খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল, ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন

Looks like you've blocked notifications!
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি

রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল আছে। তাঁর চিকিৎসার জন্য ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এই মেডিকেল বোর্ডের নেতৃত্বে রয়েছেন অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদার।

বিএনপি চেয়ারপারসনের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা জানাতে আজ বুধবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক দলের সদস্য ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন এ তথ্য জানান।

ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘উনার (খালেদা জিয়া) যে চিকিৎসা বাসায় চলছিল, সেই চিকিৎসাসহ সেখানে আরও কিছু নতুন ওষুধ যুক্ত করা হয়েছে এবং যোগ করার পরিপ্রেক্ষিতে আলহামদুল্লিলাহ উনি (খালেদা জিয়া) এখন স্ট্যাবল।’

খালেদা জিয়ার এ চিকিৎসক বলেন, ‘আজকে একটি মেডিকেল বোর্ড করা হয়েছে। এভার কেয়ার হাসপাতালের সাত সদস্যের মেডিকেল বোর্ড। আর এই  বোর্ডে ম্যাডামের ব্যক্তিগত চিকিৎসক টিমের সদস্য অধ্যাপক ডা. এফএম সিদ্দিকী, আমি এবং অধ্যাপক মো. আল মামুনও আজকে ছিলেন। অর্থাৎ ১০ সদস্যের একটা মেডিকেল বোর্ড উনার এই পর্যন্ত যেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে তার রিভিউ করেছেন। পরবর্তীতে উনাকে তাঁরা পরীক্ষা করে আরও কিছু পরীক্ষার সুপারিশ করেছেন।’

আজ বুধবার রাতে সংবাদ সম্মেলন করেন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দলের সদস্য ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। ছবি : এনটিভি

ডা. জাহিদ বলেন, ‘বোর্ডের সুপারিশ মোতাবেক পরীক্ষাগুলো আজকে অথবা কালকে হবে। সেসব পরীক্ষাগুলো রিভিউ করে ম্যাডামের সার্বিক চিকিৎসার প্ল্যানিংটা সম্পন্ন হবে।’

ম্যাডামের অবস্থা স্ট্যাবল। দেশবাসীসহ দলের নেতা-কর্মীদের কাছে আমি উনার জন্য দোয়া করার কথা বলছি। আমরা খুবই আশাবাদী। ইনশা আল্লাহ ম্যাডাম খুব শিগগিরই উনার বাসায় ফিরে যাবেন।’

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর খালেদা জিয়ার অবস্থা সম্পর্কে অধ্যাপক ডা. জাহিদ বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ গত ১৫ এপ্রিল ম্যাডামের সিটি স্ক্যান করা হয়েছিল, সেখানে আমরা রিপোর্ট দেখে বলেছিলাম ফুসফুসে উনার মিনিমাম ইনভলবমেন্ট আছে। গতকাল যে চেস্টে সিটি স্ক্যান হয়েছে সেখানে বিন্দুমাত্র ইনভলবমেন্ট নেই। কাজেই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া এটা ভালো দিক। উনার হৃদযন্ত্রেরও মধ্যে কোনো ধরনের কার্ডিও সমস্যা নেই। কালকে ডাক্তার সাহেবরা যে পরীক্ষার রিপোর্ট দিয়েছেন, সেই রিপোর্টে নেই।’

খালেদা জিয়া নন-করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন জানিয়ে ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘উনার কোনো করোনা উপসর্গ নেই। উনি কিন্তু এখন নন-করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন। আন্তর্জাতিক চিকিৎসার নিয়মই আছে, দুই সপ্তাহের পরে যদি রোগীর কোনো সিমটম না থাকে তাহলে করোনা টেস্ট আর করানোরই প্রয়োজন নেই। তখন ধরে নিতে হবে উনার কাছ থেকে করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর সুযোগ নেই।’

খালেদা জিয়া কবে বাসায় ফিরবেন প্রশ্ন করা হলে বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাসায় ফেরার বিষয়টা প্রেডিক্ট করা খুব টাফ। উনার পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন হলে বোর্ড রিভিউ করবে। তারপরে আমরা আশা করতে পারি খুব সহসাই উনার বাসায় ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে।’

ডা. জাহিদ বলেন, ‘আপনারা তো জানেন যে, উনার অন্য সমস্ত অসুখ রয়েছে অর্থাৎ রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, অ্যাপিলেট ডিভিশনের যে সিদ্ধান্ত মোতাবেক মেডিকেল বোর্ডের যে সুপারিশ ছিল- সিভিয়ার অ্যাসিটেন্স। সেই অসুখ তো উনার আছে। সেই রোগের চিকিৎসার জন্য তাঁর আধুনিক চিকিৎসা প্রয়োজন, আধুনিক কেন্দ্রের প্রয়োজন। অর্থাৎ সি নিডস মডার্ন টিট্রমেন্ট ইন এ ডেভেলপ সেন্টার। এই সুপারিশটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল বোর্ড করেছিল। সেটা যদি আমাদের করতে হয়- পরিবারের সদস্যরা অনেক দিন আগে সরকারের কাছে দরখাস্ত করেছেন, উনাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়া উচিত সুচিকিৎসার জন্য। করোনা পরিস্থিতি সার্বিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

সংবাদ সম্মেলন খালেদা জিয়ার চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ আল মামুনও উপস্থিত ছিলেন।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে খালেদা জিয়াকে এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাঁর সিটি স্ক্যান (চেস্ট), ইসিজি, ইকো প্রভৃতি পরীক্ষা করা হয়েছে।

গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনা শনাক্ত হয়। এরপর থেকে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এফএম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে চিকিৎসা শুরু হয়। করোনা আক্রান্তের ১৪ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পরে খালেদা জিয়ার করোনা টেস্ট করা হয়েছিল কিন্তু ফলাফল পজিটিভ আসে।