গোপালগঞ্জে ১৯ হেক্টর অনাবাদি জমিতে তরমুজ চাষ
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কাঠি ইউনিয়নের মানিকহার গ্রামে ১৯ হেক্টর অনাবাদি জমিতে তরমুজর চাষ করা হয়েছে। ওই গ্রামের প্রতি হেক্টরে ৩৮ টন তরমুজ ফলেছে। সেই হিসেবে ৭২২ মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদনের প্রত্যাশা করছেন কৃষক। যার বাজার মূল্য দুই কোটি ৮৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি তরমুজের ওজন হয়েছে পাঁচ কেজি থেকে ৮ কেজি পর্যন্ত। আগামী ১০ দিনের মধ্যে এসব তরমুজ বিক্রির উপযোগী হবে। এখান থেকে কৃষকরা অন্তত দেড় কোটি টাকা আয় করবেন বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি অফিসের কাঠি ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বাসুদেব মধু জানান, ওই ইউনিয়নের মানিকহার ব্লকের ১২ হেক্টর অনাবাদি জমিতে গত বছর তরমুজের চাষ করে কৃষকরা লাভবান হন। তাই এ বছর কৃষক আরও ৭ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ বাড়িয়েছে। এ বছর মোট ১৯ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। আগে এসব জমি অনাবাদি থাকত। আমরা কৃষককে এসব জমিতে তরমুজ চাষে উদ্ধুদ্ধ করি। তারপর কৃষক গত বছর প্রথম তরমুজ চাষ করে। এ বছর তারা লাভজনক তরমুজ চাষ সম্প্রসারণ করেছে। এ বিষয়ে আমরা কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করেছি। বাজারে তরমুজ এখন প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কৃষক প্রতিকেজি তরমুজ ৪০ টাকা কেজি দরে ক্ষেত থেকে পাইকারদের কাছে বিক্রি করতে পারবেন। সেই হিসেবে কৃষক দুই কোটি ৮৮ লাখ ৮০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবে।’
আগামী ১০ দিন পর থেকে তরমুজ বিক্রি শুরু হবে বলে জানান ওই কৃষি কর্মকর্তা।
তরমুজ চাষি নারায়ণ বিশ্বাস, সঞ্জয় ও স্বপন বলেন, ‘মানিকহার গ্রামের এ জমি অনাবাদি পড়ে থাকত। আমরা কৃষি বিভাগের পরামর্শে গত বছর ৬ জন কৃষক সংগঠিত হয়ে অনাবাদি ১২ হেক্টর জমিতে প্রথম তরমুজের চাষ করি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনাবাদি জমি চাষাবাদের আওতায় আনার নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মেনে আমরা এ বছর আরও সাত একর জমিতে তরমুজের চাষাবাদ বৃদ্ধি করেছি। মোট ১৯ হেক্টর জমিতে এখন তরমুজের সমারোহ। তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আশা করছি এ তরমুজ বিক্রি করে খরচ বাদে অন্তত দেড় কোটি টাকা আয় করতে পারব।’
মানিকহার গ্রামের ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘আমাদের অনাবাদি জমিতে স্বপনসহ ছয়জন কৃষক তরমুজ ফলিয়েছেন। আগে এখানে কোনো ফসল হত না। কখনও কল্পনা করতে পারিনি এ জমিতে তরমুজ হবে। এখন ওই ছয় কৃষক এ জমিতে তরমুজ উৎপাদন করে আমাদের চোখ খুলে দিয়েছেন।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাফরোজা আক্তার বলেন, ‘এ বছর অনাবাদি জমিতে চাষাবাদ বাড়াতে রবি মৌসুমের শুরুতে আমরা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করি। কৃষক আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সব ক্ষেত্রেই চাষাবাদ সম্প্রসারণ করেছে। এর মধ্যে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কাঠি ইউনিয়নের মানিকহার ব্লকে কৃষক আনাবাদি ১৯ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ করেছে। এখন ১৯ হেক্টর জমি জুড়ে তরমুজের সমারোহ। এখানকার তরমুজ দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। ক্ষেতে তরমুজ আর তরমুজ। আগামী ১০ দিনের মধ্যে এ ক্ষেত থেকে তরমুজ বিক্রি শুরু হবে। এ তরমুজ বিক্রি করে কৃষক ভালো টাকা আয় করতে পারবেন।’
গোপালগঞ্জের তরমুজের আড়তদার জয়দেব পাল বলেন, ‘বাজারে তরমুজের সরবরাহ কম। তাই দাম বেশ চড়া। এ মুহূর্তে বাজারে তরমুজ এলে কৃষক তরমুজের ভালো দাম পাবেন। তরমুজ বিক্রি করে কৃষক অধিক লাভবান হতে পারবেন।’