গোলাগুলি-হত্যা-সংঘর্ষে শেষ হলো চসিকে ভোটগ্রহণ

Looks like you've blocked notifications!
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনের ভোটে সহিংসতার চিত্র। ছবি : ফোকাস বাংলা

গোলাগুলি-হত্যা-সংঘর্ষ-অবরোধ-সহিংসতা ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ভোটগ্রহণ। আজ বুধবার সকাল ৮টায় একযোগে ৭৩৫টি ভোটকেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়; ভোটগ্রহণ চলে একটানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত। পরে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোট গণনা শুরু হয়। গণনা শেষে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ফলাফল প্রকাশ করা হবে। পরে সেই ফলাফল চলে যাবে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা সব কেন্দ্রের ফলাফল নিয়ে রাতে বেসরকারিভাবে বিজয়ী নগরপিতার নাম ঘোষণা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র থেকে একইসঙ্গে বিজয়ী ৩৯ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ১৪ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলরের নামও ঘোষণা করবেন।  

নির্বাচনে ১৪ সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রার্থী রয়েছেন ৫৭ জন। সাধারণ ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৩৯ ওয়ার্ডে। ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডে সাবেক কাউন্সিলর হারুনুর রশিদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। আর ৩১ নম্বর আলকরণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী তারেক সোলেমান সেলিম মৃত্যুবরণ করায় ওই পদে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। তবে ওই ওয়ার্ডে মেয়র ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ভোটগ্রহণ হবে। ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হোসেন মুরাদ ইন্তেকাল করলে সেখানে আবদুল মান্নানকে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে ৩৯ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ১৬৮ প্রার্থী। ভোটার সংখ্যা সর্বমোট ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন।

৭৩৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৪১৭টি ভোটকেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সব কেন্দ্রে সমানভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নয় হাজার পুলিশ সদস্য কাজ করছে। পাশাপাশি ২৪ প্লাটুন বিজিবি, ২৫ প্লাটুন র‍্যাব, আনসারসহ ১৮ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

পঞ্চম নির্বাচিত পরিষদের মেয়াদ শেষের আগে গত বছরের ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে দলীয় মনোনয়ন পর্যন্ত সবই সম্পন্ন হয়। করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় মাত্র কয়েক দিন আগে স্থগিত করা হয় নির্বাচন। পরে ভোটগ্রহণের জন্য আজকের দিন নির্ধারণ করা হয়।

আজ সকালে ভোটের শুরুটা হয়েছিল ভালই। কিন্তু আজ সকাল ১০টার দিকে খুলশী ইউসেপ স্কুল কেন্দ্রে সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে আলাউদ্দিন আলো (২৮) নামের একজন নিহত হন। পরে এ ব্যাপারে চমেক মেডিকেল পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ মো. জহির এনটিভি অনলাইনকে জানান, নগরীর খুলশী আমবাগান এলাকার ইউসেপ স্কুল কেন্দ্র থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হলে আলাউদ্দিন আলোর মৃত্যু হয়।

এদিকে নগরীর ১২ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের বার কোয়ার্টার এলাকায় আপন ভাইয়ের হাতে আরেক ভাই খুন হয়েছেন। নিহত নিজাম উদ্দিন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী সাবের আহমেদের কর্মী বলে জানা গেছে। নিজাম উদ্দিনের ভাই সালাউদ্দিন কামরুল একই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থী নুরুল আমিনের কর্মী। নির্বাচন নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে কিছুদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। সকালে ভোট শুরুর আগেই দুজনের মধ্যে তুমুল ঝগড়া শুরু হলে মুন্নাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় কামরুল। তবে পারিবারিক বিরোধ নাকি রাজনৈতিক বিরোধের কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তা এখনো নিশ্চিত নয়।

এদিকে নির্বাচনে ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ডে কয়েকটি কেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনার পর বিএনপির কাউন্সিলর পদপ্রার্থী মোহাম্মদ ইসমাইল বালীকে আটক করেছে পুলিশ। পাথরঘাটা মহিলা কলেজ কেন্দ্রে নির্বাচনি কর্মকর্তা আহতের ঘটনায় তাঁকে আটক করা হয়েছে।

পাথরঘাটা ছাড়াও ১৪ নম্বর লালখান বাজার এলাকাতেও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এখানে প্রায় ২০ জন আহত হয়েছে।

বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন ১১টার দিকে নগরের চকবাজার টিচার্স ট্রেনিং কলেজে (বিএড কলেজ) ভোট দেওয়ার পর অভিযোগ করেছেন, সব কেন্দ্র থেকে দলের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও এজেন্টদের মেরে বের করে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন নির্যাতনে পরিণত হয়েছে।

অপরদিকে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী সকাল ৯টার দিকে বহদ্দারহাট এখলাছুর রহমান প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দেন। পরে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ভালো ভোট হচ্ছে। নির্বিঘ্নে ভোট প্রদান করছেন ভোটারেরা। উৎসবমুখর পরিবেশ ভোট দিচ্ছেন সবাই। বিএনপির এজেন্টরা কেন্দ্রেই যায়নি। বিএনপি জনবিচ্ছিন্ন। এজন্য তারা এজেন্ট দিতে পারেনি।