চিরনিদ্রায় কিশোরগঞ্জের ভাষাসৈনিক অধ্যক্ষ শামসুল হুদা

Looks like you've blocked notifications!
কিশোরগঞ্জের মহান ভাষাসৈনিক, শিক্ষাবিদ ও গুরুদয়াল সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আ ফ ম শামসুল হুদা। ফাইল ছবি : এনটিভি

কিশোরগঞ্জে মহান ভাষাসৈনিক, শিক্ষাবিদ ও গুরুদয়াল সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আ ফ ম শামসুল হুদার জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে এশার নামাজের পর জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার জয়কা ইউনিয়নের নানশ্রী বাজার ঈদগাহ মাঠে দ্বিতীয় দফা জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়। এর আগে গতকাল আসরের নামাজের পর জেলা শহরের শহীদী মসজিদ প্রাঙ্গণে মরহুমের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

মরহুম আ ফ ম শামসুল হুদার বড় ছেলে বিশিষ্ট আইনজীবী ও কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জালাল মোহাম্মদ গাউস জানান, তাঁর বাবা গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে করিমগঞ্জ রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। বার্ধক্যজনিত কারণে বিভিন্ন অসুস্থতায় শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে গত ২৬ সেপ্টেম্বর তাঁকে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়। ভাষাসৈনিক ও শিক্ষাবিদ সাবেক অধ্যক্ষ আ ফ ম শামসুল হুদা স্ত্রী, চার ছেলে, এক মেয়ে ও নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

১৯২৯ সালে আ ফ ম শামসুল হুদার জন্ম হয়। ১৯৫২ সালে গুরুদয়াল সরকারি কলেজের ছাত্র সংসদের নির্বাচিত এজিএস থাকাবস্থায় তিনি ভাষা আন্দোলনের শুরুতেই সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাবস্থায় তিনি পাকিস্তান সরকারবিরোধী বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং পুলিশের লাঠিপেটায় আহত হওয়াসহ নির্যাতনের শিকার হন।

১৯৫৫ সালে প্রথমে শ্রীকাইল কলেজে দর্শনশাস্ত্রের প্রভাষক হিসেবে চাকরিজীবন শুরু করেন আ ফ ম শামসুল হুদা। তারপর ১৯৫৬ সালে কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল সরকারি কলেজে যোগ দেন এবং টানা ৩৪ বছর অধ্যাপনা শেষে অধ্যক্ষ হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। গুরুদয়াল কলেজের ছাত্র হিসেবে তিনিই প্রথম ওই কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালনের গৌরব অর্জন করেন।

আ ফ ম শামসুল হুদা জীবদ্দশায় বর্তমানে নিয়ম না মেনে যেভাবে বাংলা ভাষার ব্যবহার, বিশেষ করে কয়েকটি এফএম রেডিও এবং সিনেমা-টেলিভিশনে বাংলা ভাষার ভুল ও বিকৃত উচ্চারণের অপচর্চা দেখে খুব কষ্ট পেতেন। তা ছাড়া স্বাধীনতার এত বছর পরও আইন-আদালতসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার নিয়ে নিজের মর্মপীড়ার কথা বলে গেছেন। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠা করা এমন একটি ভাষার এই দুরবস্থায় তিনি মোটেও সন্তুষ্ট নন বলে কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বলতেন। এ ছাড়া ভাষাসৈনিকদেরও যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি বলে তিনি দুঃখ করতেন।