গোপালগঞ্জে বিধবাকে কুপিয়ে হত্যা
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে স্মৃতি বাছার (৪৫) নামে এক বিধবাকে হত্যা করে মরদেহ বাদামক্ষেতে ফেলে রেখে গেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল রোববার (২১ মে) দিনগত রাতে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড় ইউনিয়নের শান্তিপুর গুচ্ছগ্রামে এই ঘটনা ঘটে।
নিহত ওই নারী শান্তিপুর গ্রামের রঞ্জিত বাছারের স্ত্রী।
গোপালগঞ্জের সিন্দিয়াঘাট পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) শওকত হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই বিধবা স্মৃতি বাছারকে সরকার শান্তিপুর গুচ্ছগ্রামে একটি ঘর ও জমি দেয়। সেখানে তাঁর কলেজ পড়ুয়া একমাত্র ছেলে রতন বাছারকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন। কিন্তু তাঁর ছেলে রতন শান্তিপুর গ্রামের মিরাজ বেপারীর স্ত্রী বীথির অসামাজিক কার্যকলাপ ও তাঁর স্বামীর মাদক বিক্রির কাজে বাধা দেন। এতে বীথি ও তাঁর স্বামী মিরাজ এবং একই গ্রামের বাদল ফকিরসহ অনেকে ক্ষিপ্ত হয়ে রতন ও তার মা স্মৃতিকে মেরে ফেলার হুমকি দেন এবং গুচ্ছগ্রামের রতনদের দুটি মেহগনিগাছ মালিকানা দাবি করে জোর করে কেটে নিয়ে যান। এ ঘটনার পর গত ৪ মার্চ একটি জিডি করেন রতন বাছার। এ ঘটনায় আরও ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁরা তাঁর মা স্মৃতিকে গত ৬ মার্চ রাতে ঘরে ঢুকে হাত, পা, মুখ বেঁধে শান্তিপুর গ্রামের বিলের মধ্যে রেখে আসেন এবং মারধর করেন। ৭ মার্চ হাত পা মুখ বাঁধা অবস্থায় পুলিশ আহত তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে গোপালগঞ্জ আড়াইশ শয্যবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ঘটনার পর রতন বাদী হয়ে বাদল ফকির, মিরাজ বেপারী, তার স্ত্রী বীথিসহ চারজনকে আসামি করে মুকসুদপুর থানায় একটি মামলা করেন।
দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে স্মৃতি গত ৮ এপ্রিল গোপালগঞ্জ হাসপাতাল থেকে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সাতপাড় গ্রামে আশ্রয় নেন। এই ঘটনার পর স্মৃতি ও তাঁর একমাত্র ছেলে রতন ভয়ে সাতপাড় গ্রামে অবস্থান করতে থাকেন। এরপর পাশের গোহালা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। কিন্তু আসামি বাদল ফকির, মিরাজ বেপারীসহ অন্যরা হাজির না হয়ে দাম্ভিকতা দেখাতে থাকেন। মামলার বিষয়টি সমাধানের জন্য গত ১৬ মে স্মৃতি সাতপাড় থেকে জলিরপাড় গ্রামের শান্তিপুরে তাঁর গুচ্ছগ্রামের বাড়িতে যান।
স্মৃতির ছেলে রতনের করা মামলার আসামি বাদল, মিরাজ, বীথিসহ অন্যরা গতকাল রোববার গোপালগঞ্জ জজ আদালত থেকে জামিন নেন। আর গতকাল দিনগত রাতে স্মৃতি বাছারকে ঝুপি দিয়ে হাত, পা, পেটসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে ও গলায় কাপড় পেঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে মরদেহটি শান্তিপুর গ্রামের চিন্ময় বাকচীর বাদামক্ষেতে ফেলে আসে দুর্বৃত্তরা।
ঘটনার খবর পেয়ে আজ সোমবার দুপুরে সিদ্ধিয়াঘাট পুলিশ ফাঁড়ির এসআই জালাল বিন আমির শান্তিপুর গ্রামের চিন্ময়ের বাদামক্ষেত থেকে স্মৃতির ক্ষতবিক্ষত মরদেহটি উদ্ধার করে। তাঁর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে রাতে বাদল, মিরাজসহ ছয়জনকে আসামি করে মুকসুদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন তাঁর ছেলে রতন বাছার।
মুকসুদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) খন্দকার আমিনুর রহমান জানান আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
নিহত স্মৃতি বাছারের ছেলে সরকারি কবি নজরুল কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রতন বাছার অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার মাকে আসামি বাদল, মিরাজসহ অন্যরা গতকাল আদালত থেকে জামিন নিয়েই রাতে মাছ কোপানোর ঝুপি দিয়ে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’
রতন আক্ষেপ করে আরও বলেন, ‘আমার মাকে মারপিটের পর হাত-পা মুখ বেঁধে বিলের মধ্যে রেখে আসে। এ ঘটনার পর আমি মামলা করি। মামলার পর আমি আর আমার মা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বেরিয়েছি।’