চতুর্থ ধাপে ৫৫ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ চলছে

Looks like you've blocked notifications!
চতুর্থ ধাপে রোববার ৫৫ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। ছবি : সংগৃহীত

চতুর্থ ধাপে দেশের ৫৫ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। এদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে। উৎসবমুখর এ নির্বাচন নিয়ে যেমন রয়েছে উত্তেজনা, তেমনি ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে আছে শঙ্কাও।

এ ভোটকে কেন্দ্র করে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ধাপে ২৬ পৌরসভায় ব্যালট পেপারে ও ২৯ পৌরসভায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

যে পৌরসভায় ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়, সেখানে আজ রোববার সকালে ব্যালট পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। বিগত তিন ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে সংঘাত-সহিংসতা হওয়ায় এ ধাপের ভোট নিয়ে উত্তেজনা রয়েছে সব নির্বাচনি এলাকায়। অনেক প্রার্থী কেন্দ্র দখলের শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া ভোটার, এজেন্ট ও প্রার্থীদের হুমকি-ধামকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এ দফায়।

চতুর্থ ধাপে গোলযোগ ছাড়াই ‘সুষ্ঠু ভোট’ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। তিনি বলেছেন, ‘আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অত্যন্ত সতর্ক অবস্থায় রাখি। আমাদের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি রয়েছে। আশা করি, অন্তত এরপর থেকে যে নির্বাচন হবে, ভালো হবে-সুষ্ঠু হবে; সংঘাত-সংঘর্ষ হবে না।’

এদিকে পৌর ভোটে সহিংসতা নিয়ে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছিলেন, নির্বাচনে সহিংসতা ও আচরণবিধি লঙ্ঘন ক্রমবর্ধমান ঘটনায় তিনি উদ্বিগ্ন।

তবে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশনের লক্ষ্য হচ্ছে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা। এজন্য যা যা করতে হবে, সে নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছি। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে যা যা দরকার আমরা সব ব্যবস্থা নিয়েছি। জেলা প্রশাসক, এসপি এবং রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, নির্বাচনটা যেন ফ্রি, ফেয়ার এবং ক্রেডিবল হয়।’

ইসি জানিয়েছে, দেশের ৩৪ জেলার ৫৫ পৌরসভায় চতুর্থ ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ ধাপে মেয়র পদে ২১৭ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে দুই হাজার ৭০ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬১৮ জন প্রার্থী রয়েছেন। এ ছাড়া ৫০১টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৬৭টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ৭৯৩টি ভোটকেন্দ্রে মোট ভোটার রয়েছেন ১৬ লাখ ৬৭ হাজার ২২৪ জন। যার মধ্যে পুরুষ আট লাখ ৩২ হাজার ৪২৮ ও নারী আট লাখ ৩৪ হাজার ৭৮৬ জন ভোটার রয়েছেন।

ইসি সূত্র জানিয়েছিল, ভোটের অনিয়ম রোধে প্রতিকেন্দ্রে তিন থেকে চারজন অস্ত্রধারী পুলিশ থাকবে। আনসার সদস্যসহ সব মিলিয়ে প্রতি কেন্দ্রে ১১ থেকে ১৩ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থাকবে। কেন্দ্রের বাইরে প্রতিটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে একটি করে র‍্যাব ও পুলিশের টিম থাকবে। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে। রিটার্নিং কর্মকর্তার চাহিদার ভিত্তিতে ২৭টি স্থানে বিজিবি ও র‍্যাবের টহল বাড়ানো হয়েছে।

সূত্রটি আরো জানিয়েছে, চতুর্থ ধাপের এ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স, র‍্যাবের টিম, প্রত্যেক পৌরসভায় গড়ে দুই প্লাটুন বিজিবি ও উপকূলীয় এলাকায় প্রতি পৌরসভায় এক প্লাটুন কোস্ট গার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা মাঠে থাকছেন। এ ছাড়া কিছু পৌরসভায় নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে নির্দিষ্ট হারের চেয়ে অতিরিক্ত র‍্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

গত ৩ জানুয়ারি চতুর্থ ধাপের ৫৬টি পৌরসভায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। পরে সোনাইমুড়ি ও ত্রিশাল পৌরসভা এ ধাপে যুক্ত হয়। অপরদিকে হাইকোর্টের আদেশে নাটোর পৌরসভার নির্বাচন স্থগিত করা হয়। ফেনীর পরশুরাম পৌরসভায় সব পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ায় সেখানে ভোটের প্রয়োজন হচ্ছে না। আবার মাদারীপুরের কালকিনি পৌরসভার ভোট স্থগিত করে কমিশন। সব মিলিয়ে এখন ৫৫টিতে ভোট হচ্ছে।

যে ৫৫ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ

ঠাকুরগাঁও জেলার ঠাকুরগাঁও (ইভিএম) ও রাণীশংকৈল, রাজশাহীর নওহাটা, গোদাগাড়ী (ইভিএম), তানোর ও তাহেরপুর, লালমনিরহাটের লালমনিরহাট (ইভিএম) ও পাটগ্রাম, নরসিংদীর নরসিংদী, মাধবদী (ইভিএম), রাজবাড়ীর রাজবাড়ী (ইভিএম) ও গোয়ালন্দ, বরিশালের মুলাদী (ইভিএম), বানারীপাড়া, শেরপুরের শেরপুর (ইভিএম), শ্রীবরদী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ (ইভিএম), নাটোরের বড়াইগ্রাম, খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা, বান্দরবানের বান্দরবান (ইভিএম), বাগেরহাটের বাগেরহাট (ইভিএম), সাতক্ষীরার সাতক্ষীরা (ইভিএম), হবিগঞ্জের চুনারুঘাট (ইভিএম), কুমিল্লার হোমনা (ইভিএম),  দাউদকান্দি (ইভিএম), চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, পটিয়া (ইভিএম), চন্দনাইশ, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর (ইভিএম), হোসেনপুর, করিমগঞ্জ, টাঙ্গাইলের গোপালপুর (ইভিএম) ও কালিহাতী, পটুয়াখালীর কলাপাড়া (ইভিএম), চুয়াডাঙ্গার জীবননগর, আলমডাঙ্গা (ইভিএম), চাঁদপুরের কচুয়া (ইভিএম), ফরিদগঞ্জ, নেত্রকোনার নেত্রকোনা (ইভিএম), যশোরের চৌগাছা (ইভিএম), বাঘারপাড়া, রাঙামাটির রাঙামাটি (ইভিএম), মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম (ইভিএম), শরীয়তপুরের ডামুড্যা, জামালপুরের মেলান্দহ, ময়মনসিংহের ফুলপুর (ইভিএম), ত্রিশাল, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর (ইভিএম), কালাই, নোয়াখালীর চাটখিল (ইভিএম), সোনাইমুড়ি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া (ইভিএম), লক্ষ্মীপুরের রামগতি (ইভিএম), ফরিদপুরের নগরকান্দা ও সিলেটের কানাইঘাট পৌরসভা।

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে পৌরসভা নির্বাচন করছে কমিশন। প্রথম ধাপে ২৮ ডিসেম্বর, ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপের এবং তৃতীয় ধাপে ভোট হয় ৩০ জানুয়ারি। চতুর্থ ধাপে রোববার ভোট শেষ হলে পঞ্চম ধাপের ভোট হবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি। এ ছাড়া ৭ এপ্রিলও শেষ ধাপে বেশ কিছু পৌরসভায় ভোট হতে পারে।