকে আনা হলো, এনে কী করা হলো? নারায়ণগঞ্জে বিএনপির প্রথম যে প্রোগ্রামটা হলো, সেখানে তার লোকগুলোকে ব্যবহার করা হলো। পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষে লিপ্ত করানো হলো। এরপর এক ছেলে মারা গেল। যে মারা গেল, তার মায়ের বুক তো খালি হয়ে গেল। ও তো আর ফিরে আসবে না। আর লাভ হলো কী! ও তো (জাকির) বিএনপির আমল থেকেই পলাতক। বিএনপির আমলেই তাকে মারার চেষ্টা করা হয়েছিল। পরে কী হলো, সে কোথায় আছে, সেই খবর তার দলের নেতারাই দিল। যারা তাকে এনেছিল, তারাই দিল নিজেদের সেভ করার জন্য। পরে তাকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হলো। সে এখন জেলখানায় আছে। তাহলে কয়টা জীবন নষ্ট করল? অথচ, আমরা কোথাও আঘাত করিনি।’
নারায়ণগঞ্জের রাস্তা হবে বাংলোদেশের আধুনিকতম রাস্তা উল্লেখ করে শামীম ওসমান বলেন, ‘আজকে আমি শামীম ওসমান অবশ্যাই আল্লাহর হুকুম শেখ হাসিনার অসিলায়। এই রাস্তাটা যে হচ্ছে। আমি কয়েকদিন আগে সড়ক মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলাম। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম—কবে কাজ শেষ করতে পারবেন? ওনারা বললেন, ইনশা আল্লাহ সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যে শেষ করে ফেলব।’ তিনি বলেন, ‘ফুটওভার ব্রিজে আধুনিক ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
এখানে শেখ কামাল আইটি ইনস্টিটিউট করছি। বাংলাদেশের যে চারটি সব থেকে বড় চারটি যে ইনস্টিটিউট হচ্ছে, তার মধ্যে এটি একটি। এটা আমাদের বাচ্চাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়ে দেবে। ঠিক এর উল্টো দিকে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট অ্যান্ড কলেজ করা হবে। প্রায় ৩০-৪০ কোটি টাকা দিয়ে এটি করা হবে, যেন আমাদের ছেলেরা টেকনিক্যাল জ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়। ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট মেডিকেল এই রাস্তার পাশেই হবে ইনশা আল্লাহ।‘ তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ আর করোনা না হলে আজ এই কাজ ধরা হয়ে যেত।’
শামীম ওসমান আরও বলেন, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয় চেয়েছিলাম। আমার মাতৃতুল্য শেখ হাসিনা আমাকে বঙ্গবন্ধু প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দিয়েছেন। এটাও ওই রাস্তার ওপরে হবে ইনশা আল্লাহ।’
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘এই রাস্তা হবে বাংলোদেশের আধুনিকতম রাস্তা। এই মাসের শেষে, অর্থাৎ ঈদের পর থেকেই শুরু হবে প্রায় ৭০ থেকে ১০০ কোটি টাকার রাস্তা এবং ড্রেন। আমার এই পাঁচটি ইউনিয়নে ইনশা আল্লাহ ড্রেনসহ ১০০ কোটি টাকার রাস্তা হবে। টিএনটি প্রোজেক্টও শেষ হয়ে যাবে। এই কাজগুলো যদি হয়, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ্ যেটি পুরোনো রোড, সেটিও ১২০ ফুট চওড়া একটি রোড হবে এবং বাংলাদেশের মধ্যে এটি প্রথম রাস্তা হবে, যেটি টোটাল আরসিসি করা।’