কয়লার উচ্চমূল্যে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ভৈরবের ইটভাটা
বিদেশ থেকে আমদানি করা কয়লার দাম দফায় দফায় বৃদ্ধির কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কিশোরগঞ্জের ভৈরবের ইটভাটা মালিকরা। কয়লার উচ্চমূল্যে ইতোমধ্যে এখানকার ১০টি ইটভাটা বন্ধ হয়ে হয়ে গেছে। কয়লার দাম না কমলে আরও বেশ কয়েকটি ইট ভাটা বন্ধ হয়ে যাবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। আর এমনি করে ইটভাটা বন্ধ হয়ে গেলে দেশের নির্মাণশিল্পে বিরূপ প্রভাবের আশংকা তাদের।
এই সংকট থেকে উত্তরণে ইটভাটা মালিকদের দাবি বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে জেলা ওয়ারি কয়লার বরাদ্দ। অপরদিকে কয়লা ব্যবসায়ীরা চান বিদেশ থেকে কয়লা আমদানিতে বর্তমানে চলা ব্যাংকের এলসি জটিলতার দূরীকরণ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ভৈরবে সপ্তাহের ব্যবধানে কয়লার দাম বেড়েছে টনপ্রতি ছয় থেকে সাত হাজার টাকা। বর্তমানে প্রতি টন কয়লা ৩০ থেকে ৩১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ এক সপ্তাহ আগে ভৈরবে প্রতি টন কয়লা বিক্রি হয়েছে ২৩ থেকে ২৪ হাজার টাকায়। গত মৌসুমে এই কয়লার দাম ছিলো ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা।
ইটভাটা মালিকদের দাবি, দফায় দফায় কয়লার মূল্য বৃদ্ধির কারণে তারা বেশ বেকায়দায় পড়েছেন। ৪/৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ভাটা গড়ে এখন কয়লার কারণে সেগুলি চালু করা যাচ্ছে না। কয়লার উচ্চ মূল্যের কারণে ইতোমধ্যে এখানকার ১০টিরও বেশি ভাটা বন্ধ হয়ে গেছে। পুরো জেলায় বন্ধ হয়েছে ৩০টিরও বেশি ইটভাটা। কয়লার মূল্য যদি এমনি করে বৃদ্ধি পেতে থাকে, তাহলে আরও ভাটা বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশংকা তাদের। আর ভাটা বন্ধ হয়ে গেলে ব্যাংক থেকে নেওয়া লাখ লাখ টাকা দেনার দায়ে মালিকরা হয়ে পড়বেন নিঃস্ব।
অপরদিকে এইসব ভাটায় কাজ করা শত শত শ্রমিক কাজ হারিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে পড়বেন বিপাকে। ইটভাটা মালিক শোভন সুলতান জানান, তাদের দুটি ইটভাটা। কয়লার অভাবে একটি ইটভাটা বন্ধ রেখেছেন। অন্যটিতে প্রস্তুতি চললেও শেষ অবধি চালু করা যাবে কিনা বুঝতে পারছেন না। অপর মালিক রিপন কাজী জানান, প্রতিটন ৩০/৩২ হাজার টাকা দরে কয়লা কিনেছেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় শ্রমিকদের মজুরি ৪০ শতাংশের বেশি বাড়াতে হয়েছে। এতোসব বাড়তি খরচের পর ইটের বাজার মূল্য দাঁড়াবে ২৮/৩০ হাজার টাকা। যা গত সিজনে ছিলো ১৮/১৯ হাজার টাকা। এই অতিরিক্ত মূল্যে ইটের বিক্রি কতোটুকু হবে, এই নিয়ে শংকায় আছেন তারা।
ভাটা মালিক মধু মিয়া জানান, ২৫ বছর যাবৎ তিনি একটি ভাটা পরিচালনা করে আসছেন। কয়লার উচ্চমূল্যের কারণে তিনি এবার বাধ্য হয়েছেন ভাটা বন্ধ রাখতে। ফলে তিনিসহ এখানকার শতাধিক শ্রমিক পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। ভৈরব ইটভাটা মালিক সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও কিশোরগঞ্জ জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী আব্দুল লতিফ জানান, কয়লার উচ্চমূল্য, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে শ্রমিকদের বাড়তি মজুরিসহ অন্যান্য খরচের কারণে ইটের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে ইটের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। এমনি চলতে থাকলে ইটভাটাশিল্প অচিরেই ধ্বংসের মুখে পড়বে। তাই তিনি অবিলম্বে দেশের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে ইটভাটার জন্য জেলাওয়ারি বরাদ্দের দাবি জানান।
ভৈরব কয়লা ব্যবসায়ী মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, রাশিয়া, আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা কয়লা চট্টগ্রাম বন্দর থেকে লাইটার জাহাজে করে আসে। পরে এখান থেকে কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলার ইটভাটার মালিকরা কিনে নেন। প্রতিদিন ১২/১৩ কোটি টাকার কয়লা বিক্রি হয় এখানকার মোকাম থেকে। এইসব কয়লা ট্রাকে করে বিভিন্ন জেলায় নেওয়া হয়। প্রতি বছর কয়েকশ কোটি টাকার কয়লা বিক্রি হয়ে থাকে। কয়লা ব্যবসাকে কেন্দ্র করে ভৈরবে ১০ হাজার শ্রমিকসহ প্রায় ১১ হাজার লোক জীবিকা নির্বাহ করছেন।
ভৈরব কয়লা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি মির্জা সাজ্জাদ জানান, এ বছর মৌসুমের শুরুতেই কয়লার বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। দফায় দফায় দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর কারণ হিসেবে তিনি জানান, ব্যাংকে ডলার সংকটের কারণে আমদানিকারকরা প্রয়োজনীয় এলসি করতে পারছেন না। ফলে চাহিদা অনুযায়ী আমদানি করতে পারছেন না। তাই কয়লার দাম বেড়েই যাচ্ছে। তিনি এ বিষয়ে সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ প্রত্যাশা করেন।