চিকিৎসা না দেওয়া হাসপাতাল, ক্লিনিকের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মতো দুর্যোগময় মুহূর্তে যেসব প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও চেম্বার মানুষকে চিকিৎসা না দিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়েছে, তাদের ওপর ‘নজর’ রাখা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে এদের বিরুদ্ধে ‘ব্যবস্থা নিতে’ সরকার পিছপা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা লক্ষ করছি, কিছু কিছু প্রাইভেট হাসপাতালে কাজ কম হচ্ছে। ক্লিনিক ও চেম্বারগুলো অনেকাংশে বন্ধ আছে। আমরা এ বিষয়গুলো বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানতে পারছি, আমরাও নিজেরা দেখতে পারছি।’
এ সময়ে এসব প্রতিষ্ঠানের পিছপা হওয়াটা যুক্তিসংগত নয় উল্লেখ করে জাহিদ মালেক মানবিকতার খাতিরে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মানুষকে সেবা দেওয়ার আহ্বান জানান।
‘আমরা কিন্তু এটা লক্ষ করছি। পরবর্তীকালে এ বিষয়ে আমরা যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেব, পিছপা হবো না,’ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন মন্ত্রী।
আজ শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) করোনাভাইরাস-সংক্রান্ত অনলাইন ব্রিফিংয়ের সময় অন্য অনেক বিষয়ের মধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এই বিষয়টিও উল্লেখ করেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য এমন একটি সময়ে এলো, যখন বিভিন্নভাবেই গণমাধ্যমে খবর আসছে যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নন এমন রোগীরাও বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক বা চেম্বারগুলোতে চিকিৎসা পাচ্ছ্নে না। পাঁচ-ছয়টি হাসপাতালে গিয়েও চিকিৎসা না পেয়ে বিনা চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর খবর এসেছে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনেও। স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর এ ধরনের আচরণকে অমানবিক উল্লেখ করে অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনাও করছেন।
আজকের ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক করোনাভাইরাস নিয়ে সচেতনতার জন্য গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি বিভ্রান্তিমূলক, গুজব প্রচার এড়িয়ে চলার জন্যও আহ্বান জানান।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া বড় বড় বেশ কয়েকটি হাসপাতালে করোনো চিকিৎসায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যেসব রোগীর হাঁচি-কাশি আছে, তাঁরা নির্দিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসা নেবেন। আমাদের ওই সব হাসপাতালে সব ধরনের ব্যবস্থা আছে। এ ছাড়া সেসব হাসপাতালে ভেন্টিলেটর লাগানো আছে এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র লাগানো আছে। আমাদের জেলা শহরগুলোতে অ্যাম্বুলেন্স আছে, যাতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীকে আনা-নেওয়া করা হবে।’
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির আপডেট দিতে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত পজিটিভ নতুন পাঁচটি রোগী পেয়েছি। এখন পর্যন্ত মোট পজিটিভ রোগী ৬১ জন। তবে ভালো খবর, কেউ মারা যায়নি।’
প্রধানমন্ত্রী যে কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করেছেন, তা মেনে চলার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, ‘আপনারা অযথা ঘোরাফেরা করবেন না। যখন বাজারে যাবেন, তখন ভালো দূরত্ব বজায় রেখে চলবেন। জটলা কোথাও পাকাবেন না। কারণ, জটল পাকালেই সংক্রমণ বেড়ে যায়।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘আপনারা যখন বাইরে যাবেন, মাস্ক পরে বাইরে অবশ্যই যাবেন। এটা আমাদের জন্য ভালো হবে এবং এটা পৃথিবীতে সবাই পড়ছে। এটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন।’
দেশে যথেষ্ট ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম (পিপিই) রয়েছে উল্লেখ করে জাহিদ মালেক বলেন, ‘অনেক হাসপাতালে পিপিই দিয়েছি এবং সব সময় পিপিই আমরা পেয়ে যাচ্ছি।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখন প্রায় ১৪-১৫টি জায়গায় করোনাভাইরাসের পরীক্ষা শুরু করেছি। আরো বেশ কয়েকটি জায়গায় শুরু হবে। পরীক্ষা করাটা খুবই জরুরি। আমরা আশা করি, সবাই পরীক্ষা করার জন্য আসবেন। পরীক্ষা করলে আপনি নিজেও নিরাপদ থাকবেন, আপনার অবস্থান জানবেন এবং আপনার পরিবারের সদস্যদের নিরাপদে রাখতে পারবেন।’
‘এ ছাড়া পরীক্ষা করাতে সামাজিকভাবে কোনো বাধা নেই, কোনো দোষ নেই। পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা করোনাভাইরাসকে নির্মূল করতে পারবো। যাঁরা পরীক্ষার কাজে জড়িত আছেন, তাঁরা পরীক্ষা বেশি বেশি করে করেন। আমাদের কিটসের আপাতত কোনো সংকট নেই। আমরা পরীক্ষার মাধ্যমে জানতে পারব কতজন ব্যক্তি সামাজিকভাবে সংক্রমিত হয়েছেন।’
করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ডাক্তার আর নার্সরাই সৈনিক বলেও উল্লেখ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
এ সময় গণমাধ্যমের উদ্দেশে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা ভালো কাজ করছেন। আপনাদের প্রচারের মাধ্যমে আমরা জানতে পারছি, দেশের আনাচে-কানাচে রোগীদের কীভাবে চিকিৎসা হচ্ছে। এ ছাড়া আবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে আমরা দেখতে পাই, বিভিন্ন রকমের প্রচার-প্রচারণা। অনেক রকম ভুয়া সংবাদ দেওয়া হচ্ছে। তাতে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। যাঁরা এ কাজটি করছেন, ঠিক করছেন না। দেশের মানুষকে বিভ্রান্তি করছেন এবং আমাদের কাজকে বাধা সৃষ্টি করছেন। সরকার এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৫১৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচজনকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত ২২ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন, সাতজন রোগী বাসায় বসে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং মারা গেছেন ছয়জন।
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ার কথা জানায়। এরপর ১৮ মার্চ কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে প্রথম ব্যক্তির মৃত্যুর কথা জানায় বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা বিভাগ।
২৫ মার্চ প্রথমবারের মতো সংস্থাটি জানায়, বাংলাদেশে সীমিত আকারে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বা সামাজিকভাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হচ্ছে।
এদিকে, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মিছিল দিন দিন আরো দীর্ঘ হচ্ছে। আজ শুক্রবার পর্যন্ত বিশ্বে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার ২৭১ জনে।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীন থেকে উৎপত্তি হওয়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২০৪টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে।
গত ১১ মার্চ করোনাভাইরাস সংকটকে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।