চাল চুরির মহোৎসব এখন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা : রিজভী
করোনাভাইরাসের কারণে কর্মহীন দরিদ্র মানুষের জন্য সরকার যে পরিমাণ চাল বিতরণ করছে, তা মোটেও পর্যাপ্ত নয় বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি আরো বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে যোগ হয়েছে চাল চুরির মহোৎসব। গণমাধ্যমে প্রতিদিন যে পরিমাণ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রকাশিত হচ্ছে, তার চেয়েও চাল চোরের সংখ্যা বেশি। এমন অবস্থায় অবিলম্বে ত্রাণের চাল বিতরণের দায়িত্ব সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’ রাজধানীতে বিএনপির দলীয় কার্যালয় থেকে এক ভিডিও কনফারেন্সে আজ রোববার সকালে এ কথা বলেন রিজভী।
এ সময় বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, ‘এখন রাজনীতি করার সময় নয়। বরং ভেদাভেদ ভুলে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার সময়।’
রিজভী বলেন, ‘অবিচার অনাচারের দুঃশাসনের জন্ম দেওয়া হয়েছে। আজ তার কুফল দেখতে পাচ্ছে সমগ্র জাতি। মরণঘাতী করোনাভাইরাস যখন প্রতি রাষ্ট্র ও সমাজকে থমকে দিয়েছে, তখন বাংলাদেশে চলছে দরিদ্র মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নেওয়ার মচ্ছব। তারা দেশের এত উন্নয়ন করেছে, বিশেষ করে বিদ্যুতের উন্নয়নে দেশ নাকি আলোয় ঝলমল করছে। অথচ এই দুর্যোগে বিদ্যুতের অভাবে করোনার কিট উৎপাদন করতে পারছে না গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। উপরন্তু দুই সপ্তাহ ধরে পত্রিকার পাতাজুড়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের চাল চুরির খবর প্রকাশিত হলেও এ পর্যন্ত কারো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির খবর আমরা পাইনি। যার কারণে এ লুটেরা গোষ্ঠী বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এদের লাগাম এখনই টেনে ধরুন। নাহলে জনগণ রুখে দাঁড়াতে বাধ্য হবে।’
রুহুল কবির রিজভী আরো বলেন, “জাতির এই ক্রান্তিকালে যারা গরিবের হক মেরে খায়, তারা দেশের শত্রু এবং মানবতার শত্রু। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছিলেন, ‘করোনার চেয়েও আমরা বেশি শক্তিশালী।’ সেটিই প্রমাণিত হলো—করোনা রোগী শনাক্ত যত ধরা পড়ছে, তার চেয়েও বেশি ত্রাণের চাল চোর ধরা পড়ছে।”
বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে বাংলাদেশে। গতকাল শনিবার পর্যন্ত দেশের ৩১ জেলায় করোনার সংক্রমণ ছড়িয়েছে। আক্রান্ত আর মৃতের সংখ্যা বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। লকডাউনের কারণে সমগ্র দেশে কয়েক কোটি হতদরিদ্র এবং বেকার মানুষ অতি কষ্টে জীবন যাপন করছে। করোনার বিস্তার রোধে সবাই ঘরবন্দি হয়ে থাকায় দিনমজুর, ক্ষুদ্র কৃষক, শ্রমিকসহ গরিব মানুষের একটি বড় অংশ কর্মহীন। রোজগার বন্ধ হয়ে পেটে ভাত জোগানোই মুশকিল। তাদের এই কষ্ট লাঘবের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে স্বল্পমূল্যে চাল ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী বিতরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এত বড় মহামারির মধ্যেও ক্ষমতাসীন দলের দুর্নীতিবাজরা ত্রাণ ও স্বল্পমূল্যের চাল আত্মসাৎ করছে। সরকারি হিসেবে, দেশের খাদ্য গুদামগুলোতে ১৭.৫১ লাখ টন চাল মজুদ আছে। এই পরিমাণ চাল দিয়ে তিন অথবা চার কোটি মানুষকে ছয় মাস অনায়াসে খাওয়ানো সম্ভব। অথচ মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। ক্ষুধার জ্বালায় রাস্তায় পড়ে থাকছে।’
রিজভী বলেন, ‘যেখানে কে বাঁচবে, কে বাঁচবে না—তার কোনো নিশ্চয়তা নেই, যেখানে জীবন এখন অনেক বেশি অনিশ্চিত, সেখানে কি করে আওয়ামী লীগের লোকজন ত্রাণের মালামাল চুরি করে খায়? লোভ-লালসা এদের লজ্জা-শরম, বিবেকবোধ সব কিছু অন্ধ করে দিয়েছে। এই করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যেও থেমে নেই ত্রাণের চাল চুরি। চাল চুরির ঘটনায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাই বেশি জড়িত। সারা দেশে গত ৯ দিনে অন্তত দুই হাজার ২৬৪ বস্তা সরকারি ত্রাণের চাল চুরির খবর পাওয়া গেছে। পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামে সরকারি চাল আত্মসাতের বড় ঘটনা ঘটছে। বুধবার থেকে আগের এক সপ্তাহে একটি সিন্ডিকেট বস্তা পাল্টে খোলাবাজারে অন্তত ২০ হাজার বস্তা সরকারি চাল বিক্রি করে দিয়েছে বলে জেনেছে পুলিশ।’
ব্র্যাকের সাম্প্রতিক জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, “দেশে চরম দারিদ্র্য অবস্থা আগের তুলনায় ৬০ শতাংশ বেড়েছে। প্রায় ১৪ ভাগ মানুষের ঘরে খাবার নেই। ২৯ শতাংশ মানুষের ঘরে আছে মাত্র এক থেকে তিন দিনের খাবার। দেশ ‘উত্তম’ আয়ের নাকি ‘মধ্যম’ আয়ের, দেশের অবস্থা এখন ‘মিরপুর’ নাকি ‘সিঙ্গাপুর’—এসব কাগুজে বিতর্কের সময় নয়। এখন সরকারের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে, প্রায় তিন কোটি মানুষের ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া। অথচ এর পরিবর্তে জনগণ দেখছে ভিন্ন চিত্র। কথায় বলে, কারো ঘর পোড়ে, কেউ আলু পোড়া খায়।”
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব আরো বলেন, ‘আমরা দলীয়ভাবেও সারা দেশে সাধ্যমতো জনগণের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। এটাই আমাদের দলের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের নির্দেশ। বিএনপি এবং বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাও তাদের সাধ্যমতো জনগণের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়েছে। পাশাপাশি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) মতো পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও বসে নেই। আপনারা জানেন, শহীদ জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন এবং ড্যাবের উদ্যোগে গত শুক্রবার থেকে দেশের ৮৪টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এবং ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পার্সোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) বিতরণ কর্মসূচি শুরু করা হয়েছে। সাধ্যমতো এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’