‘ঘাড়ে বন্দুক রাখা শেষ হলে তিনিও টিকা নেবেন’

Looks like you've blocked notifications!

“কিছু লোক আছেন, যারা অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে গুলি করতে চান। যারা প্রথম দিকে করোনার টিকা না নিয়ে বুঝে-শুনে নেবেন বলে ভাবছেন, তারাও ঠিক ওই শ্রেণির। ‘যদি কোনো সমস্যা হয়’, তারা এই ভাবনার মানুষ। এটা সন্দেহবাতিক মনের বহিঃপ্রকাশ। এরাই মূলত টিকা গ্রহণ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতার পরিবেশ তৈরিতে দায়ী।”

আজ রোববার কথাগুলো মুঠোফোনের অপরপ্রান্তে থেকে এনটিভিকে বলছিলেন ভারতের মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ডা. পঙ্কজ অধিকারী।

ডা. পঙ্কজ অধিকারী বলেন, ‘ভারতে সর্বাধিক ২০ শতাংশ মানুষের মধ্যে প্রথম দিকে টিকা না নেওয়ার মনোভাব দেখা যাচ্ছে। ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম ও চিকিৎসকদের সূত্রে এ তথ্য জানা যাচ্ছে। তবে যারা এই ধারণা পোষণ করছেন, তারা আসলে টিকা সম্পর্কে না জেনেই করছেন। সব ধরনের টিকার চুল পরিমাণ হলেও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। সুতরাং ঘাড়ে বন্দুক রাখা শেষ হলে তিনিও টিকা নেবেন। কারণ, তখন তিনি বুঝে যাবেন, আসলে টিকাতে বিশেষ কোনো সমস্যা নেই।’

এই পরিবেশ শুধু ভারতে সৃষ্টি হয়েছে তা কিন্তু নয়। প্রথম দিকে টিকা নিতে চাচ্ছেন না, এমন ভাবনা বাংলাদেশেও অনেকের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। গল্প, আড্ডায় কান পাতলে বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চোখ রাখলেই এই ভাবনার মানুষের দেখা মিলছে। এই ভাবনার জন্ম ভারতে টিকা নেওয়ার পর কিছু মানুষের ভেতরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ার ফলে হয়েছে বলে অনেকের মত।

সৈকত হোসেন একজন সরকারি চাকরিজীবী। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলছিলেন, ‘আমি অন্তত তিন মাস পর টিকা নিতে চাই। এর ভেতরে দেখতে চাই, টিকা নেওয়ার কারণে মানুষের কী কী সমস্যা হচ্ছে। শেষমেশ যদি মনে হয়, কোনো সমস্যা নেই তাহলেই টিকা নেব। শুনেছি, ভারতে টিকা নিয়ে দুজন মারা গেছেন। ভয় তো একটু করবেই।’

শুধু সৈকত নয়, এমন অন্তত ২০ জন মানুষের সঙ্গে কথা বলেছে এনটিভি অনলাইন। যাদের মধ্যে ১৭ জনই প্রথম দিকে টিকা নিতে আগ্রহী নন। আর বাকি তিনজন আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আগ্রহ দেখানো তিনজনের একজন পিয়াস সরকার। তিনি বলেন, ‘যখনই টিকা নেওয়ার সুযোগ পাব, তখনই নিয়ে নেব। আমি দ্রুতই টিকা নিতে চাই।’

টিকা নেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশে অনাগ্রহ দেখা যাচ্ছে, এমন প্রসঙ্গে কথা তুললে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আপনার কী মনে আছে, যখন বাংলাদেশে করোনা শনাক্ত হয়েছিল; তখন কী অবস্থা ছিল? খুবই ভয়াবহ! কারো বাসায় করোনা রোগী পাওয়া গেলে তা নিয়ে কী হুলুস্থূল কাণ্ড বাধাত। লাশ দাফন নিয়ে আরেক ঝামেলা। পিতা-মাতাকেই সন্তান ফেলে রেখে চলে যেত। এখন পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে না? টিকা নিতে অনিহা, এই পরিস্থিতিরও পরিবর্তন হবে। কিছুদিন গেলে মানুষ টিকা পেতে হুমড়ি খেয়ে পড়বে।’

‘আমাদের দেশে এখনো টিকা প্রয়োগই শুরু হয়নি। তারপরও এক ধরনের ভয়-ভীতির পরিবেশ দেখা যাচ্ছে টিকা নেওয়া বা না নেওয়ার বিষয়ে। এই পরিস্থিতির জন্ম হয়েছে ভারতে টিকা নেওয়ার পর কিছু মানুষের শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ার ফলে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টির সেই পরিসংখ্যান কিন্তু খুবই নগন্য। যা আসলে গণনা করার মতো কোনো পরিসংখ্যান নয়। টিকার কথা বাদই দিলাম, সব ওষুধেরই তো কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। এই টিকারও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকবে। দেখার বিষয় হচ্ছে, সেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কতটা ক্ষতিকারক। আমার মনে হয়, এটা তেমন কিছুই না। সুতরাং প্রথম কিছুদিন টিকা নেওয়ার পর যখন মানুষ দেখবে কারোই তেমন সমস্যা হচ্ছে না, তখন সব ভয় কেটে যাবে। আমাদের সবারই উচিত, মানুষকে টিকার বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করা।’ যোগ করেন নাসিমা সুলতানা।

ভারতের মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ডা. পঙ্কজ অধিকারী বলেন, ‘পৃথিবীতে এখনো পর্যন্ত এমন কোনো টিকা আবিষ্কার হয়নি, যে টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছিল না। এই টিকারও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। কিন্তু যাদের শরীরের নানা জটিলতা আছে, সেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াটা তাদের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া যাদের শারীরিক অবস্থা ভালো তাদের ক্ষেত্রে আমি বলব, এটা ইফেক্ট অব দ্যা ভ্যাকসিন।’

পঙ্কজ অধিকারী বলেন, ‘ভারতে এখনো পর্যন্ত এক কোটি মানুষকে করোনার ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। এর ভেতরে খুবই নগণ্য সংখ্যক মানুষের শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ভারতে যেদিন প্রথম ১০ হাজার টিকা দেওয়া হয় সেদিন ১২ জনের শরীরে টুকটাক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এদের ভেতরে একজন নার্স পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলে শ্বাসকষ্টজনিত রোগ নিয়ে কলকাতার এস এস কে এম হাসপাতালে ভর্তি হন এবং দুই দিন পর্যবেক্ষণে থাকার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি যান। কোনো মানুষের মৃত্যুর বা গুরুতর অসুস্থতার বা কোনো স্নায়ুরোগের কোনো খবর নেই সারা দেশে।’

ডা. পঙ্কজ অধিকারী বলেন, ‘কারো কারো ক্ষেত্রে দেখা গেছে টিকা নেওয়ার পর সামান্য কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। করোনায় আক্রান্ত হলে যেমন প্রতিক্রিয়া দেখা যায় আর কি। হালকা জ্বর বা শ্বাসকষ্ট। এসব আসলে তেমন কিছু নয়। আমার নিজের ছেলে টিকা নিয়েছে। সেও কিন্তু চিকিৎসক। এই টিকায় যদি আসলে উল্লেখ করার মতো সমস্যা থাকত, আমি আমার ছেলেকে টিকা নিতে দিতাম?’