ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ : সেন্টমার্টিনে পর্যটকরা নিরাপদে

Looks like you've blocked notifications!

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’-এর কারণে কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনের জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সেখানে আটকা পড়েছে প্রায় এক হাজার ২০০ পর্যটক। তবে সবাই নিরাপদে আছেন বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।  

ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’-এর কারণে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। যদিও মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত কার্যকর রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আজ শনিবার সকাল থেকেই কক্সবাজারে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। কখনো কখনো দমকা বাতাসও বইছে। সমুদ্র উত্তাল থাকায় আগেই মাছ ধরার ট্রলারগুলো স্থলভাগে এসে নোঙর করেছে। পাশাপাশি জেলায় পাহাড় ধসে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে লোকজনদের নিরাপদ স্থানে নেওয়া হচ্ছে। তবে ১১ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে জেলার উপকূলবর্তী অঞ্চলের শরণার্থী শিবিরে। সেখানে পাহাড় ধসের আশঙ্কায় তাদের সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে।   

জেলার সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুর আহমদ আজ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বৈরি আবহাওয়ার কারণে গতকাল শুক্রবার থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে সেন্টমার্টিনে প্রায় এক হাজার ২০০ পর্যটক আটকা পড়েছে। গত বৃহস্পতিবার বেড়াতে আসা পর্যটকদের অনেকে রাত্রিযাপনের জন্য সেন্টমার্টিনে থেকে যায়। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’-এর কারণে হঠাৎ স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত বেড়ে যাওয়ায় জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন।

জেলা প্রশাসনের নির্দেশে স্থানীয় প্রশাসন পর্যটকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে বলেও উল্লেখ করেন ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ। তিনি আরো বলেন, ‘দুর্যোগ না কাটা পর্যন্ত সবাইকে পরিচ্ছন্নভাবে হয়রানিমুক্ত আতিথেয়তা দিতে হোটেল কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের সবাই সর্বক্ষণ পর্যটকদের খোঁজ-খবর নিচ্ছে। পাশাপাশি পর্যটকদের আতংকিত না হতে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।   

ইউপি চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘সেন্টমার্টিন দ্বীপে পাঁচটি সাইক্লোন শেল্টার ও কয়েকটি বহুতল হোটেল রয়েছে। কঠিন দুর্যোগ বা জলোচ্ছ্বাস হলেও আটকে পড়া পর্যটকদের বিচলিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। সংকেত বাড়লে আমরা পর্যটকদের এসব উঁচু ভবনে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করব।’

ঝুঁকিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প

এদিকে গতকাল রাতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের শহীদ এ টি এম জাফর আলম সম্মেলন কক্ষে এক জরুরি সভার আয়োজন করা হয়। সভাপ্রধান জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, আগের অভিজ্ঞতার নিরিখে বলা যায়, ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’-এর তীব্রতা শুরু হলে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গার আবাসস্থলে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে তাদের ঝুঁপড়ি ঘরগুলো। সেসব মোকাবিলায় ক্যাম্পে কাজ করা আইএনজি, এনজিও, জিও কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্বেচ্ছাসেবকরা যার যার জায়গা থেকে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়েছে। তাদের সবাইকে সমন্বয় করতে প্রস্তুতি নিয়েছে সেনাবাহিনীর বিশেষ টিম।

জেলা প্রশাসক আরো জানান, সামগ্রিকভাবে জেলার উপকূল এবং আশপাশ এলাকার ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলা এবং ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সহযোগিতার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া রয়েছে। জেলা দুর্যোগ ফান্ডে দুই লাখ ৬৩ হাজার নগদ টাকা, ২০৬ মেট্রিক টন চাল, ৩৪৬ বান ঢেউটিন, আড়াই হাজার পিস কম্বল এবং ৩৭৬ প্যাকেট শুকনো খাবার মজুদ রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে ১০ লাখ নগদ টাকা, ২০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসন আরো জানায়, আট উপজেলায় ৫৩৮টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। খোলা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বহুতল ভবনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও। উপকূল হিসেবে মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সদরের পোকখালী, চৌফলদণ্ডী, খরুশকুল, টেকনাফের সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিনে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।

সিপিসির ৬৪০০ স্বেচ্ছাসেবক ৪৩০টি ইউনিটের মাধ্যমে প্রস্তুত রয়েছে। প্রতিটি ইউনিটে থাকা মেগাফোন দিয়ে সংকেত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় তা প্রচার করে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রস্তুত রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির ৮০০ স্বেচ্ছাসেবকও। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, পর্যাপ্ত যানবাহন, আনসার ভিডিপি ও স্থানীয় প্রশাসন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) সতর্ক নজর রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ০১৭১৫-৫৬০৬৮৮ নাম্বারটি সচল রেখে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করা হয়েছে। দুর্যোগ সংক্রান্ত সব তথ্য এখানে সরবরাহ ও পাওয়া যাবে।

কক্সবাজার জেলা বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর কারণে সাগর উত্তাল থাকায় গভীর সাগরে মৎস্য আহরণে যাওয়া মাছ ধরার ট্রলারগুলো ফিরেছে।

গত বৃহস্পতিবার রাত থেকেই কক্সবাজারে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। কক্সবাজারের উপকূলীয় নাজিরারটেক, পেকুয়ার মগনামা, কুতুবদিয়ার ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ এলাকা, মহেশখালীর নিচু এলাকা, সদরের পোকখালীসহ নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছে এসব এলাকার জনপ্রতিনিধিরা।

কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’-এর প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় কক্সবাজারের নিচু এলাকা প্লাবিত হবে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোছাইন বলেন, দুর্যোগের সময় যাতে আইনশৃংখলা পরিস্থিতির কোনো অবনতি না ঘটে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখা হয়েছে। নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে থানা ও তদন্ত কেন্দ্রের কর্মকর্তাদেরও।