ছবি তোলায় গণমাধ্যমের ওপর চটলেন পাপিয়ার আইনজীবী

Looks like you've blocked notifications!
র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়াকে সোমবার দুপুরে ঢাকার আদালতে তোলা হয়। ছবি : মোহাম্মদ ইব্রাহিম

জাল টাকা, বিদেশি মদ, অবৈধ অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ টাকাসহ গ্রেপ্তার নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়ার ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসায় এবং সাংবাদিকরা এভাবে ছবি তোলায় তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে বলে দাবি করেছেব পাপিয়ার আইনজীবী।

আজ সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ উর রহমানের আদালতে পাপিয়ার আইনজীবী আতিকুর রহমান রিমান্ডের শুনানির সময় এসব কথা বলেন।

আইনজীবী বলেন, ‘এভাবে ছবি তুলে একজন নারীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা হয়েছে। তিনি কোন হোটেলে রুম ভাড়া নিবেন সেটা তাঁর বিষয়, তাঁর আর্থিক সামর্থ্যের ওপর নির্ভর করে। এখানে যে নারীদের বিষয়ে বলা হচ্ছে, সেই নারীদের কেউ কি পাপিয়ার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেছেন? তাহলে কেন ছবি তুলে গণমাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে?’

পাপিয়ার আইনজীবীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তাপস কুমার পাল বলেন, ‘আপনি তাহলে গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে মামলা করেন। অপরাধ করলে ছবি তোলা যাবে না?’

এরপর আদালতে দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে হট্রগোল শুরু হয়। পরে বিচারকের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হলে পুনরায় শুনানি শুরু করেন আইনজীবীরা।

পরে আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) মাহমুদুর রহমান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পুলিশ শামিমাসহ চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। শুনানি শেষে আদালত প্রত্যেকের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রিমান্ডপ্রাপ্তরা হলেন পাপিয়া (২৮), তাঁর স্বামী মফিজুর রহমান (৩৮), মফিজুরের ব্যক্তিগত সহকারী সাব্বির খন্দকার (২৯) ও পাপিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী শেখ তায়্যিবা (২২)।

গত শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে নয়াদিল্লি যাওয়ার সময় বহির্গমন গেট থেকে পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান (৩৮) ও ব্যক্তিগত সহকারী সাব্বির খন্দকারকে (২৯) গ্রেপ্তার করা হয়। এর পরে তাঁদের তথ্যমতে, হোটেল ওয়েস্টিন থেকে পাপিয়া ও তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী শেখ তায়্যিবাকে (২২) গ্রেপ্তার করা হয়।

এ বিষয়ে র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল শনিবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে জানান, হোটেল ওয়েস্টিনের ২১ তলার প্রেসিডেন্ট কক্ষটি গত নভেম্বরে ভাড়া নেন পাপিয়া। তিনি গত তিন মাসে ওই কক্ষের ভাড়া পরিশোধ করেছেন প্রায় ৮৮ লাখ টাকা। ১৯ তলায় একটি বার রয়েছে, যেটি তিনি পুরোটাই বুক করে নিতেন। সেখানে প্রতিদিন তিনি আড়াই লাখ টাকা মদের বিল পরিশোধ করতেন। সব মিলিয়ে দেখা যায়, গত তিন মাসে তিনি প্রায় তিন কোটি টাকা বিল পরিশোধ করেছেন হোটেল কর্তৃপক্ষকে।

র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক বলেন, “পাপিয়ার আয়কর ফাইল তলব করে দেখা গেছে, সেখানে তিনি বছরে ২২ লাখ টাকা আয় দেখিয়েছেন। অথচ তাঁর প্রতিদিন বারের বিলই আসে আড়াই লাখ টাকা। এত টাকার উৎস কোথায়? জানতে চাইলে পাপিয়া র‌্যাবকে জানিয়েছেন, যাঁরা হোটেলে আসতেন, তাঁদের কাছে মেয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হতো। এরপর অশ্লীল ভিডিও তুলে ওই সব ব্যক্তির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা হতো। লোকলজ্জার ভয়ে কেউ মুখ খুলত না। এ রকম সাতজন উঠতি বয়সী তরুণীর সঙ্গে র‌্যাবের কথা বলা সম্ভব হয়েছে। যাঁদের মাসে ৩০ হাজার টাকা করে দিতেন পাপিয়া। বিনিময়ে তাঁদের ব্যবহার করা হতো। কেউ রাজি না হলে তাঁদের লাঠি দিয়ে পেটাতেন পাপিয়া। আবার কোনো কোনো মেয়ের আপত্তিকর ছবি ‘বড়লোক কাস্টমারদের’ মুঠোফোনে পাঠিয়ে দিয়ে আগ্রহ তৈরি করতেন। এরপর ওই লোকগুলো এলে তাঁদের জিম্মি করা হতো।”

শাফী উল্লাহ বুলবুল আরো বলেন, “পাপিয়া পেশায় একজন ব্যবসায়ী। তেজগাঁও এফডিসি গেটসংলগ্ন এলাকায় অংশীদারত্বে তাঁর একটি ‘কার এক্সচেঞ্জ’ নামক গাড়ির শোরুম আছে। এ ছাড়া নরসিংদী জেলায় তাঁর ‘কেএমসি কার ওয়াশ অ্যান্ড অটো সলিউশন’ নামে একটি গাড়ি সার্ভিসিং সেন্টার আছে। এসব ব্যবসার আড়ালে তিনি অবৈধ অস্ত্র, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তিনি সমাজসেবার নামে নরসিংদী এলাকায় অসহায় নারীদের আর্থিক সহযোগিতার নামে তাঁদের অনৈতিক কাজে লিপ্ত করতেন। বছরের অধিকাংশ সময় তিনি নরসিংদী ও রাজধানীর বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থান করেন। নরসিংদী এলাকায় চাঁদাবাজির জন্য তাঁর একটি ক্যাডার বাহিনী আছে। এ ছাড়া তাঁর স্বামীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় অবৈধ অস্ত্র, মাদক ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে স্বল্প সময়ের মধ্যে তিনি নরসিংদী ও ঢাকায় একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লটসহ বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিক হয়েছেন। গ্রেপ্তারের সময় তাঁদের কাছ থেকে জাল টাকা, ডলারসহ প্রায় সাড়ে ৯ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।’

পরদিন রোববার দুপুরে পাপিয়ার ফার্মগেটের বাসা থেকে অস্ত্র, মদসহ বিপুল অবৈধ টাকা উদ্ধার করে র‍্যাব। পরে বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে
এক সংবাদ সম্মেলনে লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেন, ‘আজ দুপুরে রাজধানীর ফার্মগেটে পাপিয়ার বাসায় অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি পিস্তলের ম্যাগাজিন, ২০টি পিস্তলের গুলি, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ ও নগদ ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।’

 সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘রাজধানীর গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিনে প্রেসিডেন্ট স্যুট নিজের নামে সব সময় বুক করে নানা ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছিলেন পাপিয়া। যিনি হোটেলটির বারে বিলবাবদ প্রতিদিন পরিশোধ করতেন আড়াই লাখ টাকা। এ ছাড়া নারীদের দিয়ে অবৈধ কাজ করাতেন। যাদের মাসিক আট হাজার থেকে  ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত দেওয়া হতো। এ ছাড়া পাপিয়ার কথা কেউ না শুনলে তাদের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে নির্যাতন করা হতো।’