চার বছরের জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগে ফরিদপুরের কয়েকশ পরিবার

দীর্ঘদিনের জলবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগে ফরিদপুরের তিন শতাধিক পরিবার। জমা পানি যেন মশা-মাছির প্রজননক্ষেত্র। নোংরা পরিবেশ ছড়াচ্ছে নানা রোগ। বাড়ির থেকে বের হতে হলে সাঁকোয় করে পার হতে হয় শহরতলীর ডাংগি গ্রামবাসীকে। হাসপাতালে যেতে গর্ভবতী, বৃদ্ধরাও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হন সাঁকো। বহুবার অভিযোগ জানিয়েও গ্রামবাসী পাননি সমাধান। চার বছরের বেশি সময় ধরে এভাবেই অবহেলার শিকার তাঁরা।
ডিক্রিরচর ইউনিয়নের সিএন্ডবি ঘাট সংলগ্ন আইজউদ্দিন মাতুব্বরের ডাংগি গ্রামে সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রামের পানি নেমে যাওয়ার জন্য যে কালভার্ট তৈরি করা হয়েছিল, তা এখন এলাকার প্রভাবশালীদের দখলে। কালভার্ট বন্ধ করে তার ওপর তৈরি করা হচ্ছে ঘর, ব্যবহার করা হচ্ছে ইচ্ছে মতো। এতে পদ্মা নদীর ওই ঘাটের নাব্য ধরে রাখতে তোলা বালুর স্তুপ থেকে চুয়ে আসা পানি নিষ্কাশনের পথ পাচ্ছে না। জমছে বৃষ্টি ও বন্যার পানিও।
গ্রামের তিন শতাধিক ঘরের উঠোনে পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। পানিবন্দি গ্রামবাসী নিজের বাড়ি থেকে বের হতে তৈরি করেছেন বাঁশের সাঁকো।
পানিবন্দি আবুল কালাম, আসমা বেগম, মোমেনা বেগম, হায়দার খানসহ অনেকেই জানান পানিবন্দি হয়ে দুর্দশার কথা। মোমেনা বেগম বলেন, ‘বৃদ্ধ ও গর্ভবতীদের চলাফেরায় জীবনের ঝুঁকি অনেক বেশি। শিশুরাও রয়েছে। নানা সময় অঘটন ঘটে চলেছে। বারবার এসব কথা স্থানীয় ইউপি সদস্যকে জানানো হয়েছে। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি।’
আবুল কালাম বলেন, ‘গ্রামের পাশের মাঠে এক সময় ধানসহ বিভিন্ন ফসল ফলত। গত চার বছরের বেশি সময় ধরে সব সময় সেখানে পানি জমে থাকে। ফলে জন্মায় না কিছুই।’
হায়দার জানান, ‘জমাট পানি ও কাদা থেকে পচা গন্ধ ছড়ায়। মশামাছির উপদ্রবে বাঁচা দায়। এমন অবস্থায় তাঁরা নানা রোগে ভুগছেন।’
মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলনা নাজমুল হাসান বলেন, ‘শিশুদের নিয়ে এলাকার মানুষজন বিপদে রয়েছেন। গৃহপালিত পশুপাখি পালন করা যাচ্ছে না। অথচ দুর্ভোগ লাঘবে কাউকেই পাশে পাওয়া যায় না।’
এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রভাবশালীদের কারণে তৈরি হয়েছে এমন ভোগান্তি। তাঁরা কালভার্ট বন্ধ করে ঘর তুলেছেন। ফলে জমে থাকা পানি নামার সুযোগ পাচ্ছে না। এসব বিষয়ে বহুবার চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে। তিনি প্রতিবারই আশ্বাস দিয়েছেন, কিন্তু জলবন্ধতা নিরসনের কোনো উদ্যোগ নেননি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য পাঞ্জু শেখ বলেন, ‘পানিনিষ্কাশনের পথগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হয় না। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে চলা জলাবদ্ধতা সমস্যারও সমাধান হয় না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিক্রিরচর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান মিন্টু ফকির এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘উপজেলা উন্নয়ন সভায় দুর্দশার কথা তোলা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসনের আশ্বাস দিয়েছেন।’
আশ্বাস বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে ফরিদপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদুল আলম এনটিভি অনলাইনকে মুঠোফোনে বলেন, ‘সম্প্রতি এলাকাটি পরিদর্শন করে এসেছি। নানা কারণে বৃষ্টির পানি নামতে পারছে না। তা ছাড়া সেখানে পানি নিষ্কাশনের পথগুলো অত্যন্ত নাজুক। আমরা দ্রুতই এই জলাবদ্ধতা সমাধানের চেষ্টা করবো।’