চীনের ‘ব্ল্যাক রাইস’ আবাদ হচ্ছে সৈয়দপুরে
চীনের ‘ব্ল্যাক রাইস’ বা ‘কালো চাল’ নীলফামারীর সৈয়দপুরে পরীক্ষামূলকভাবে আবাদ করছেন এক ব্যক্তি। উপজেলার শফিকুল ইসলাম বাবু নামের এক কৃষক এই চালের চাষ করছেন।
২২ শতাংশ জমিতে লাগানো এই ধান কাটা হবে ১৫ দিন পর। ফলন, দাম ছাড়াও বাজারজাতের ওপর ভিত্তি করে আগামীতে আবাদ সম্প্রসারণের চিন্তা করছেন এই কৃষক।
সরেজমিনে সৈয়দপুর শহরের নিয়ামতপুর দেওয়ানীপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সাত একর জমিতে আমন আবাদ করেছেন তিনি। পাশাপাশি ২২ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে কালো চালের জন্য এই জাত আবাদ করেছেন তিনি। অন্য ধানক্ষেতের মতো এই ধানের চারাও সবুজ। তবে শীষের রং কালো।
কৃষক শফিকুল ইসলাম জানান, পরিচিত এক ব্যক্তির পরামর্শে পরীক্ষামূলকভাবে বগুড়া থেকে ৫০০ গ্রাম বীজধান এনে চারা করে রোপণ করা হয়েছে। খরচ কম, কীটনাশক দিতে হয়নি তেমন। আশা করছেন ভালো ফলন হবে। এই বীজধান এক হাজার টাকা কেজিতে বিক্রি হয়।
কৃষক শফিকুল বলেন, ‘এবারের ধান কেটে এগুলো বীজের জন্য সংরক্ষণ করা হবে এবং তা বিক্রি করা হবে। এবারের ফলন, দাম এবং বাজারের ওপর নির্ভর করছে পরবর্তী সময়ে আবাদ সম্প্রসারণের বিষয়টি।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বড় বড় শহরের সুপার শপগুলোতে ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়ার রেকর্ড রয়েছে।
দেওয়ানীপাড়া এলাকার কৃষক মাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথম বারের মতো ব্ল্যাক রাইস আবাদ করে সাড়া ফেলেছেন কৃষক শফিকুল। আলোচনায় এসেছেন তিনি। আগামীতে আমারও পরিকল্পনা রয়েছে এই ধান আবাদ করার। যেহেতু দামি, পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এবং চাহিদা ব্যাপক সে কারণে আবাদ করব।’
এলাকার আরেক কৃষক মজনু বলেন, ‘আমাদের চিন্তায় আসেনি এ রকম জাতের ধান আছে, কিন্তু শফিকুল ভাই আবাদ করে দেখিয়েছেন। তিনি অবশ্য ফসল নিয়ে নানাভাবে ভাবেন এবং বিভিন্ন গবেষণার মতো কাজ করে থাকেন।’
এর ফসল যদি সব এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া যায় তাহলে কৃষকরা বিশেষভাবে লাভবান হবেন। এ ক্ষেত্রে কৃষি বিভাগকে এগিয়ে আসতে হবে।
ওই এলাকার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অনিমেষ মজুমদার জানান, আমন আবাদে যে সময় লাগবে একই সময় লাগবে ব্ল্যাক রাইস কাটতে। কৃষক শফিকুল যে আগ্রহ নিয়ে আবাদ করছেন সফলকাম হবেন তিনি। মাঠ পর্যায়ে তাকে কৃষি বিভাগের প্রয়োজনীয় সহায়তা করা হচ্ছে।
বিবিসি ব্ল্যাক রাইস নিয়ে তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, প্রাচীন চীনে এই কালো চালের পরিচিতি ছিল নিষিদ্ধ। এর কারণ হিসেবে বলা হয়ে থাকে যে এটি দীর্ঘায়ু ও কামোদ্দীপক হিসেবে ভূমিকা রাখে। এ বিশেষ গুণের জন্য এটি সম্রাট ও তার পরিষদের লোকজন ছাড়া সর্বসাধারণের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। সেখানে পাহাড় এলাকাগুলোতে শুধু রাজা ও রাজন্যবর্গের জন্য এ ধরনের চাল গোপণে চাষ করা হতো। আবার কেউ কেউ বলে থাকেন, তখন শুধু রাজপরিবারের মেয়েদের গোপনে এ চালের ভাত খাওয়ানো হতো বলে এটি নিষিদ্ধ চাল হিসেবে ঐতিহাসিক গল্পগাঁথায় উঠে আসে।
জানতে চাইলে সৈয়দপুর উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মমতা সাহা বলেন, ‘অত্যন্ত পুষ্টি গুণ সমৃদ্ধ ধানের জাত হচ্ছে ব্ল্যাক রাইস। সচরাচর এজাতের ধান আবাদ হচ্ছে না। প্রকল্প হিসেবে কৃষক শফিকুল অল্প কিছু জমিতে আবাদ করেছেন। আমরা তার ক্ষেত পরিদর্শন করেছি। ভালো ফলন হয়েছে। বিঘাপ্রতি ১৩ মণ পর্যন্ত ফলন হয়ে থাকে এই জাতের ধান।‘ তিনি আরও বলেন, ‘বিশেষ করে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস রোগ নির্মূলে এই চাল বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আমরা তাকে প্রয়োজনীয় সহযোগীতা করছি।’ তিনি বলেন, এই চাল দিয়ে পায়েস, খিচুরি, ঘি ভাত, পাস্তা, পাঁপড়, নুডলস করেও খাওয়া যায়।
জানা গেছে, কৃষি অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক ও ধান গবেষক ড. মেহেদি মাসুদ বাংলাদেশে এই জাতের ধান আবাদের জন্য নিয়ে আসেন।
থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, ভারত, জাপান, চীন ও ভিয়েতনাম থেকে সংগ্রহ করা ব্ল্যাক রাইস এখন চাষ হচ্ছে বাংলাদেশে।
কুমিল্লা, নওগাঁ, চট্টগ্রাম ও ঠাকুরগাঁওসহ কয়েকটি জেলায় আবাদ শুরু হয়েছে এই জাতের ধানের।