গাড়িতে ‘সংসদ সদস্য’ মেটাল ডিস্ক লাগিয়ে নির্বাচনি প্রচারণায় কাদের মির্জার ছেলে, জরিমানা
মাদারীপুরেও আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন নোয়াখালীর বসুরহাট পৌর মেয়র কাদের মির্জার ছেলে তাশিক মির্জা। প্রাইভেট কারে ‘সংসদ সদস্য’ লেখা মেটাল ডিস্ক লাগিয়ে একটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে প্রচারণায় নেমেছিলেন। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নোয়াখালীর বসুরহাটের পৌর মেয়র কাদের মির্জার ছেলে তাশিক মির্জা মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার নিখলী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ওয়াসিম মাদবর পক্ষে প্রাইভেট কার নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। বিষয়টি ভ্রাম্যমাণ আদালতে নজরে এলে গত শনিবার রাতে ওই চেয়ারম্যান প্রার্থীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান।
স্থানীয় ও ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্র জানায়, গত শনিবার বিকেলে কিছু বহিরাগত লোক ‘সংসদ সদস্য’ লেখা মেটাল ডিস্ক লাগানো একটি প্রাইভেট কার নিয়ে নিলখী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী ওয়াসিম মাদবরের বাড়িতে এসে অবস্থান করেন। তারা ওই চেয়ারম্যানের পক্ষে ‘সংসদ সদস্য’ লেখা প্রাইভেটকারটি নিয়ে ঘুরে কলাতলা, নিলখীবন্দর, বাগমারাসহ নির্বাচনী এলাকা ভোটারদের কাছে ওয়াসিম মাদবরের পক্ষে ভোট চান। প্রতিপক্ষ পদপ্রার্থীরা সংসদ সদস্যের স্টিকার দেখে প্রশাসনের কাছে জানান। নির্বাচন চলাকালীন বিষয়টি আচরণ বিধি লঙ্ঘন হওয়ায় শিবচর থানা পুলিশ ওই প্রাইভেট কারসহ চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বহিরাগতদের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে নিয়ে আসেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অপরাধে নিলখী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান ওয়াসিম মাদবরকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
শিবচর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বরুণ হিরা জানান, দুটি প্রাইভেট কার ছিল। একটিতে ‘সংসদ সদস্য’ লেখা মেটাল ডিস্ক লাগানো ছিল। সেই কারে থাকা তাশিক মির্জা নোয়াখালী জেলার কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার মেয়র কাদের মির্জার ছেলে বলে নিজেকে পরিচয় দেন। জরিমানা দেওয়ার পরে ওই প্রাইভেট কার দুটি ছেড়ে দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ওয়াসিম মাদবর বলেন, ‘ওই গাড়িতে বসুরহাটের পৌর মেয়র কাদের মির্জার ছেলে তাশিক মির্জা ছিলেন। তিনি আমার ভাগ্নে রাইসুল ইসলাম অনিকের বন্ধু। তাশিক মির্জা আমার নির্বাচনে কোনো প্রচারণা চালাননি।’
জরিমানার বিষয় জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, ‘জরিমানার ১০ হাজার টাকা আমি দেইনি। ওই টাকা ভ্রাম্যমাণ আদালতকে কে পরিশোধ করেছে সেটা আমি জানি না।’
ওই ইউনিয়নে আরেক চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হারুণ-অর রশীদ বলেন, ‘ওয়াসিম মাদবর বর্তমান নিখলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। তাই তাঁর দাপট বেশি। নির্বাচনী আচারণবিধি তিনি কিছুই মানেন না। প্রার্থী ওয়াসিমের ভাগ্নে রাইসুল ইসলাম এলাকায় প্রভাব খাটাতে সংসদ সদস্যের ব্যবহৃত গাড়িতে তাশিক মির্জাকে নিয়ে আসেন।’
এ ব্যাপারে শিবচর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিরাজ হোসেন বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ দুটি প্রাইভেট কার শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে নিয়ে আসে। যাচাই-বাছাই করে ওই চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অর্থদণ্ড করেন। জব্দকৃত প্রাইভেট কারে কারা ছিল এ বিষয় আমরা নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছি না।’
জানতে চাইলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। প্রাইভেট কার নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা করলে আচারণবিধি লঙ্ঘন হবে। কিন্তু এক চেয়ারম্যান প্রার্থী নিয়ম না মেনে দুটি প্রাইভেট কার নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা করছিলেন। আচরণ বিধি লঙ্ঘন করায় ওই প্রার্থী ওয়াসিম মাদবরকে ১০ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানা করে সর্তক করা হয়েছে।’