চট্টগ্রামে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা লাখ ছাড়াল

Looks like you've blocked notifications!

চট্টগ্রাম জেলায় নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্তের মোট সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়েছে।

গত বছর ৩ এপ্রিল চট্টগ্রাম নগরীতে প্রথম করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর গত ১৭ মাসে করোনার ভাইরাসবাহকের সংখ্যা লাখ পূর্ণ হয়।

সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বনিম্ন ১২০ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। আক্রান্তের হার ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ। এ সময়ের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরও পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের রিপোর্টে বলা হয়, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজসহ দশটি ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের এক হাজার ১৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে নতুন ১২০ জন পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে শহরের বাসিন্দা ৬২ জন এবং দশ উপজেলার ৫৮ জন। উপজেলায় আক্রান্তদের মধ্যে বাঁশখালীতে সর্বাধিক ১৫ জন, মিরসরাইয়ে ১৩ জন, হাটহাজারীতে ১০ জন, চন্দনাইশে সাত জন, ফটিকছড়িতে পাঁচ জন, রাউজানে তিন জন, সীতাকুণ্ডে দুজন এবং আনোয়ারা, বোয়ালখালী ও পটিয়ায় এক জন করে রয়েছে। জেলায় করোনাভাইরাসে মোট সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা এখন এক লাখ ৪৫ জন। এর মধ্যে শহরের বাসিন্দা ৭২ হাজার ৬৫২ জন এবং গ্রামের ২৭ হাজার ৩৯৩ জন।

গতকাল করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে গ্রামের পাঁচ জন মারা গেছে। ফলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে এক হাজার ২৪৬ জন হয়েছে। এর মধ্যে শহরের বাসিন্দা ৬৯৫ জন ও গ্রামের ৫৫১ জন। সুস্থতার ছাড়পত্র পেয়েছে নতুন ৫৯৭ জন। ফলে মোট আরোগ্যলাভকারীর সংখ্যা ৭৪ হাজার ২৩১ জনে উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে নয় হাজার ৯৩৫ জন, ঘরে থেকে চিকিৎসায় সুস্থ হয় ৬৪ হাজার ২৯৬ জন। হোম কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশনে নতুন যুক্ত হয় ১৭৪ জন এবং ছাড়পত্র নেয় ২৩০ জন। বর্তমানে কোয়ারেন্টিনে রয়েছে এক হাজার ৫৫৮ জন।

সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘সংক্রমণের নিম্নমুখী প্রবণতায় আশা জাগছে। আগের দুদিন হার ১০-এর নিচে থাকলেও গতকাল সামান্য বেড়েছে। তবে, সংক্রমণ হারের এ অবস্থাকে আমরা স্বস্তিদায়ক বলতে পারি না। নিম্নমুখী এ প্রবণতাকে ধরে রাখতে হলে প্রয়োজন বেশি করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। বর্তমানে আমরা লকডাউনের সুফল পাচ্ছি। এখন জীবন-জীবিকার সমন্বয়ের লক্ষ্যে সবকিছুই খুলে দেওয়া হচ্ছে, ফলে আমাদের অধিক সচেতন হতে হবে।’

ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘সংক্রমণের হার পাঁচের নিচে এলে স্বস্তিদায়ক বলা যায়। করোনাভাইরাসকে প্রতিরোধ বা নির্মূলের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট পন্থা হলো—বিধিনিষেধগুলো কঠোরভাবে মেনে চলা। অন্যথায় আমাদের আবারও নাজুক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।’  

চট্টগ্রামের করোনার প্রকোপ শুরুর পর গড়ে প্রতি মাসে পাঁচ হাজার ৮৮৫ জন সংক্রমিত হন। এর মধ্যে ভয়ংকর আগ্রাসন ছিল গত জুলাই মাসে। এক দিনে সর্বাধিক এক হাজার ৪৬৬ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয় ২৯ জুলাই। এদিন নয় জনের মৃত্যু হয়। বেসরকারি হাসপাতাল মনিটরিং কমিটির তথ্য অনুযায়ী, নগরীর হাসপাতালে এক দিনে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি ছিল গত ৬ আগস্ট, দুই হাজার ১০০ জনের বেশি। করোনাকালের সর্বাধিক মৃত্যু গত ২৬ জুলাই। এদিন শহরের সাত জন এবং গ্রামের ১১ জন মিলে ১৮ জনের মৃত্যু হয়। সংক্রমণ ঘটে এক হাজার ৩১০ জনের শরীরে। চব্বিশ ঘণ্টায় সংখ্যা ও হারে চট্টগ্রামে করোনার সর্বনিম্ন সংক্রমণ শনাক্ত হয় চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি। এদিন এক হাজার ২২৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হলে ২১ জনের দেহে ভাইরাসের উপস্থিতি মেলে। সংক্রমণ হার এক দশমিক ৭১ শতাংশ। করোনায় কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি।

ল্যাবভিত্তিক রিপোর্টে দেখা যায়, গতকাল সবচেয়ে বেশি ৩৭২ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ফৌজদারহাটে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) ল্যাবে। এখানে ৩৭২ জনের নমুনা পরীক্ষায় শহরের ১৮ এবং গ্রামের ২৬ জনের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়ে। ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু) ল্যাবে ১৭৮টি নমুনায় শহরের ২১ এবং গ্রামের ১২টিতে ভাইরাস পাওয়া যায়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ল্যাবে ৮৬ জনের নমুনার মধ্যে শহরের ছয় জন করোনায় আক্রান্ত বলে চিহ্নিত হন। ৩৭ জনের অ্যান্টিজেন টেস্টে গ্রামের একজন সংক্রমিত বলে জানানো হয়। নগরীর বিশেষায়িত কোভিড চিকিৎসা কেন্দ্র আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের আরটিআরএল-এ পরীক্ষিত ১৫টি নমুনায় শহরের তিনটি এবং গ্রামের দুটির পজিটিভ রেজাল্ট আসে।

বেসরকারি ক্লিনিক্যাল ল্যাবগুলোর মধ্যে শেভরনে ১৩৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় সবগুলোরই নেগেটিভ রেজাল্ট পাওয়া যায়। মা ও শিশু হাসপাতালে ৩৪টি নমুনায় গ্রামের দুটি, মেডিকেল সেন্টারে নয়টি নমুনার মধ্যে শহরের দুটি এবং এপিক হেলথ কেয়ারে ৫০টি নমুনা পরীক্ষায় শহরের ১২ এবং গ্রামের দুটিতে ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। চট্টগ্রামের ৯৭ জনের নমুনা কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে পাঠানো হয়। পরীক্ষায় ১৩টির রিপোর্ট পজিটিভ হয়।

এদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি), ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল এবং নতুন যুক্ত ল্যাব এইডে কোনো নমুনা পরীক্ষা হয়নি।

ল্যাবভিত্তিক রিপোর্ট পর্যবেক্ষণে সংক্রমণ হার নির্ণিত হয়, বিআইটিআইডি’তে ১১ দশমিক ৮২, সিভাসু’তে ১৮ দশমিক ৫৪, চমেকে ছয় দশমিক ৯৭, অ্যান্টিজেন টেস্টে দুই দশমিক ৭০, আরটিআরএলে ৩৩ দশমিক ৩৩, মা ও শিশু হাসপাতালে পাঁচ দশমিক ৮৮, মেডিকেল সেন্টারে ২২ দশমিক ২২, এপিক হেলথ কেয়ারে ২৮ এবং কক্সবাজার মেডিকেলে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ।