চলে গেলেন অভিমানী মা অরিফুন বিবি
শত চেষ্টার পরও বাঁচান গেল না তাঁকে। আজ শুক্রবার না ফেরার দেশে চলে গেলে অভিমানী মা। রাজধানী ঢাকায় থাকেন তাঁর দুই ছেলে। নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেন তাঁরা। শুধু এটুকুই তথ্য দিয়েছিলেন বরগুনায় সেই মায়ের দেখভাল করা সুমন রায় ও তাঁর বন্ধুদের। যদিও বলেছিলেন তাঁর নাম। ছেলেদের সম্মানের কথা ভেবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আর কিছুই বলতে রাজি হননি তিনি।
বলছিলাম আরিফুন বিবির কথা। বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক উপসম্পাদক সুমন রায় জানান, দুমাস আগে শহরের সিলভারপট্টি এলাকায় অসুস্থ অবস্থায় আরিফুন বিবিকে পেয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা চালিয়ে আসছিলেন তিনি। পাশাপাশি তাঁর স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালান। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। কোনভাবেই মুখ খোলেননি আরিফুন। বোঝান যায়নি, ভুল বুঝতে পেরে হয়তো এতদিনে তাঁর ছেলেরা ভালো হতে পারেন। হয়তো মায়ের খোঁজ করছেন তাঁরা।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আলেয়া বেগম জানান, ছেলেদের মানসম্মানের কথা চিন্তা করে শত কষ্ট বুকে চেপে রেখে আরিফুন বিবি ছেলেদের নাম ঠিকানা প্রকাশ করেননি। রোগশোক আর অভিমানে কঙ্কালসার হয়ে পড়েছিলেন। তবুও মুখ ফুটে কিছু চাইতেন না।
বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভির আহমেদ জানান, আরিফুন বিবির চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়া সুমন রায় নিজেও অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করছেন। শহরের একটি দোকানে পার্টটাইম কাজ করে লেখাপড়া চালিয়েছেন। এ বছর বরগুনা সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক শেষ করেছেন। তাঁর জীবন থেকেই তিনি অনুভব করেন বেদনার কথা। সুমন তাঁর বন্ধুদের নিয়ে গত দুমাস ধরে আরিফুন বিবির পাশে ছিলেন। খোঁজখবর রেখেছেন, চিকিৎসা চালিয়ে গেছেন। এতে আমরা গর্বিত।
জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী মো. ইব্রাহিম জানান, আরিফুন বিবির বিষয়ে সুমন রায় সমাজসেবা অধিদপ্তরকে জানিয়েছিলেন। সুমন রায়ের কাছ থেকে খবর পেয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সব রকমের সহযোগিতা করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে মো. ইব্রাহিম এনটিভি অনলাইনকে জানান, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কসহ চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করেছেন। আরিফুন বিবিকে মানসিক ভারসাম্যহীন মনে হয়নি। ছেলেদের সামাজিক সম্মান অক্ষুন্ন রাখতেই তিনি পরিচয় গোপন করেছেন বলে মনে হয়েছে।
বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘একজন ছাত্রলীগ কর্মী সুমন রায় যে কাজটি করেছেন তা প্রসংশনীয়। অনুসরণীয়ও।’ তিনি বলেন, ‘সুমন রায়ের কাছ থেকে আরিফুন বিবির বিষয়ে জেনেই সমাজসেবা অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে নির্দেশ দিয়েছিলাম। পাশাপাশি জেলাপ্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক নজরদারি অব্যাহত রাখা হয়েছিল।
বরগুনা থানার উপপরিদর্শক মো. মারুফ আহমেদ বলেন, ‘আরিফুন বিবির মৃত্যুর পর তাঁর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। নিয়মানুযায়ী তাঁর ডিএনএ, ছবি এবং আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণ করা হয়েছে।’ আজ শুক্রবার আরিফুন বিবিকে বরগুনার পৌর কবরস্থানে সমাহিত করেন সুমন রায় ও তার বন্ধুরা বলে জানান তিনি।