ছয় স্বজনের লাশ পাবনায় দাফনের আকুতি

গত ১ এপ্রিল পাবনা শহরের দোহাপাড়ার মরহুম আবু মোসলেম উদ্দিনের স্ত্রী আলতাফুননেছার যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফেরার কথা ছিল। করোনার কারণে সেই ফ্লাইট বাতিল হয়ে ৭ এপ্রিল দেশে আসার দিন ঠিক হয়। কিন্তু তাঁর আর দেশে ফেরা হয়নি। গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ডালাস শহরের উপকণ্ঠের একটি বাড়ি থেকে আলতাফুননেছা, তাঁর মেয়ে, মেয়ের জামাই ও তিন নাতি-নাতনির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে সেখানকার পুলিশ।
পুলিশের ধারণা, আলতাফুননেছার দুই নাতি পরিবারের চার সদস্যকে হত্যার পর নিজেরা আত্মহত্যা করেছেন।
আর এ বিষয়টিই কোনোমতেই মেনে নিতে পারছেন না পাবনায় থাকা স্বজনরা। এ ঘটনায় নিহতদের পরিবারে চলছে শোক।
মঙ্গলবার সকালে এই খবর জানাজানি হলে নিস্তব্ধতা নেমে আসে পাবনা শহরের উপকণ্ঠ দোহারপাড়ার মানুষের মধ্যে। সকাল থেকেই নিহতদের স্বজন ও বন্ধুবান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশীরা বাড়িতে ভিড় জমায়। স্বজনরা কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছে না এই হৃদয়বিদারক ঘটনা। তবে নিহতদের পরিবার ও আত্মীয়দের সরকারের কাছে দাবি, তাঁদের লাশ যেন দেশে এনে দাফন করা হয়।

আলতাফুননেছার ছেলে আবুল কালাম আজাদ হিরক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ৩০ বছর ধরে স্বপ্নের দেশ আমেরিকাতে সপরিবারে বসবাস করেন তাঁর ভগ্নিপতি তৌহিদুর রহমান ওরফে স্যাম তৌহিদ (৫৩)। তিনি আমেরিকায় সিটি ব্যাংকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে চাকরি করতেন। তাঁর স্ত্রী আইরিন ইসলাম ওরফে নীলা তৌহিদ (৪৮) ও তাঁদের তিন সন্তান তানভীর তাওহীদ (২৩), ফারবিন তাওহীদ (২১) ও ফারহান তাওহীদকে (১৯) নিয়ে সুখ-শান্তিতে বসবাস করছিলেন।
নীলার বৃদ্ধা মা আলতাফুননেছাও তাঁদের সঙ্গে টেক্সাসে ছিলেন। তিনি মাঝেমধ্যেই আমেরিকা আসা-যাওয়া করতেন। তাঁর বড় ছেলে আতাউর রহমানও নিউইয়র্কে থাকেন। গত শুক্রবার রাতে পাবনায় তাঁর ছেলেদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয়। ১ এপ্রিল তাঁর পাবনায় ফেরার কথা। করোনার কারণে সেই ফ্লাইট বাতিল হয়ে ৭ এপ্রিল দেশে আসার দিন ঠিক হয়। কিন্তু দেশে ফেরার আগেই তাঁরা চিরদিনের জন্য চলে গেলেন।
আলতাফুননেছার বড় ছেলে আরিফুর রহমান আলিফের দাবি, তাঁর ভাগ্নেরা কোনোভাবেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারেন না। এর পেছনে অন্য কোনো ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। তাঁর ভাগ্নেরা কেউ মানসিক রোগী নন। তাঁরা ছিলেন প্রাণবন্ত। শুক্রবার রাতেও তাঁর মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। কোনো সমস্যা থাকলে মা তাঁদের জানাতেন।
নিহত আলতাফুননেছার ভাই আব্দুল হান্নান তালুকদার বলেন, আমরা তো আমাদের বোন ভাগ্নি ও নাতিদের ফিরে পাব না। আমরা চাই সরকার তাদের লাশগুলো যেন দেশে এনে দেয়। আমরা পাবনায় তাদের দাফন করতে চাই।
এদিকে হত্যা নাকি আত্মহত্যা, এটি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসের কমিউনিটিতেও নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে। আত্মীয়স্বজনরা জানিয়েছে, যে ছেলেরা নানি কখন খেয়েছে, ওষুধ খেয়েছে কি না—সব খবর রাখতেন তাঁরা কীভাবে হত্যা করতে পারেন। তা ছাড়া তাঁদের মানসিক ডিপ্রেসশনের কথাও কেউ জানত না।
গতকাল সোমবার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে ছয় বাংলাদেশির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পরিবারের দুই সন্তান অন্য সদস্যদের হত্যা করে নিজেরাও আত্মহত্যা করতে পারেন। তবে এখনো ঘটনার প্রকৃত কারণ জানা যায়নি। এ ঘটনায় কমিউনিটিতে চাঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে।
নিউইয়র্কে বসবাসকারী কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট ও পাবনার বাসিন্দা গোপাল সান্যাল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘মর্মান্তিক ঘটনাটির শিকার সবাই বাড়ি পাবনার দোহারপাড়ার বিখ্যাত হায়দার পরিবারের সদস্য। দোহারপাড়ার বিখ্যাত ব্যক্তি জিয়া হায়দার, রশিদ হায়দার ওনাদের আত্মীয়। এ ঘটনা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।’
এদিকে একাধিক সূত্র জানায়, সোমবার সপ্তাহের প্রথম কর্ম দিবসের শুরুতেই মর্মান্তিক হত্যাযজ্ঞের খবর পান টেক্সাসের এলেন শহরের বাসিন্দারা। এখানে গতকাল সোমবার ভোরে উদ্ধার করা হয় একই পরিবারের ছয় বাংলাদেশির মরদেহ।
নিহতদের স্বজনরা জানায়, তারা পুলিশের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন স্যাম তৌহিদের দুই ছেলে নিজেরা ঠিক করেছিলেন তাঁরা সুইসাইড করবেন এবং সেইসঙ্গে পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলবেন। সে অনুযায়ী তাঁরা হত্যাযজ্ঞ সম্পন্ন করে থাকতে পারেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত একটি সুইসাইট নোট রেখে গেছেন ১৯ বছর বয়সী ছোট ছেলে। যেখানে তিনি নিজেকে মানসিক বিকারগ্রস্ত বলে উল্লেখ করেছেন।