ছয় দিন ধরে নিখোঁজ নেত্রকোনার দিনমজুর আব্দুল ওয়াহাব
নিখোঁজের ছয়দিনেও সন্ধান মেলেনি নেত্রকোনার আব্দুল ওয়াহাব (৪২) নামের এক দিনমজুরের। গত বুধবার মুন্সীগঞ্জ থেকে বাড়ি ফেরার পথে তিনি নিখোঁজ হন।
বাড়ি ফিরে না আসায় পরিবারের সদস্যদের দিন কাটছে দুশ্চিন্তায়। এ ঘটনায় নিখোঁজ ওয়াহাবের ছোট ভাই আবুল খায়ের নেত্রকোনা মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
আবুল খায়ের জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনা সদর উপজেলার শিবপ্রসাদপুর গ্রামে। দুই মাস ধরে তার ভাই ওয়াহাব মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলায় রাব্বি নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করছিলেন। গত বুধবার সন্ধ্যায় গৃহকর্তা রাব্বির মোবাইল ফোন থেকে তাঁর স্ত্রী আসমা আক্তারকে ফোন করে জানান তিনি বাড়ি আসছেন।
এরপর গত বৃহস্পতিবার ভোর ৬টার দিকে ০১৮৮৭-৪৪৪২৬৫ নম্বর মোবাইল ফোন থেকে তার স্ত্রী আসমা আক্তারের ফোনে কল আসে। অপরপ্রান্ত থেকে বলা হয় আব্দুল ওয়াহাব কারওয়ানবাজার এলাকায় অসুস্থ অবস্থায় পড়ে আছেন। ওই নম্বরে ১০ হাজার টাকা পাঠাতে বলা হয়।
আবুল খায়ের আরও জানান, ওয়াহাবের স্ত্রী ফোন পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে পাঁচ হাজার টাকা ওই নম্বরে পাঠিয়ে দেন। আরও টাকা পাঠাতে বলা হয়। পরে ওয়াহাবের স্ত্রী আরও এক হাজার এবং পরে আরও তিন হাজার ৫০০ টাকাসহ মোট নয় হাজার ৫০০ টাকা পাঠান। এতেও তাঁর সন্ধান না পাওয়ায় কারওয়ানবাজারে তার ভাগ্নে মাজহারুল ইসলামকে পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানে ওয়াহাবের কোনো সন্ধান না পেয়ে নেত্রকোনা মডেল থানায় জানানো হয়।
পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তি সহায়তায় জানতে পারে কারওয়ানবাজার থেকে শুরু করে নেত্রকোনার শিমুলকান্দি এলাকার টাওয়ারে অবস্থান করছে ওই নম্বরের মালিক।
আবুল খায়ের জানান, ওয়াহাব নিজে কোনো মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না। যে নম্বর থেকে টাকা চাওয়া হয়েছে সেটিও গত দু্দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে তিনি নেত্রকোনা মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে গেলে পুলিশ তা গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করে তাকে সর্বশেষ টাওয়ার শিমুলকান্দি পূর্বধলা থানায় অবস্থিত হওয়ায় সেখানে পাঠায়। পূর্বধলা থানায় যাওয়া হলে সেখান থেকে বলা হয় ঘটনাস্থল মুন্সীগঞ্জ অথবা কারওয়ানবাজারের আশপাশের থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে হবে।
পরে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী (স্থানীয় সংসদ সদস্য) আশরাফ আলী খান খসরুর সহায়তায় সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি পুলিশ গ্রহণ করতে বাধ্য হয়।
যোগাযোগ করা হলে নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার শাকের আহমেদ বলেন, ‘ঘটনাস্থলটি আমার থানা এলাকায় নয়, তারা জোরপূর্বক একটি জিডি করিয়েছে। আমার টিম এ ব্যাপারে কাজ করছে।’
জানতে চাইলে নেত্রকোনা জেলা পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী বলেন, ‘ভিকটিমকে উদ্ধারে পুলিশ চেষ্টা করছে। একটি সাধারণ ডায়েরি করা হলে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারবে। তিনি সাধারণ ডায়েরি মুন্সীগঞ্জে করার পরামর্শ দেন।’
নিখোঁজ আব্দুল ওয়াহাব এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের জনক। অপহরণের খবরে তার শাশুড়ি স্ট্রোক করে গত শনিবার মারা গেছেন। এ ঘটনার পর ওয়াহাবের পুরো পরিবার চরম উদ্বিগ্নতায় দিন কাটাচ্ছে।