চোখ দিয়েও প্রবেশ করতে পারে করোনা, রক্ষা পাবেন যেভাবে
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী। আজ শুক্রবার সম্প্রীতি বাংলাদেশ ফেসবুক পেজে দেওয়া একটি ভিডিওর মাধ্যমে এ পরামর্শ দেন তিনি।
একাত্তরে শহীদ ডা. আলীম চৌধুরীর ছোট মেয়ে ডা. নুজহাত চৌধুরী বলেন, ‘একটি ভাইরাস নিজে নিজে ছড়ায় না অথবা নিজে নিজে সংখ্যায় বাড়তেও পারে না। তার একটি বাহক দরকার হয়। আমাদেরই দেহের কোনো কোষের ভেতরে ঢুকে তারপর সে সংখ্যা বৃদ্ধি করে। সুতরাং আমি-আপনি যদি সচেতন হই, আমার হাত দিয়ে যদি মুখ, নাক, চোখ না ধরি অথবা আমরা একজন আরেকজন থেকে যদি দূরত্ব বজায় রাখি, তাহলে যিনি রোগাক্রান্ত ব্যক্তি, তার থেকে ভাইরাসটি আমার কাছে আসার কোনো উপায় নেই। অথবা আপনার কাছে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। এই জিনিসটি আমাদের সম্যকভাবে বুঝতে হবে।’
এ সময় সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে ডা. নুজহাত চৌধুরী বলেন, ‘একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ হিসেবে আমি অনুরোধ করতে চাই, শুধু এই সময় না, কখনই আসলে চোখে হাত দেওয়া উচিত না। আমাদের অভ্যাস আছে বারবার চোখে হাত দেওয়া, পানি মোছা, চোখটা পরিষ্কার করা। আপনার যদি চোখ পরিষ্কার করার প্রয়োজন হয়, আপনি হাতটা ভালোভাবে হাতটা নিয়মমাফিক সাবান দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধুয়ে নেবেন এবং তারপর আপনি চোখটা ধুয়ে নেন। শুধু শুধু যখন তখন চোখে হাত দেবেন না। এই হাতের মাধ্যমে আপনি চোখে করোনাভাইরাসকে ঢুকিয়ে দিতে পারেন। এবং চোখের ভেতর দিয়েও কিন্তু করোনাভাইরাস দেহে প্রবেশ করতে পারে। চক্ষু চিকিৎসক হিসেবে এই সতর্কবার্তাটা আপনাদের কাছে পৌঁছে দিতে চাই।’
টানা কয়েক দিন সরকার ঘরে থাকার জন্য অফিস-আদালত বন্ধ রাখার ঘোষণা দিলেও অধিকাংশ মানুষ গ্রামের পথে পাড়ি জমান। আবার বিদেশ থেকে এসেও যাঁরা হোম কোয়ারেন্টিনে না থেকে বাইরে বের হচ্ছেন, তাঁদের উদ্দেশে ডা. নুজহাত চৌধুরী বলেন, ‘আমরা খুব আতঙ্কের সঙ্গে খেয়াল করছি, আমরা এখনো জনসমাগম করছি, আমরা বাস ভর্তি করে দেশে যাচ্ছি, আমরা ট্রেন ভর্তি করে, জেটি ভর্তি করে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি। আমি খুবই শঙ্কিত এটা দেখে। আমরা দেখছি যে যাঁরা বিদেশ থেকে এসেছেন, তাঁরা হোম কোয়ারেন্টিন না করে ঘুরতে যাচ্ছেন, পরিবারের সঙ্গে মিশছেন। আমি যেটা বলতে চাই, আপনারা অসুস্থ নন, আমরা কেউ হয়তো অসুস্থ নই। আমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তিটি যে ভাইরাস ক্যারি (বহন) করছেন নীরবে, আমরা কিন্তু সেটা জানি না। কে যে ক্যারিয়ার, আমরা কিন্তু সেটা জানি না। সুতরাং আমরা সবাই ধরে নেব, আমরা এমনভাবে চলব, আমি যেন আরেকজনের ক্ষতির কারণ না হই। অথবা আরেকজনের থেকে যেন আমার কোনো ক্ষতি না হয়। সেইটুকু সোশ্যাল ডিসট্যান্স বা সামাজিক দূরত্ব এ সময় বজায় রাখতেই পারি।’
বিশ্বব্যাপী ক্রান্তিকালের কথা স্মরণ করে বাংলাদেশ অপথালমোলজি সোসাইটির বিনোদন সম্পাদক ডা. নুজহাত চৌধুরী বলেন, ‘এক একটা জাতির এক একটা ক্রান্তিকাল আসে। আমাদের এই ক্রান্তিকাল শুধু আমাদের জাতির নয়, সমগ্র বিশ্বের। এবং যে সমস্যাগুলো আমাদের সরকার ফেস করছে, সে সমস্যাগুলো কিন্তু বিশ্বের সর্বোত্তম দেশগুলোর, যাদের সর্বোত্তম স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তারাও কিন্তু ফেস করছে। সবারই কিন্তু পিপিইর সংকট আছে, সবারই ভেন্টিলেশনের সংকট আছে। সুতারাং আমরা কেন প্রতিরোধের কথা চিন্তা করব না। কেন আগেই বলতে থাকব এটা কেন নাই, সেটা কেন নাই। সেটার প্রয়োজন যেন না হয়। প্রয়োজন হবে আমরা জানি সেটারও দরকার আছে, অবশ্যই আছে এবং সেই ব্যবস্থা সরকারকেই করতে হবে। এবং তাদেরই দায়িত্ব। কিন্তু আমি-আপনি চলুন আমার আপনার দায়িত্বটা পালন করি।’
নিজেদের করণীয় নিয়ে একাডেমি অব অপথালমোলজির কোষাধ্যক্ষ ডা. নুজহাত বলেন, ‘তাহলে এই সংকটময় সময়ে আমাদের দায়িত্বটা কী? আমাদের দায়িত্ব আমাদের সকলের সামাজিক দূরত্ব মেইনটেইন করুন, যার যার বাসায় অবস্থান করুন। নিতান্ত কোনো প্রয়োজন ব্যতীত কাজ না থাকলে ঘরের বাইরে বের হবেন না। চলুন, আমরা আমাদের নিশ্বাস দিয়ে, আমাদের ছোঁয়া দিয়ে আমাদের আপনজনের ক্ষতির কারণ না হই।’
ডা. নুজহাত চৌধুরী একাত্তরের শহীদ ডা. আলীম চৌধুরী এবং শিক্ষাবিদ ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট শ্যামলী নাসরিন চৌধুরীর মেয়ে। ডা. নুজহাত ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং প্রজন্ম একাত্তরের প্রতিষ্ঠাতা সাংস্কৃতিক সম্পাদক।