গৃহহীনেরা পাচ্ছে নতুন ঘর, কর্মসংস্থানে গবাদি পশু

Looks like you've blocked notifications!
এস এম শাহীনুজ্জামান। ছবি : সংগৃহীত

সামাজিক ও জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য ডা. খোরশেদুজ্জামান (মিশ্রি মিয়া) কল্যাণ ট্রাস্ট জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার মানুষের কাছে আজ পরিচিত একটি নাম। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ট্রাস্ট পাঁচ শতাধিক গৃহহীন মানুষকে ঘর দেওয়ার কাজ শুরু করেছে। এ উদ্যোগ ইসলামপুরে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এ ছাড়া দুস্থ ও গরিব মানুষের জন্য ফ্রি চিকিৎসাসেবাসহ নানা রকম সহযোগিতা দিচ্ছে। জনকল্যাণমূলক এসব কার্যক্রম নিয়ে কথা বলেছেন ট্রাস্টের বোর্ড অব ট্রাস্টি এস এম শাহীনুজ্জামান

মুজিববর্ষ উপলক্ষে জাতীয় পর্যায় থেকে সরকার গৃহহীনদের ঘর দিচ্ছে। আপনি আলাদা করে নিজের এলাকায় ঘর দেওয়ার চিন্তা করলেন কেন?

মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে কয়েক লাখ গৃহহীনকে ঘর দিয়েছেন। যাঁরা মনেপ্রাণে দেশকে ভালোবাসেন, প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নকে তরান্বিত করতে চান, তারা এই কার্যক্রমকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সহযোগিতা করছেন। তাছাড়া বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে হলে সরকারি প্রচেষ্টার পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগেও এগিয়ে আসতে হবে। দিন শেষে দেশটা কিন্তু আমাদের সবার। সেই চিন্তা থেকেই আমিও ট্রাস্টের মাধ্যমে গৃহহীন মানুষকে নতুন ঘর বানিয়ে দিচ্ছি।

আর ইসলামপুর আমার জন্মভূমি। আমার বাবা-দাদা আজীবন এই এলাকার মানুষের সেবা করে গেছেন। তাই আমিও ইসলামপুরের মানুষের সেবা করতে চাই। এ এলাকার সব মানুষ যেন নিজের ঘরে থাকতে পারেন সে চেষ্টা থেকেই আমার বাবার নামে করা ডা. খোরশেদুজ্জামান (মিশ্রি মিয়া) কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে ‘বঙ্গবন্ধু নিবাস কার্যক্রম’-এর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে আগামী চার বছরের মধ্যে প্রায় ৫০০ ঘর গৃহহীনদের জন্য নির্মানের পরিকল্পনা রয়েছে। গৃহহীনদের জন্য ইতোমধ্যে ২৫টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে, ৫০টি ঘর নির্মাণাধীন রয়েছে। এ ছাড়া যাঁরা সম্পূর্ণ ভূমিহীন, তাঁদের জন্য ইসলামপুরের গোয়ালের চর ইউনিয়নে ৭৪ শতক জমি ক্রয় করে সেখানে ৩০টি ঘর নির্মাণের নিমিত্তে মাটি ভরাটের কাজ চলছে। একইসাথে ইসলামপুরের চরগোয়ালীনি ইউনিয়নের পিরোজপুরেও ৪৫ শতক জমি ক্রয় করে ১৮টি ঘর নির্মাণের অংশ হিসেবে সংশ্লিষ্ট জায়গাতে মাটি ভরাটের কাজ চলছে। এই দুটি প্রকল্পে ইনশা আল্লাহ ৪৮টি পরিবার জমি ও ভূমি একসঙ্গে পাবে। ট্রাস্টের অর্থায়নেই এ কাজ হচ্ছে। কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে এই ৪৮টি পরিবারের মাঝে গবাদি পশুও বিতরণ করা হবে। এ ছাড়া ১২৭ জন মানুষকে ঘর নির্মাণে সহায়তা হিসেবে ঢেউটিন, বাঁশ, কাঠ, পাঁকা খুটি ইত্যাদি নির্মাণসামগ্রী দেওয়া হয়েছে।

শুধু ঘর দেওয়াই কি ট্রাস্ট গঠনের মূল উদ্দেশ্য?

মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে এবং প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা গৃহহীনের জন্যে ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু মানুষের মাঝে কাজ করতে গিয়ে দেখলাম একটি সমৃদ্ধ জাতি নির্মাণ করতে হলে আরও অনেক বিষয়ে কাজ করতে হবে। তাই আমরা ট্রাস্টের থেকে আরও কিছু কর্মসূচি হাতে নিয়েছি, এর মধ্যে কিছু বাস্তবায়নাধীন আছে, কিছু ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করেছি। যেগুলো ইতোমধ্যে চলমান আছে, যেমন প্রত্যন্ত গ্রামীণ জনপথে চিকিৎসা সেবা বিশেষ করে চোখের ছানি পড়া, মাংস বৃদ্ধিজনিত অন্ধত্ব এবং নালী ইনফেকশন ইত্যাদি সমস্যা নিয়ে আমরা  কাজ করছি। গ্রামে গ্রামে ক্যাম্পেইন করে রোগী বাছাই করছি এবং সম্পূর্ণ বিনামূল্যে আমাদের নিজস্ব অর্থায়নের মাধ্যমে অপারেশন এবং ওষুধের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমাদের লক্ষ্য, আগামী ৫ বছরের মধ্যে ইসলামপুরের মানুষের চোখের অন্ধত্ব দূর করব, ইনশা আল্লাহ।

