গোল্ডেন মনির তিন মামলায় ফের রিমান্ডে

Looks like you've blocked notifications!
ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণে মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনির। ফাইল ছবি : ফোকাস বাংলা

অস্ত্র, মাদক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের তিন মামলায় মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনিরের নয় দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার পৃথক দুই মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এই আদেশ দেন।

আদালতে বাড্ডা থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) মাজহারুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আজ ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসামি মনিরকে হাজির করে অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় ১০ দিন করে ২০ দিন এবং মাদক মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মইনুল ইসলাম অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় তিন দিন করে ছয় দিন এবং মাদক মামলায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদ তিন দিন রিমান্ডের আদেশ দেন।

এর আগে গত ২২ নভেম্বর গোল্ডেন মনিরের ১৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। সে রিমান্ড শেষ হলে আজ আদালতে নতুন করে হাজির করা হয়। এর আগে বাড্ডা থানায় গত ২২ নভেম্বর সকালে মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়।

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে রাজধানীর মেরুল বাড্ডার একটি বাসায় গত ২১ নভেম্বর রাত ১০টা থেকে অভিযান চালিয়ে মনির হোসেন ওরফে ‘গোল্ডেন মনির’কে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। র‍্যাবের দাবি, নব্বইয়ের দশকে রাজধানীর গাউছিয়া মার্কেটে কাপড়ের দোকানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করতেন মনির। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে মালিক হয়েছেন এক হাজার ৫০ কোটি টাকার।

অভিযান শেষে সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘গ্রেপ্তার হওয়া মনির নব্বইয়ের দশকে গাউছিয়া মার্কেটে একটি কাপড়ের দোকানে সেলসম্যান হিসেবে কাজ করতেন। এরপর রাজধানীর মৌচাকে ক্রোকারিজের একটি দোকানে কাজ শুরু করে পরবর্তী সময়ে তা নিজ ব্যবসায় রূপ দেন। ওই ব্যবসা করতে করতে লাগেজ ব্যবসা শুরু করেন। তিনি ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে কাপড়, কসমেটিকস, ইলেকট্রনিকস পণ্য, কম্পিউটার সামগ্রী, মোবাইল, ঘড়িসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র বিদেশ থেকে দেশে আনতেন। এভাবে একপর্যায়ে তিনি স্বর্ণ চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। বায়তুল মোকাররমে একটি জুয়েলারি দোকানও দেন। যে দোকানটি তাঁর চোরাকারবার করার কাজে লাগত। এভাবে মনির থেকে তিনি হয়ে ওঠেন গোল্ডেন মনির। তিনি মোট এক হাজার ৫০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি।’

আশিক বিল্লাহ আরো বলেন, ‘স্বর্ণ চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার পর তিনি (মনির) বিপুল অবৈধ স্বর্ণ বিদেশ থেকে দেশে নিয়ে আসতে থাকেন। তাঁর স্বর্ণ চোরাচালানের রুট ছিল ঢাকা-সিঙ্গাপুর-ভারত। এসব দেশ থেকে ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে বিপুল স্বর্ণ দেশে আমদানি করেন তিনি। যার ফলশ্রুতিতে তাঁর নাম হয়ে যায় গোল্ডেন মনির। স্বর্ণ চোরাকারবারের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে ২০০৭ সালে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করা হয়।’

আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘গোল্ডেন মনিরের বাসায় অভিযান চালিয়ে ৬০০ ভরি স্বর্ণ জব্দ করা হয়। এই স্বর্ণের পরিমাণ প্রায় আট কেজির মতো। আমরা জানতে পেয়েছি গাউছিয়ার একটি স্বর্ণের দোকানের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা রয়েছে।’

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘মনির হোসেনের বাসা থেকে বিদেশি একটি পিস্তল, চারটি গুলি, চার লিটার বিদেশি মদ, ৩২টি নকল সিল, ২০ হাজার ৫০০ সৌদি রিয়াল, ৫০১ ইউএস ডলার, ৫০০ চাইনিজ ইয়েন, ৫২০ ভারতীয় রুপি, এক হাজার সিঙ্গাপুরের ডলার, দুই লাখ ৮০ হাজার জাপানি ইয়েন, ৯২ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত, হংকংয়ের ১০ ডলার, ১০ ইউএই দিরহাম, ৬৬০ থাই বাথ জব্দ করা হয়েছে। এগুলোর মূল্যমান আট লাখ ২৭ হাজার ৭৬৬ টাকা।’

আশিক বিল্লাহ আরো বলেন, ‘আমরা তাঁকে মূলত ফৌজদারি অপরাধে বাসা থেকে গ্রেপ্তার করেছি। মনির মূলত একজন হুণ্ডি ব্যবসায়ী, স্বর্ণ চোরাকারবারি ও ভূমির দালাল। এ ছাড়া একটি গাড়ির শোরুমের স্বত্বাধিকারী তিনি। মনিরের বাসা থেকে দুটি বিলাসবহুল অনুমোদনহীন গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। যার একেকটির মূল্য প্রায় তিন কোটি টাকা। এর পাশাপাশি গাড়ির শোরুম থেকে তিনটি বিদেশি বিলাসবহুল অনুমোদনহীন গাড়ি জব্দ করা হয়েছে।’

র‍্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, ‘ভূমিদস্যু মনির রাজউকের কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। ঢাকা শহরের ডিআইটি প্রজেক্ট, বাড্ডা, উত্তরা, নিকুঞ্জ ও কেরানীগঞ্জে তাঁর দুইশরও বেশি প্লট আছে। এরই মধ্যে ৩০টি প্লটের কথা তিনি প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন। রাজউকের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে জালিয়াতি ও স্বর্ণের ব্যবসা করে তাঁর সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে।’

আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘গোল্ডেন মনিরের নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে আরো কারা কারা জড়িত আছে, তা জানিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে র‍্যাব অনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত করার অনুরোধ করবে। র‍্যাবের এই অভিযানে একটি গোয়েন্দা সংস্থা খুবই ওতপ্রোতভাবে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছে। সুতরাং দীর্ঘমেয়াদি একটি অনুসন্ধান, পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণ সাপেক্ষে আমরা এই অভিযানটি পরিচালনা করেছি। আমরা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছি, একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। এবং ওই রাজনৈতিক দলে অর্থ জোগানের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।’