গোপালগঞ্জে ইটভাটাসংলগ্ন ৩ ফসলি জমি দখলে নিতে পাঁয়তারা
গোপালগঞ্জে ফসলি জমি দখলে নিতে এক ইটভাটার মালিক কৃষকদের একের পর এক জমি অনিষ্ট করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ভাটাসংলগ্ন ধানের জমিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার দিয়ে ধানের ক্ষতি করা হয়েছে। এতে ধানের ফলন কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ঘটনায় কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
কৃষকরা জানান, কাশিয়ানী উপজেলার মাজড়া গ্রামের প্রভাবশালী আবদুর রহমান মোল্লা দুই বছর আগে স্থানীয় মোর্শেদ মোল্লার এক বিঘা জমি ইজারা নিয়ে অবৈধভাবে ফসলি জমিতে মাছুম ব্রিকস নামে একটি ইটভাটা গড়ে তোলেন। ওই ভাটার মালিক আবদুর রহমান মোল্লার সেখানে কোনো জমি নেই। ভাটার আশপাশের ফসলি জমি দখলে নিতে ইট ফেলে ভাটা মালিক কৃষকের তিন ফসলি জমিগুলো জোর করে দখলে নেন। এভাবে ক্ষমতার দাপটে আবদুর রহমান ১৫ জন কৃষকের প্রায় ২০ একর জমি অবৈধ দখলে রেখে ভাটার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। গত ১৭ আগস্ট কৃষকেরা ওই সব জমিতে চাষাবাদ করতে গেলে ভাটা মালিকের সন্ত্রাসী বাহিনী কৃষকদের ওপর হামলা করে। এতে জমির মালিক তপু সিকদারসহ পাঁচজন আহত হন।
ভাটা মালিকের বাধা উপেক্ষা করে ভাটাসংলগ্ন ১০ একর জমিতে আমন ধানের আবাদ করে কৃষক। এসব জমির ধান নষ্ট করতে ভাটা মালিকের লোকজন ২০ অক্টোবর রাতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ছিটিয়ে দেয়। পরে কৃষি বিভাগের পরামর্শে কৃষক জমিতে পানি দিয়ে মাত্রাতিরিক্ত সার অপসারণ করে। ভাটাসংলগ্ন এসব জমি দখলে নিতে ভাটা মালিক এসব অপকর্ম করে আসছে বলে কৃষকেরা অভিযোগ করেন।
জমির মালিক জাহিদ সিকদার বলেন, ‘ইটভাটার মালিক আবদুর রহমান মোল্লার নিজস্ব তেমন কোনো জমি না থাকলেও হঠাৎ করে আমাদের বসতি এলাকায় এসে ইটভাটা খুলে বসেন। তিনি আমাদের জমি আয়ত্তে নিতে একের পর এক অপকর্ম করে চলেছেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করছি।’
ইটভাটাসংলগ্ন জমির মালিক তপু সিকদার অভিযোগ করে বলেন, ‘ইটভাটার মালিকের নিজস্ব কোনো জমি না থাকলেও নামমাত্র জমি ইজারা নিয়ে বসতি এলাকায় অবৈধভাবে ইটভাটা নির্মাণ করেন। এরপর আমাদের ইটভাটাসংলগ্ন জমিগুলো দখলে নিতে নানা কৌশল ও অপকর্ম করে চলেছেন। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তিন ফসলি জমি থেকে মালিকপক্ষ ইটভাটা সরিয়ে নেবে, এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের।’
ক্ষতিগ্রস্ত বর্গাচাষি তোরাফ হোসেন বলেন, ‘একটি মহল জমি দখলে নিতে রাতের আঁধারে ফসলি জমিতে অতিরিক্ত সার দিয়ে ধান নষ্ট করার চেষ্টা করেছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’
অভিযুক্ত ইটভাটার মালিক আবদুর রহমান মোল্লা তাঁর বিরুদ্ধে ফসলি জমিতে সার দেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। তবে এর আগে জমি চাষের সময় আমার লোকজনের সঙ্গে জমির মালিকদের কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে আমার মোটরসাইকেলে হামলা করায় ক্ষিপ্ত হয়ে আমার লোকজন তাদের ওপর হামলা করে। এ বিষয়টি নিয়ে কাশিয়ানী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোক্তার হোসেনসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে একটি সালিশ বৈঠক হয়। সালিশে উভয়ের মধ্যে বিরোধ মীমাংসা করে দেওয়া হয়। ইটভাটার জন্য জমি চেয়েছিলাম। কিন্তু জমির মালিক দেননি। প্রয়োজনে আমি এখানে ইটভাটা করব না।’
কাশিয়ানী উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত বর্গাচাষি তোরাফ হোসেনের ফসলি জমিতে রাতে অতিরিক্ত ইউরিয়া সার দিয়ে কে বা কারা ধান নষ্ট করার চেষ্টা করে। এ খবরের ভিত্তিতে আমি তোরাফ হোসেনের ধানক্ষেতে গিয়ে জমিতে দ্রুত পানি দেওয়ার নির্দেশ দিই এবং ওই ক্ষেতে পটাশ সার দেওয়ার কথা বলি। এতে ফসল মারাত্মক ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে।’