ট্রাস্ট পরিচালিত উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমগুলো কী কী

ইসলামপুর এলাকার মানুষের জন্য ট্রাস্টের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক ও জনকল্যাণমূলক কাজ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ট্রাস্টের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় চক্ষু শিবির, ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্পের মাধ্যমে উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক মানুষকে চক্ষু চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে ট্রাস্ট। গরিব, অসহায়, দুস্থ মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করছে। দরিদ্র পরিবারের মাঝে তিন লাখ টাকার খাদ্য সহায়তা দিয়েছে। মহামারি করোনা মোকাবিলায় জরুরি ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে এক লাখ টাকা।

ফ্রি চিকিৎসা সেবা সম্পর্কে বিস্তারিত বলুন

আমাদের লক্ষ্য এ বছরের মধ্যে এক হাজার জন মানুষের চোখের ছানি ও চোখের মাংস বেড়ে যাওয়া অপারেশ করানো। সেই লক্ষ্যে ট্রাস্ট কাজ করছে। ্আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ চার হাজার মানুষকে এই সেবা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। ট্রাস্ট ২০২১-২২ সালে ২৫ জনের চিকিৎসা সহায়তায় সাত লাখ টাকা ব্যয় করেছে। ট্রাস্টের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় চক্ষু শিবির, ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্পের মাধ্যমে মানুষের চক্ষু চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

নতুন প্রজন্ম নিয়ে ট্রাস্টের ভাবনা কী

দেখুন একটি দেশের সামগ্রিক ভিত্তি তখনই সুদৃঢ় হয় যখন মানুষের মধ্যে আত্মসম্মান বোধ  এবং সংবেদনশীলতা থাকে। এটি তখনই তৈরি হয় যখন ওই জাতির প্রজন্ম তার ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং শেকড় সম্পর্কে অবগত থাকে। আমাদের দুর্ভাগ্য স্বাধীনতার ঠিক পরেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্যদিয়ে জাতিসত্তার শেকড়ে আঘাত করা হয়েছিল। ফলে একটা দীর্ঘ সময় মানুষ সঠিক ইতিহাসই জানতে পারেনি। যদিও বিগত ১৪ বছরে সরকার বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করে সেই গ্যাপ অনেকাংশে পূরণ করেছে। আমি মনে করি সরকারি উদ্যোগ চলবে কিন্ত সমাজের ভেতর থেকে যদি উদ্যোগ তৈরি না হয় তাহলে কোনও সময় আবার সরকার পরিবর্তন হলে আবারও ইতিহাস বিকৃতির ধারা শুরু হতে পারে। তাই সামাজিক বিপ্লব হলে কোনও অপশক্তিই আর সেই দুঃসাহস দেখানোর সাহস করবে না। এই চিন্তা থেকেই ‘জাতির পিতাকে জানুন’ শিরোনামে নেওয়া এই কর্মসূচির আওতায় জামালপুর জেলার ইসলামপুরের প্রতিটি গ্রামের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটি বিতরণ করা হবে। প্রতি বছর নির্ধারিত একটি সময়ে এই বইয়ের ওপর সাধারণ জ্ঞান এবং বক্তৃতা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সেরা ১৫ জন শিক্ষার্থীকে এককালীন বিশেষ শিক্ষা বৃত্তি দেওয়া হবে।

ট্রাস্টের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বলুন

সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অসহায় মানুষের সেবা করার লক্ষ্যে ট্রাস্ট গঠন করেছি। অবহেলিত ইসলামপুরকে মডেল উপজেলা হিসেবে গড়ে তোলা ট্রাস্টের অন্যতম লক্ষ্য। ট্রাস্টের সুনির্দিষ্ট একটি নীতিমালা রয়েছে। এই নীতিমালার অধীনে ট্রাস্ট পরিচালিত হবে। ট্রাস্টের মাধ্যমে প্রথম দফায় আমরা আগামী চার বছরের কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। এগুলো শেষ হওয়ার পর পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা হবে। আরও একটি বিষয়ে বলা দরকার, আমরা ট্রাস্টের পক্ষ থেকে সমাজের বেকারত্ব দূরীকরণে আরো একটি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি। আমি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশ সফরে গিয়ে উপলব্ধি করেছি যে দক্ষ গাড়িচালকের বিশ্বব্যাপী ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। শুধু বিদেশে না এমনকি দেশেও দক্ষ গাড়িচালকের অভাব রয়েছে। আমরা ট্রাস্টের উদ্যোগে ইসলামপুরে একটি ড্রাইভিং স্কুল স্থাপনের কাজ করছি। যেখান থেকে বিনামূল্যে বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে দক্ষ গাড়িচালক প্রশিক্ষিত করা হবে। পরবর্তীতে এরা যাতে সঠিক ভাবে লাইসেন্স পায় অথবা কীভাবে এই প্রশিক্ষিত ড্রাইভারকে জনশক্তি হিসেবে দেশের বাইরে কাজের লাগানো যায়, তার কৌশল নিয়ে কাজ করছি। ইনশা আল্লাহ উদ্যোগটি অচীরেই দৃশ্যমান হবে।