কয়েদির পলায়ন : ঘটনাস্থলে তদন্ত কমিটি, দেখল সিসি ক্যামেরার ফুটেজ
গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে নিখোঁজ হওয়া যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি আবু বকর সিদ্দিকের খোঁজ আজ শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন।
এদিকে এ ঘটনায় গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছেন। তারা আজ দিনভর কারাগার এলাকা পরিদর্শন করেছে।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর সিনিয়র সুপার জাহানারা বেগম জানান, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লকআপের সময় বন্দিদের গণনাকালে একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি আবু বকর সিদ্দিককে পাওয়া যায়নি। কারাগারের ভেতরে বিভিন্ন সেল ও ওয়ার্ডসহ আশেপাশের এলাকায় তন্ন তন্ন করে খোঁজা হয়। এমনকি কারাগারের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে তা পর্যবেক্ষণ করা হলেও কোথাও তার সন্ধান মিলেনি।
এ ঘটনায় শুক্রবার বিকেলে কারা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোনাবাড়ী থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। কারাগারের জেলার বাহারুল আলম এ মামলার বাদী হয়েছেন। পলাতক ওই কয়েদিকে আটক করতে পুলিশ ও র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গাজীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তার হদিস পাওয়া যায়নি বলে জানান জাহানারা বেগম।
এদিকে এ ঘটনায় তদন্তের জন্য গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি এর মধ্যে তদন্তকাজ শুরু করেছেন। কমিটির সদস্যরা শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গাজীপুরে কাশিমপুরের এ কারাগারে আসেন। তারা দিনভর কারাগার এলাকা পরিদর্শন করেন এবং কারাগারের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করেন। এ সময় তাঁরা কারা কর্মকর্তা, কারারক্ষী ও বন্দিসহ বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলেন।
অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেন এ তদন্ত কমিটির প্রধান। তিন সদস্যের এ কমিটির অন্যরা হলেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি (প্রিজনস) তৌহিদুর রহমান ও মানিকগঞ্জ কারাগারের জেলার বিকাশ রায়হান। তদন্ত শেষে এ কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
আজ বিকেলে গাজীপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের গেইটে তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, তদন্তের কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। কারাগার থেকে কয়েদি কিভাবে পালিয়ে গেছে, ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত, কারা দায়ী- আমরা সে বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি ও তদন্ত করছি। আমরা তদন্তের প্রাথমিক কার্যক্রম সম্পন্ন করেছি। অল্প সময়ের মধ্যেই বাকি কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। তদন্ত কার্যক্রম শেষ হলেই সবকিছু জানা যাবে। তাই তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে এ মুহূর্তে কোনো তথ্য জানানো সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, ‘নতুন করে কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি সুপারিশ করবে।‘
অপরদিকে, কারাগার থেকে কয়েদি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনার পরপরই গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ক্রাইম) মো. শরিফুর রহমান, কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এমদাদ হোসেন ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মিজানুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং খোঁজখবর নেন।
কারাগারের সুপার জাহানারা বেগম আরো জানান, এর আগেও কয়েদি আবুবকর সিদ্দিক কারাগার থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। তিনি ২০১৫ সালের ১৩ মে সন্ধ্যায় কারাগারের সেল এলাকার একটি সেফটি ট্যাংকির ভেতরে লুকিয়ে নিজেকে আত্মগোপন করেছিলেন। দীর্ঘসময় খোঁজাখুঁজি শেষে পরদিন কারগারের ৪০ নম্বর সেল এলাকার একটি সেপটিক ট্যাংকির ভেতর থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানার আবাদ চণ্ডীপুর এলাকার তেছের আলী গাইনের ছেলে আবু বকর সিদ্দিক (৩৪) ২০১১ সালের ১৪ জুন থেকে এ কারাগারে বন্দি। তাকে ২০০২ সালের ১৭ মার্চ গ্রেপ্তার করা হয়। ২০০৬ সালের ৬ আগস্ট আদালত আবু বকরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দেন।
ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে তাকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কাশিমপুরের এ কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তী সময়ে আসামির আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ২০১২ সালের ২৭ জুলাই ওই সাজা সংশোধন করে তাকে যাবজ্জীবন (৩০ বছর) সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন।