চট্টগ্রাম থেকে ভাসানচরের জাহাজে ১৮০৪ রোহিঙ্গা

Looks like you've blocked notifications!

কক্সবাজারের ঘিঞ্জি শরণার্থী শিবির থেকে স্বেচ্ছায় দ্বিতীয় দফায় এক হাজার ৮০৪ জন রোহিঙ্গা আজ মঙ্গলবার সকালে নোয়াখালীর ভাসানচরের উদ্দেশে যাত্রা করেছে। চট্টগ্রাম থেকে আজ সকালে তারা পাঁচটি জাহাজে করে গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করে।

দ্বিতীয় দফায় ভাসানচরের উদ্দেশে যাওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে ১৩০ জন আছে, যাদের আত্মীয়-স্বজন কিংবা পরিবার এরই মধ্যে গত ৪ ডিসেম্বর প্রথম দফায় ভাসানচরে গেছে। তারা বলছে, পরিবারের কাছ থেকে ফোনে খবর পেয়েছে যে, সেখানে থাকা–খাওয়ার ব্যবস্থা খুবই সুন্দর ও ভালো পরিবেশ। সেজন্য তারা সেখানে যাচ্ছে।

এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির থেকে স্থানান্তরের প্রথম ধাপে বঙ্গোপসাগরের দ্বীপ ভাসানচরে যান এক হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গা।

গতকাল সোমবার দুপুর পৌনে ১২টা থেকে বিকেল পর্যন্ত কক্সবাজারের উখিয়া ডিগ্রি কলেজের মাঠ থেকে বাসে করে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেয় রোহিঙ্গারা। এর আগে তাদের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে বাসে করে উখিয়া ডিগ্রি কলেজের মাঠের অস্থায়ী পয়েন্টে আনা হয়।

সরকারি বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকেল পর্যন্ত তিন ধাপে রোহিঙ্গাদের চট্টগ্রামে নেওয়া হয়। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে প্রথম ধাপে ১৩টি বাসে করে ৫৯৫ জন, দ্বিতীয় ধাপে ১১টি বাসে করে ৫৩৯ জন এবং বিকেলে তৃতীয় ধাপে ১৫টি বাসে করে ৬৭০ জন রোহিঙ্গা উখিয়া কলেজ মাঠ থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেয়।

রোহিঙ্গাদের মালামাল নিয়ে ১১টি কার্গো ও ট্রাক রওনা দেয়। সর্বমোট ৪২৮ রোহিঙ্গা পরিবারের এক হাজার ৮০৪ জন দ্বিতীয়পর্যায়ে ভাসানচর যাচ্ছে। চট্টগ্রাম মহানগরীর পতেঙ্গায় বিএএফ শাহীন কলেজের মাঠে তাদের রাতযাপনের ব্যবস্থা করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তিনি কথা বলেননি।

এ বিষয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের প্রতিনিধি এবং টেকনাফের শামলাপুর রোহিঙ্গা শিবিরের কর্মকর্তা (সিআইসি) নওশের ইবনে হালিম বলেন, তাঁর শিবির থেকে স্বেচ্ছায় ১০০ রোহিঙ্গা ভাসানচরের উদ্দেশে ক্যাম্প ত্যাগ করেছে। সকালে তারা ক্যাম্প থেকে উখিয়া রওনা দেন। এর আগে এ শিবির থেকে ২১ পরিবার ভাসানচরে গিয়েছে।

পরিবার নিয়ে ভাসানচরের উদ্দেশে যাত্রাকালে টেকনাফ শামলাপুরের মো. জাহেদ হোসাইন বলেন, ‘কেউ আমাদের জোর করেনি। নিজেদের ইচ্ছায় আমরা পুরো পরিবার ভাসানচরে চলে যাচ্ছি। তাছাড়া ভাসানচরে যারা আছে তারা অনেক ভালো আছেন বলে ফোনে জানিয়েছিলেন। তাই আমরা উন্নত জীবনের আশায় সেখানে যাত্রা দিচ্ছি।’

শামলাপুর রোহিঙ্গা শিবিরের হেড মাঝি আবুল কালাম জানান, তাঁর শিবির থেকে ২৫ পরিবারের ১০০ জন রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় ভাসানচরের উদ্দেশে উখিয়ায় রওনা দিয়েছে।

ভাসানচর থেকে মুঠোফোনে মো. ইসমাইল (১৮) নামের এক রোহিঙ্গা কিশোর বলে, ‘টেকনাফ শামলাপুর রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে পরিবারের সঙ্গে ৪ ডিসেম্বর ভাসানচরে এসেছি। এখানে আমরা সবাই খুব ভালো আছি। এখানকার পরিবেশ ক্যাম্পের চেয়ে অনেক ভালো। এই ভাসানচর দ্বীপে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত নৌবাহিনীর সদস্যরা খুব ভালো ব্যবহার করেন। তাঁরা সব সময় আমাদের সহায়তা করে। ক্যাম্পে থেকে যাওয়া আমার এক বোন এখানে চলে আসার জন্য বারবার ফোন করছে।’

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হত্যা ও নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। আগে আশ্রয় নেওয়াসহ বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে ঘিঞ্জি পরিবেশে বসবাস করে আসছে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে তিন হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। সেখানে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। ভাসানচরের পুরো আবাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। বর্তমানে সেখানে ৩০৬ জন রোহিঙ্গা বসবাস করছেন, যারা সাগরপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করে গত মে মাসে ফিরে এসেছিলেন।