গণতন্ত্রের কাছে স্বৈরতন্ত্র পরাজিত হবেই : শামসুজ্জামান
গণতন্ত্রের কাছে স্বৈরতন্ত্র পরাজিত হবেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। তিনি বলেন, ‘অনেক হিটলার ও মুসোলিনি দেখেছি, কেউ টিকে নাই। গণতন্ত্রের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করবেন না; পারবেন না। কারণ আমাদের নেতা হচ্ছেন জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান। তাই বিজয় অবশ্যই গণতন্ত্রের পক্ষে হবে।’
আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ন্যাশনালিস্ট এক্স স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (রুনেসা) আয়োজিত ‘২২ ডিসেম্বর ১৯৮৪ স্মরণে রক্তঝরা মতিহার এবং রিজভী আহমেদ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় শামসুজ্জামান দুদু এ কথা বলেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘সর্বশেষ বিবেচনায় গণতন্ত্রের কাছে স্বৈরতন্ত্র পরাজিত হবেই। এটা আমার কথা না, ইতিহাসের কথা। আমি হিটলারের কথা বলব না। তাহলে যিনি মসনদে বসে আছেন, তিনি অখুশি হবেন। আমি মুসোলিনির কথা এখানে উল্লেখ করব না, তিনি বড় কষ্ট পাবেন। কিন্তু আমি তাঁকে বলব, পাকিস্তান আমলেও বাংলাদেশে অনেক হিটলার ও মুসোলিনি দেখেছি, কেউ টিকে নাই। গণতন্ত্রের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করবেন না। পারবেন না।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। সংগঠনের সভাপতি অধ্যক্ষ বাহাউদ্দিন বাহারের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোকাম্মেল কবিরের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য দেন বিএনপিনেতা খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, শাহীন শওকত, তাইফুল ইসলাম টিপু, নুরুজ্জামান তপন, আনোয়ারুল হোসেন আনু, রবিউল আলম বুলেট, রোজিনা আখতার ডলি, সাবেক ছাত্রদলনেতা মাসুদুর রহমান রানা, কাজী খায়রুল্লাহ শিপন প্রমুখ।
বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগই ‘এক সাগর রক্তের সাথে বেইমানি করেছে’ বলেও মন্তব্য করে দুদু বলেন, এই বিজয়ের মাসে বলতে হয়, মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নকে তারা (আওয়ামী লীগ) কেড়ে নিয়েছে। এক সাগর রক্তের সাথে তারা বেইমানি করেছে। গণতন্ত্রকে, সংবিধানকে, আইনকে, নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। ব্যাংক লুট করেছে। কী করে নাই তারা? সবকিছুই করেছে।’
‘ছাত্রদল যত দিন আছে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ আছে’ মন্তব্য করে বিএনপির এ নেতা বলেন, ছাত্রদলের সাবেক ও বর্তমান নেতারা যত দিন বেঁচে আছেন বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ তত দিন আছে। তারা যত দিন বেঁচে আছে, বিএনপির ভবিষ্যৎ আছে। তারা যত দিন বেঁচে আছে, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ আছে। এটা মানতে হবে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান আছেন, তাহলে আমাদের ভয় কীসের? হতাশ হওয়ার কী আছে? আমি প্রায়ই বলি, পরবর্তী সরকার হচ্ছে বিএনপি সরকার। কারণ ছাত্রলীগই দুর্নীতির মহামারিতে পড়েছে, ছাত্রদল তো পড়ে নাই। পড়েছে? তাহলে আমাদের ভয়টা কী? বিএনপি, ছাত্রদল ভয় পাবে না। ভয় তো পাবে আওয়ামী লীগ। যে চুরি করেছে, যে লুটপাট করেছে।
স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ভূমিকার কথা উল্লেখ করে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘একজন রিজভী আহমেদের সাহসিকতা ও ভূমিকার কথা বলে শেষ করা যাবে না। আমরা যারা এখানে বসে আছি, সেই সময়ে ছাত্র রাজনীতি শুরু করেছিলাম। অনেকেই সেই সময় আমাদের মানতে চায় নাই। কারা মানতে চায় নাই? ছাত্রলীগ মানতে চায় নাই। আমরা যে ছাত্র সংগঠন, এটাই তারা স্বীকৃতি দিতে চায় নাই। রাজশাহীর বাদশা (ফজলে হোসেন বাদশা) এখন এই সরকারের তথাকথিত বিদ্রোহী, আমাদের সে সময় মানতে চায়নি। জাসদ, ওরে বাবা কী ধরনের বিপ্লবী সব। এখন জাসদ আছে বলে মনে হয় না। তারাও তখন আমাদের মানতে চায় নাই। কিন্তু রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল এবং এর ভেতরে বাইরে যাঁরা আছেন তাঁরা প্রমাণ করেছেন, তাঁরা ইতিহাসের মহানায়ক হওয়ার যোগ্যতা রাখেন।’
ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, একজন রিজভী আহমেদকে ছাত্রদল তৈরি করেছিল বলেই বছরের পর বছর বিএনপির অফিসে বসে বিএনপির কথা মানুষকে, দেশবাসীকে, বিশ্বকে জানিয়ে যাচ্ছেন। তাঁকে নিয়ে অনেক সমালোচনা করা যাবে। কিন্তু দায়িত্ব পালন করতে গেলে বুঝতে পারবেন, ওই ছোট্ট একটা চকির মধ্যে থেকে নেতার প্রতি, নেত্রীর প্রতি আস্থা রেখে কাজ করা এবং বিএনপির কথা দেশবাসী ও বিশ্ববাসীকে জানানো কী রকম ব্যাপার। কিন্তু রিজভী আহমেদ সেই কাজটিই করে যাচ্ছেন। তাই তাঁর অবদানের কথা বলে শেষ করা যাবে না।