চট্টগ্রামে নির্যাতনের শিকার মাদ্রাসাছাত্রের লেখাপড়া যেন বন্ধ না হয় : হাইকোর্ট
চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে মাদ্রাসা শিক্ষকের হাতে নির্যাতনের শিকার শিশুশিক্ষার্থীর লেখাপড়া যেন বন্ধ হয়ে না যায়- তা খেয়াল রাখতে বলেছেন হাইকোর্ট।
নির্যাতনের ওই ঘটনায় মাদ্রাসাশিক্ষক মাওলানা মো. ইয়াহিয়ার বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপ বিষয়ক শুনানিতে আজ রোববার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার ওই মাদ্রাসাশিক্ষকের বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপের বিষয়ে হাইকোর্টকে বলেন, ‘এরই মধ্যে বিচারিক আদালতের নির্দেশে তাকে (মাদ্রাসাশিক্ষককে) কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া তাকে মাদ্রাসা থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং নির্যাতিত শিশু শিক্ষার্থীকে থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।’
ওই শিক্ষার্থীর বাসায় পুলিশ মোতায়েন করে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হাইকোর্টকে বলেন, ‘ঘটনার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসার প্রধানসহ দায়িত্বশীল যাঁরা আছেন, তাঁদের সবাইকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।’
এক পর্যায়ে শুনানিতে হাইকোর্ট বলেন, ‘মাদ্রাসায় বিভিন্ন মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন, এমনকি যৌন নির্যাতনের ঘটনাও ঘটতে ঘটছে। এ বিষয় আগে থেকেই আদালতের নির্দেশনা আছে। সে নির্দেশনাগুলো সব জায়গায় যাতে কার্যকর হয় এবং কমিটি গঠনসহ আদালতের নির্দেশনার যাতে যথাযথ বাস্তবায়ন হয় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে সে ব্যাপারে সচেষ্ট হতে হবে।’
গত মঙ্গলবার বিকালে হাটহাজারী পৌর এলাকার আল মারকাযুল কোরআন ইসলামিক একাডেমির শিক্ষার্থী শিশুসন্তানকে দেখতে আসেন তার মা। পরে চলে যাওয়ার সময় শিশুটি মায়ের পেছন পেছন পেছন ছুটে যায়। তা দেখে শিক্ষক ইয়াহিয়া তাকে ঘাড় ধরে মাদ্রাসার একটি কক্ষে নিয়ে বেদম মারধর করেন।
ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে গভীর রাতে মাদ্রাসাটিতে অভিযান চালিয়ে ইউএনও মো. রুহুল আমীন আট বছরের শিশুটিকে উদ্ধার এবং শিক্ষক ইয়াহিয়াকে আটক করেন।
কিন্তু শিশুটির পরিবারের পক্ষ থেকে তখন কোনো অভিযোগ না করায় শিক্ষককে বুধবার সকালে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে বুধবার রাতের ওই ঘটনায় শিশুটির বাবার করা মামলায় পরে গ্রেপ্তার মাদ্রাসাশিক্ষক মাওলানা মো. ইয়াহিয়াকে বৃহস্পতিবার কারাগারে পাঠান আদালত। অন্যদিকে, মঙ্গলবার রাতেই ওই শিক্ষককে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার করা হয়।
শিশু শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনাটি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের নজরে আনেন। তখন হাইকোর্ট ওই শিক্ষার্থীকে পেটানোর ঘটনায় মাদ্রাসা শিক্ষক মোহাম্মদ ইয়াহিয়ার বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানতে নির্দেশ দেন।
এ ছাড়া ‘নির্যাতনের’ শিকার শিশুটিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে কি না এবং শিশুটির পরিবারকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে কি না, তা-ও জানাতে চান হাইকোর্ট। রোববারের মধ্যে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এ বিষয়ে জানাতে বলা হয়।
আজ দুপুরে হাইকোর্টে প্রতিবদেনটি দাখিল করে ওই মাদ্রাসাশিক্ষকের বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপের বিষয়ে হাইকোর্টকে জানানো হয়।