‘চরিত্র নিয়ে অপবাদ’, পরদিন মিলল নারীর ঝুলন্ত লাশ
অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ আনা হয়েছিল মাদারীপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের কর্মী মুক্তা বেগমের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে ঢাকা বিভাগীয় খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে দরখাস্তও দেওয়া হয়। গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি।
কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, প্রকৃত তদন্ত ছাড়াই বিভাগীয় খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে প্রতিবেদন দেয় কমিটি। এরপর মুক্তাকে বদলি করা হয় নারায়ণগঞ্জে। এ ঘটনার পর মুক্তাকে তাঁর বাড়িতে গিয়ে চরিত্রহীন অপবাদ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। আর, এমন অপবাদ সহ্য করতে না পেরে মুক্তা আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে। শহরের ভাড়া বাসায় গতকাল রোববার রাতে মুক্তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের কর্মী মুক্তা বেগমের সঙ্গে এক যুবকের অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে এমন অভিযোগ এনে ঢাকা বিভাগীয় খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে দরখাস্ত দিয়েছিলেন ওই যুবকের স্ত্রী নারগিস আক্তার সীমা। অভিযোগ দেওয়ার পর জেলা খাদ্য বিভাগ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয় চরমুগরিয়া খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আল আমিনকে। অন্য সদস্যেরা হলেন—মাদারীপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের প্রধান অফিস সহকারী আব্দুর রাজ্জাক ও উপ-খাদ্য পরিদর্শক শিপন মিয়া।
অভিযোগ ওঠে, কমিটি প্রকৃত তদন্ত ছাড়াই মুক্তার বিরুদ্ধে ওই যুবকের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে বলে বিভাগীয় খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে প্রতিবেদন প্রদান করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তাকে নারায়ণগঞ্জ জেলায় বদলি করা হয়। এ ছাড়া নারগিস আক্তারসহ এক নারী গত শনিবার রাতে মুক্তার বাসায় গিয়ে মুক্তাকে চরিত্রহীন বলে গালিগালাজ করেন।
এমন অপমান সহ্য করতে না পেরে গতকাল রোববার রাতে মুক্তা শহরের ভাড়া বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। পরে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্ত করে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সদর থানা পুলিশ।
এ ব্যাপারে মাদারীপুর খাদ্য অধিদপ্তরের উপ-খাদ্য পরিদর্শক শিপন মিয়া বলেন, ‘রাতে নারগিস আক্তার গিয়ে মুক্তাকে গালিগালাজ করেন। এর পরেই আত্মহত্যা করেছেন মুক্তা। আমরা ধারণা করছি, গালগালাজ করার কারণেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন।’
মুক্তার স্বামী রাশেদুল ইসলাম সাজ্জাদ বলেন, ‘শুধু শুধু তো আত্মহত্যা করেনি। কোনো কারণেই সে আত্মহত্যা করেছে। পুলিশ যেন তদন্তের মাধ্যমে সঠিক বিচার করে, আমি সেটাই দাবি করছি।’
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল হাসান মিঞা বলেন, ‘এই ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। এ ঘটনার কারণ খুঁজে বের করতে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। আত্মহত্যার কারণ তদন্তে উঠে এলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’