চট্টগ্রামের ভোট নিয়ে উত্তপ্ত সংসদ

Looks like you've blocked notifications!
বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ (বায়ে) ও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা। ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনের ভোটে সহিংসতার তথ্য তুলে ধরে জাতীয় সংসদে বক্তব্য দিয়েছেন বিএনপির দুই সংসদ সদস্য। তাঁরা অভিযোগ করেছেন, ধানের শীষের পোলিং এজেন্টদের ভোটকক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এর বিপরীতে অবস্থান নিয়ে সংসদে বক্তব্য দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। পাশাপাশি জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরাও নিজেদের এলাকায় সুষ্ঠু ভোট হওয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। আর এতেই চট্টগ্রামের ভোটকে কেন্দ্র করে সংসদে উত্তাপ ছড়ায়।  

আজ বুধবার ‘দ্য সিভিল কোর্টস (সংশোধন) - ২০২১’ সংসদে পাসের সময় জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব তোলেন বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ।

সে সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জের এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘সংবিধানে বলা আছে, সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা প্রশাসন চালাবেন। কিন্তু আজ কী হচ্ছে? নির্বাচেনর নামে তামাশা হচ্ছে। প্রহসন হচ্ছে। এর প্রয়োজন নেই তো। ভোটের প্রয়োজন নেই, আইন করে নির্বাহী ক্ষমতাবলে প্রধানমন্ত্রী যাকে খুশি মনোনয়ন দেবেন। তিনি নির্বাচিত হবেন। সকালে দেখলাম, চট্টগ্রামের সিটি করপোরেশনে কী হচ্ছে।’

এ সময় সরকারদলীয় সদস্যরা নিজেদের অবস্থান থেকে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে হারুনুর রশীদের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। হারুন এ সময় বলেন, ‘একটুকুও অসত্য বলছি না। তথ্য জেনে বলছি।’

পরে সংশোধনী প্রস্তাব তোলার সময় হারুনুর রশীদ আবার বলেন, ‘এখনই দেখেন চট্টগ্রামে বহু কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেওয়া হয়েছে। গণমাধ্যামকর্মীদের পাস দেওয়া হচ্ছে না। চাইলে এখনই ফোনে দেখাতে পারব।’

পরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক অন্য সদস্যদের জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাবের জবাব দেওয়ার পর বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদের বক্তব্যের সমালোচনা করেন। জবাবে তিনি বলেন, “আমরা এখানে যারা আছি গতকালকে জন্ম নেইনি। উনারা নির্বাচনের কথা বলছেন। আমরা জিয়াউর রহমানের সময় ‘হ্যাঁ’, ‘না’ ভোট দেখেছি। ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন দেখেছি। ব্যালটবাক্স পাওয়া যেত না। ভোট যে দেবে ব্যালটবাক্স নেই। যাদের এই চরিত্র তাদের কাছ থেকে নির্বাচন কীভাবে সুষ্ঠু করতে হয় সেটা শেখার প্রয়োজন নেই। জনগণকে ভোট দেওয়ার অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছি।”

পরে সংশোধনী প্রস্তাব তোলার সময় বিএনপির সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, ‘ভোট দেয় প্রশাসন। আর দেখে জনগণ। ভোটটা সুষ্ঠু করে করলেই তো হয়। কারো থেকে ভোট শিখতে হবে না। ভোট কীভাবে দিতে হয় সেটা সবাই জানে। ভোটটা দিতে দিলেই হয়।’

পরে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক বলেন, তাঁর এলাকায় পৌরসভা নির্বাচন ‘অত্যন্ত সুষ্ঠু’ হয়েছে।

জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌরসভায় বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। বিএনপির প্রার্থী নিজেই বলেছেন, নির্বাচন সুন্দর হয়েছে। তাঁর ওই বক্তব্য বিবিসিতেও প্রচারিত হয়েছে।

জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, তাঁর পৌরসভায় ৮৪ শতাংশ ভোট পড়েছে। এতে লাঙ্গল জয়ী হয়েছে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আজ সকাল ১০টার দিকে খুলশী ইউসেপ স্কুল কেন্দ্রে সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে আলাউদ্দিন আলো (২৮) নামের একজন নিহত হন। পরে এ ব্যাপারে চমেক মেডিকেল পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ মো. জহির এনটিভি অনলাইনকে জানান, নগরীর খুলশী আমবাগান এলাকার ইউসেপ স্কুল কেন্দ্র থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হলে আলাউদ্দিন আলোর মৃত্যু হয়।

এদিকে নির্বাচনে ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ডে কয়েকটি কেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনার পর বিএনপির কাউন্সিলর পদপ্রার্থী মোহাম্মদ ইসমাইল বালীকে আটক করেছে পুলিশ। পাথরঘাটা মহিলা কলেজ কেন্দ্রে নির্বাচনি কর্মকর্তা আহতের ঘটনায় তাঁকে আটক করা হয়েছে।

বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন ১১টার দিকে নগরের চকবাজার টিচার্স ট্রেনিং কলেজে (বিএড কলেজ) ভোট দেওয়ার পর অভিযোগ করেছেন, সব কেন্দ্র থেকে দলের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও এজেন্টদের মেরে বের করে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন নির্যাতনে পরিণত হয়েছে।

অপরদিকে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী সকাল ৯টার দিকে বহদ্দারহাট এখলাছুর রহমান প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দেন। পরে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ভালো ভোট হচ্ছে। নির্বিঘ্নে ভোট প্রদান করছেন ভোটারেরা। উৎসবমুখর পরিবেশ ভোট দিচ্ছেন সবাই। বিএনপির এজেন্টরা কেন্দ্রেই যায়নি। বিএনপি জনবিচ্ছিন্ন। এজন্য তারা এজেন্ট দিতে পারেনি।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ষষ্ঠ নির্বাচনে আজ বুধবার সকাল ৮টায় ভোট শুরু হয়। বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৭৩৫টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ চলবে। ভোটে একজন মেয়র, ৪১ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ১৪ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর নির্বাচিত হবেন। এবার মেয়র পদের জন্য সাতজনসহ মোট প্রার্থী ২৩২ জন। ভোটার সংখ্যা সর্বমোট ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন।