ছেলের পর করোনায় আক্রান্ত সাবেক মেয়র মহিউদ্দিনের স্ত্রী
নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন। তিনি চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) ২৪৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় যে ৩১টি পজিটিভ হয়েছে, সেখানে হাসিনা মহিউদ্দিন ও তাঁর দুই গৃহকর্মীর নাম রয়েছে।
এর আগে গত ১০ মে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছোট ছেলে বোরহানুল হাসান সালেহিনের করোনা শনাক্ত হয়। তিনি বর্তমানে নাসিরাবাদ এলাকার মেয়রগলির বাসায় আইসোলেশনে আছেন।
বিআইটিআইডি ল্যাব ইনচার্জ ডা. শাকিল আহমেদ জানান, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের ছোট ভাইয়ের করোনা শনাক্ত হওয়ার পর পরিবারের সদস্যদের নমুনা পরীক্ষার পর তাঁদের মাসহ তিনজনের রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
এদিকে, ছোট ভাইয়ের করোনা শনাক্তের পর শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ঢাকার বাসা থেকে পরিবারের সদস্য, ব্যক্তিগত সহকারী ও গাড়িচালকের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার পর তাঁদের ফল গত রাতে নেগেটিভ আসে।
পরিবারের সদস্যের মধ্যে মা ও ছোট ভাই করোনায় আক্রান্ত হওয়া নিয়ে সমাজে অতিমাত্রায় আলোচনা ও শঙ্কিত না হতে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এক বার্তায় বলেন, ‘কোভিড-১৯-এ বাংলাদেশে অনেকের সংক্রমণ হয়েছে। আমার আপনার আশপাশে বন্ধু-বান্ধব অনেকেরই হয়েছে, হবে। ইচ্ছে করে কেউ কোভিড-১৯-এ সংক্রমিত হয় না। এটি যে কারো হতে পারে। আমাদের পরিবারের বেশির ভাগ সদস্য দেশের আর দশজনের মতোই নির্দেশনা মেনে ঘরেই ছিলেন। আমার ভাইয়ের কিছুদিন আগে সন্তান জন্ম হয়েছে, তাকে অনেক জায়গায় যাওয়া-আসা করতে হয়েছে। কিন্তু সন্তানের নিরাপত্তার কথা ভেবে, আত্মীয়দের নিরুৎসাহিত করে আমরা কারো সঙ্গে নবজাতকের দেখাও করতে দিইনি। জীবনের অনেক প্রয়োজনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে গিয়েও অনেকে সংক্রমিত হয়েছেন। আমাদের পরিবারও দেশের সাধারণ মানুষের বাইরে নয়। সুতরাং আমাদের যে কারো হতে পারে। নানা সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকার পরও আমরা জানি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীরও হয়েছে, তাঁদের দেশের যুবরাজেরও হয়েছে, রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রীরও হয়েছে, আরো অনেক মানুষের হয়েছে। ধনী-গরিব, ধর্ম-বর্ণ কেউ বিশেষ আনুকূল্য পাচ্ছেন না। সুতরাং এই কোভিড-১৯ নিয়েই আমাদের বেঁচে থাকতে হবে। এ সংক্রমণে আমরা শঙ্কিত যেন না হই।’
শিক্ষা উপমন্ত্রী আরো বলেন, ‘কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সংক্রমিতদের প্রতি আমাদের মানবিক হতে আর সংক্রমণ হলে মনে সাহস রাখতে। তাই আমরা সচেতন থাকব, শঙ্কিত হব না, মনে সাহস রাখব। হায়াত-মউত সবই আল্লাহর হাতে। এ কোভিড-১৯ কোথাও হঠাৎ উধাও হয়ে যাবে না। এটি থাকবে, আরো অনেক দিন থাকবে, সংক্রমণের হার কমবে, বাড়বে। এর মধ্যেই আমাদের বেঁচে থাকতে হবে। সবাই দোয়া করবেন, আমরা যেন এ মহামারির হাত থেকে রক্ষা পাই। যাঁদের পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে, তাঁরা যাতে সুস্থ হন, আমাদের পরিবার নয় শুধু, সমগ্র দেশের সবার জন্য দোয়া করবেন। মানুষের জীবিকা ও জীবন দুটোই যেন রক্ষা পায়, আর এ বাংলাদেশ যেন এগিয়ে যায়।’
জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি জানান, সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার বিআইটিআইডিতে ২৪৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। সেখানে ৩১টি পজিটিভ আসে। ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭০টি নমুনা পরীক্ষার মধ্যে ২০টি পজিটিভ আসে। আর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১২২টি নমুনা পরীক্ষার মধ্যে ৫৪টি পজিটিভ আসে।