ছাত্রীকে যৌন হয়রানি, রেজিস্ট্রারের গ্রেপ্তার দাবি ছাত্র সংসদের
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে পদ হারিয়েছেন গণবিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. দেলোয়ার হোসেন। এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে ২৬ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের অশ্লীল ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির জরুরি বৈঠক ডেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় তাঁকে।
তবে রেজিস্ট্রার পদ থেকে দেলোয়ার হোসেনের এই অব্যাহতিকে লোক দেখানো এবং ভয়ানক অপরাধ থেকে তাঁকে রক্ষার চেষ্টা বলে মন্তব্য করেছে গণবিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ।
গণবিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) ভাষা-যোগাযোগ ও সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্র জুয়েল রানা বলেছেন, এমন গুরুতর অভিযোগের শাস্তি হিসেবে কেবল অব্যাহতি দেওয়া যথেষ্ট নয়। প্রয়োজনে বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে তাঁর অপকর্মের শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে।
অন্যদিকে, অবিলম্বে দেলোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার করে তাঁর সব অনৈতিক আচরণ, দুর্নীতি ও ছাত্রীদের সঙ্গে যৌন নিপীড়নের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) মো. নজরুল ইসলাম রলিফ।
বিচার দাবিতে এরই মধ্যে শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপ খুলে অনলাইনে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন।
ছাত্র সংসদের জিএস মো. নজরুল ইসলাম রলিফ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পরপরই কুখ্যাত যৌন নিপীড়ক দেলোয়ার হোসেনের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’
দেলোয়ার হোসেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছেন। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর আস্থাভাজন হিসেবে পরবর্তী সময়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার পদে আসেন।
শুরু থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে অফিসকক্ষে যৌন নিপীড়নের চেষ্টাসহ নানা অভিযোগ এলেও তা ধামাচাপা দেওয়া হয়।
২০১৭ সালেও গণবিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) যৌন নিপীড়ন-সংক্রান্ত একটি অভিযোগ দাখিল করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তখন তদন্ত কমিটি গঠন করে অভিযোগের বিষয়ে রেজিস্ট্রারের কাছে জবাব চাওয়া হয়। কিন্তু তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি বলে জানায় ইউজিসি।
এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক নারী শিক্ষক রেজিস্ট্রার দ্বারা নানাভাবে হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ করলেও পরবর্তী সময়ে তাঁরা কোনো প্রতিকার পাননি।
সম্প্রতি দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে এক ছাত্রীর অশ্লীল ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। ২৬ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের ফোনালাপে ওই শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন ধরনের অশ্লীল কথাবার্তা বলেন এবং অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দেন রেজিস্ট্রার। ফোনালাপ ফাঁসের পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ট্রাস্টি বোর্ডের সব সদস্যের সম্মতিক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার পদ থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
ঢাকার ধানমণ্ডি গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের মেজর এ টি এম হায়দার বীরউত্তম মিলনায়তনে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় জরুরি বৈঠকে বসেন গণবিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা।
ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় অন্য সদস্যদের মধ্যে অধ্যাপক ড. আমিরুল ইসলাম চৌধুরীসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গণবিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ জনসংযোগ কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা।
দেলোয়ার হোসেনকে ক্যাশ ভাউচার, আর্থিক যেকোনো অনুমোদন, ব্যাংক চেকে স্বাক্ষরসহ সব অফিশিয়াল কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা হয়। নতুন চেক স্বাক্ষরকারী নির্ধারণ করা হয় উপাচার্য ডা. লায়লা বানু ও অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফিন্যান্সের ডেপুটি ডিরেক্টর মো. আবদুল কাদেরকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) ড. লায়লা পারভীন বানু শিক্ষার্থীর সঙ্গে ফাঁস হওয়া অশ্লীল কথোপকথনের বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য না করে জানান, ট্রাস্টি বোর্ড দেলোয়ার হোসেনকে রেজিস্ট্রার পদে রাখার জন্য আর উপযুক্ত মনে করছে না। ফলে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
২০ বছর আগে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগ দেন দেলোয়ার হোসেন। পরে চাকরির ধারাবাহিকতায় যোগ দেন গণবিশ্ববিদ্যালয়ে। নিরাপত্তাপ্রধানের দায়িত্ব থেকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উচ্চতর প্রশাসনিক পদে, বিশেষ করে পরিচালক (প্রশাসন) ও নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্বও পালন করেন তিনি।
গণবিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে জালিয়াতির মাধ্যমে জমি জবরদখলের অভিযোগে বেশ কিছু মামলার আসামি হন দেলোয়ার হোসেন।
স্থানীয় সূত্র বলছে, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে থাকাকালীনও নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন দেলোয়ার হোসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে বিলাসবহুল একটি বাগানবাড়ি তৈরি করে সেখানে তিনি অনেককে আমন্ত্রণ করে নিয়ে যেতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তাঁর অধীনে কর্মরত অনেক নারীই নিগৃহীত হয়েছেন। তাঁদের অনেকেই চাকরি হারানো ও সামাজিকতার ভয়ে অভিযোগ না দিয়ে বরং গণবিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে গেছেন অন্যত্র।
এ বিষয়ে জানতে সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরবর্তী সময়ে প্রতিক্রিয়া জানতে মুঠোফোনে খুদেবার্তা পাঠালেও কোনো উত্তর দেননি তিনি।