‘ছেলে ভুল করতে পারে, আপনি ক্ষমা করতে পারবেন না’
‘আপনি মুরব্বি মানুষ। ছেলে ভুল করতে পারে, আপনি ছেলেকে ক্ষমা করতে পারবেন না। একবার সুযোগ দিয়ে দেখুন।’
ছেলের বিরুদ্ধে নেশার টাকার জন্য বাবাকে মারধর করার মামলায় বাবার উদ্দেশে এসব কথা বলেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবদাস চন্দ্র অধিকারী। এরপর তিনি বাবা ও ছেলেকে মিলিয়ে দেন। আজ বৃহস্পতিবার মামলার শুনানির সময় এ ঘটনা ঘটে।
২০১৮ সালের ২৯ মে মো. আব্দুল গফুর (৭৫) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ছেলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলার পরে ছেলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। পরোয়ানার পরে একই বছরের ২৪ জুন ছেলে গ্রেপ্তার হলে কারাগারে পাঠান সিএমএম আদালত।
গ্রেপ্তারের চার দিন পর জামিন পায় ছেলে। এরপর মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক দেবদাস চন্দ্র অধিকারীর আদালতে পাঠানো হয়। এ আদালত গত বছর ১ জানুয়ারি ছেলে শেখ ফরিদ খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, বাদীর বড় ছেলে শেখ ফরিদ খান (৪৫) মা-বাবা ও ছোট ভাইকে ভরণপোষণ দেন না। ভরণপোষণ দাবি করলে সম্পত্তি লিখে দিতে বলেন। সরল বিশ্বাসে বাদী সম্পত্তি লিখে দেন। তারপর ভরণপোষণ দাবি করলে মারধর করেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১৭ মার্চ ভরণপোষণ চাইলে বড় ছেলে মামলার বাদী, তাঁর স্ত্রী ও মেয়েকে মারধর করেন। এ ছাড়া নেশার টাকার জন্য ভাঙচুর করেন ও নগদ ২০ হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে যান।
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। এদিন বাদী আব্দুল গফুর সাক্ষ্য দিতে হাজির হন। তিনি ছেলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য কাঠগড়ায় দাঁড়ালে বিচারক দেবদাস চন্দ্র অধিকারী তাঁদের মিলিয়ে দেন।
বিচারক তাদের মিলিয়ে দিতে চাইলে বাবা গফুর বলেন, ‘যে অপরাধ করেছে ক্ষমা করা যায় না।’
এ সময় বিচারক বলেন, ‘আমার অনুরোধে একবার ক্ষমা করে দেখেন, এক মাস দেখেন কী হয়। এরপর সংশোধন না হলে সাক্ষ্য দিয়েন।’
তখন বাদী হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লে বিচারক ছেলে ফরিদ খানকে আসামির কাঠগড়া থেকে নামিয়ে বাবার পা ধরে ক্ষমা চাইতে বলেন। ছেলেও অশ্রুশিক্ত চোখে বাবার পা জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চান।
এরপর বিচারক বলেন, ‘মামলায় আগামী তারিখ ৬ এপ্রিল সাক্ষ্য গ্রহণের জন্যই থাকবে। যদি ছেলে নিজেকে না শুধরায় তাবে সেদিন সাক্ষ্য হবে।’