খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা দিনের পর দিন অনুপস্থিত, কর্তৃপক্ষ নীরব

Looks like you've blocked notifications!

নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার মাতাজীহাট সরকারি খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার উত্তম কুমার নন্দীর বিরুদ্ধে নানান অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তিনি দিনের পর দিন কর্মস্থলে অননুমোদিত অনুপস্থিত থাকলেও সংশ্লিষ্টরা তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না।

উত্তম কুমার নন্দীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, বিশেষ দিবস ছাড়া তাঁর অফিসে উত্তোলন করা হয় না জাতীয় পতাকা। অথচ তাঁর অধীনস্থ অন্য কর্মকর্তাদের দাবি, তিনি প্রায় নিয়মিতই অফিস করেন।

সরেজমিনে গত ৩ মে বুধবার দুপুরে উপজেলার মাতাজীহাট সরকারি খাদ্যগুদামে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর বদলে অফিস চালাচ্ছেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের উপখাদ্য পরিদর্শক (এসআই) অসিম কুমার বর্মণ। তিনি জানান, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উত্তম কুমার নন্দী সপরিবারে বগুড়া শহরে বসবাস করেন। সেখান থেকে মাঝেমধ্যে এখানে এসে অফিস করেন। কোনো কোনো দিন অফিসে না এলেও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিসে মিটিং সেরে অথবা মহাদেবপুরে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিসে কাজ সেরে বগুড়ায় ফিরে যান। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে যাবতীয় কাজ অসিম কুমার বর্মণই করেন বলেও জানান। যাবতীয় কেনাকাটা, মালামাল গুদামে উঠানো, বিভিন্ন প্রকল্পের ডিওর মালামাল সরবরাহ সব কিছুই করেন তিনি। এ সময় তাঁর অফিসে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের জন্য নির্ধারিত পাইপটি পতাকাবিহীন দেখা যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অসিম কুমার বর্মণ বলেন, ‘বিশেষ দিবস ছাড়া এখানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় না।’

উপজেলার কয়েকজন মিল মালিক জানান, এই কর্মকর্তা দিনের পর দিন তাঁর অফিসে অনুপস্থিত থাকেন। খাদ্যশস্য সংগ্রহের সময় ছাড়া কোনো কোনো সময় পুরো মাস অনুপস্থিত থাকেন তিনি। ফলে গুদামে চাল সরবরাহ, বিল উত্তোলনের সময় বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তাদের। স্থানীয় রাইগাঁ ইউপি চেয়ারম্যান আরিফুর রহমানসহ ইউপি সদস্যরাও একই কথা জানান। বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্দ উত্তোলনের সময় তাঁকে পাওয়া যায় না।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, উত্তম কুমার নন্দীর অনুপস্থিতির বিষয়টি এখন ‘ওপেন সিক্রেট’ হলেও কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে একেবারেই নীরব। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রত্যক্ষ মদদেই তিনি দিনের পর দিন অনুপস্থিত থাকলেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়না বলেও অভিযোগ উঠেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, একটি সরকারি খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবশ্যই গুদামের সংরক্ষিত এলাকায় নির্মিত সরকারি বাসভবনে বসবাস করতে হবে। কর্মস্থলের পাঁচ মাইলের অধিক দূরে কোথাও যেতে হলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছ থেকে ছুটি অথবা কর্মস্থল ত্যাগের অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি না নিয়ে তিনি কীভাবে প্রতিদিন বগুড়া থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার পথ পারি দিয়ে অফিসে আসেন, আবার চলে যান—তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

এ ছাড়া গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পতাকা বিধিমালা ১৯৭২-এ বলা হয়েছে, ‘জাতীয় ও বিশেষ দিবস ছাড়াও প্রতিদিন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন এবং অফিসসমূহে যেমন, রাষ্ট্রপতির বাসভবন, সংসদ ভবন প্রভৃতি, সব মন্ত্রণালয় এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলদেশ সচিবালয় ভবনসমূহ, হাইকোর্টের অফিসসমূহ, জেলা ও দায়রা জজ আদালতসমূহ, বিভাগীয় কমিশনার, ডেপুটি কমিশনার/কালেক্টর, চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ অফিসসমূহ, কেন্দ্রীয় ও জেলা কারাগারসমূহ, পুলিশ স্টেশন, শুল্ক পোস্ট অফিসসমূহ, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং এই রকম অন্যান্য ভবনে সরকার কর্তৃক সময় নির্ধারিত ভবনসমূহে সকল সরকারি কর্মদিবসে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করতে হবে।’

সরকারি দপ্তরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন না করার বিষয়টি ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’ উল্লেখ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর মাধ্যমে অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার বাহক জাতীয় পতাকার।

গত ১২ এপ্রিল মাতাজীহাট খাদ্য গুদামে যোগদান করেন সহকারী খাদ্য পরিদর্শক (এএসআই) মিজানুর রহমান। আজ রোববার দুপুরে তাঁর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলা হলে তিনি জানান, আজ এখন পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাতাজীহাট খাদ্যগুদামে এসে পৌঁছাননি।’

মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমি মাতাজীহাট খাদ্যগুদামে যোগদান করার পর দেখেছি সপ্তাহের প্রতি রোববার খাদ্য কর্মকর্তা বেলা ১০-১১টার দিকে বগুড়া থেকে খাদ্য গুদামে আসেন এবং ৩টার পর চলে যান। এ ছাড়া মাঝেমধ্যে দু-এক দিন তিনি অফিসে আসেন। তবে তিনি প্রতিদিন (সরকারি কর্ম দিবসে) অফিস করেন না।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মোবাইল ফোনে মাতাজীহাট খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উত্তম কুমার নন্দী যোগাযোগ করা হয়। তিনি তাঁর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি নিয়মিতই অফিস করি।’

তবে উত্তম কুমার নন্দী সপরিবারে মাতাজীহাট খাদ্যগুদামের সরকারি বাসভবনে থাকেন না এবং পরিবারসহ বগুড়া শহরে বসবাস করেন বলে স্বীকার করেন। এতে খাদ্য গুদামের কাজের কোনো সমস্যা হয় না বলেও তিনি দাবি করেন।

এ ব্যাপারে মহাদেবপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাজের হাসানের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, উত্তম কুমার নন্দী খাদ্যগুদাম এলাকায় পরিবারসহ বসবাস না করলেও বগুড়া থেকে এসে অফিস করেন। তবে, প্রতিদিন কর্মস্থল থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে যাওয়ার জন্য তিনি কর্মস্থল ত্যাগের কোনো অনুমতি নেন না বলেও জানান তিনি। তিনি কখন মাতাজীহাট আসেন আর কখন চলে যান এ ব্যাপারে উপজেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক স্পষ্টত কিছুই জানেন না বলেও জানান।

অন্যদিকে, মহাদেবপুর উপজেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিসের উপখাদ্য পরিদর্শক (এসআই) অসিম কুমার বর্মনণকে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে কেন মাতাজীহাট খাদ্যগুদামের দায়িত্বে রাখা হয়েছে তার কোনো সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।