জনগণের পকেট কেটে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে : মির্জা ফখরুল
দুর্নীতি আর কুইক রেন্টালের ভর্তুকির টাকা জোগাতে জনগণের পকেট কেটে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। অবিলম্বে বিদ্যুৎ ও ওয়াসার পানির বর্ধিত দাম কমানোর দাবি জানিয়েছে দলটি। বিএনপি আয়োজিত মানববন্ধনে এমন দাবি করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সঠিক রিপোর্ট না দিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসকদের সরকার বাধ্য করেছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।
বিদ্যুৎ ও ওয়াসার পানির দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে বিএনপি। কর্মসূচিতে দলের নেতারা অভিযোগ করেন, দেশের সম্পদ লুট করে বিদেশে পাঠাচ্ছেন সরকারদলীয় নেতারা। নিত্যপণ্যের দামের পাশাপাশি দফায় দফায় বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির দাম বাড়িয়ে সরকার জনগণকে অসহায়ত্বের মধ্যে ফেলেছে বলে মন্তব্য করেন তারা। জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হওয়ায় জনগণের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতা নেই বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব।
বিএনপির চেয়ারপারসন গুরুতর অসুস্থ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন আদালতে মিথ্যা রিপোর্ট দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। নতজানু নীতির কারণে সরকার তিস্তার পানি ও রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে পারছে না বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব।
বিদ্যুৎ ও পানির মূল্যবৃদ্ধির প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বর্তমান সরকারের আমলে পানির দাম পাঁচবার বাড়ল। কিন্তু সে পানি মুখে দেওয়া যায় না, খাওয়া যায় না। বিদ্যুতের দাম বেড়েছে আটবার। কারণ, পাওয়ার প্ল্যান্টের নামে তারা যে লুট করেছে, তার ভর্তুকি দেওয়ার জন্য। আজ মানুষের পকেট কেটে তারা বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে।’
এ সময় মির্জা ফখরুল আরো বলেন, ‘যদি কোনো পাওয়ার প্ল্যান্ট বিদ্যুৎ সরবরাহ না করে, তবু তাদের ভর্তুকি দিতে হবে, এই হচ্ছে তাদের চুক্তি। গতকাল জানলাম, প্রতি বছর ৫১ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এই টাকা জনগণের বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে জনগণের পকেট থেকে নেওয়া হচ্ছে।’
কারাবন্দি খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। খালেদা জিয়ার সঠিক রিপোর্ট না দেওয়ার জন্য বিএসএমএমইউর চিকিৎকদের বাধ্য করেছে সরকার।’
বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, ‘গত ২৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার যে ব্লাড পরীক্ষা হয়েছে, সেখানে তাঁর ফাস্টিং সুগার হচ্ছে ১৪.৫, চিন্তা করা যায় না। ১৪.৫ যদি তাঁর নিয়মিত সুগার হয়, তাহলে সেটা তার হার্টে ইফেক্ট করতে পারে, কিডনিতে ইফেক্ট করতে পারে বা ফুসফুসে ইফেক্ট করতে পারে।’
বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, ‘এত কিছুর পরও দুর্ভাগ্য আমাদের, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, সাবেক পিজি হাসপাতালের চিকিৎসক, যাদের এ দেশের মানুষ শ্রদ্ধা করে, তাঁদের ওপর নির্ভর করে, আজ তাঁরা সত্য রিপোর্ট দিতে পারলেন না। এবং তাঁদের এ সরকার বাধ্য করেছে, সঠিক রিপোর্ট না দেওয়ার জন্য।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য যে, আজ দেশে বিচার বিভাগ, উচ্চ আদালত সঠিক বিচার করতে পারে না। কারণ, একটা একনায়কতান্ত্রিক দেশ চলছে, ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র চলছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আজ এই সরকার ব্যাংকিং সেক্টরকে ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশের অর্থনীতি, শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্য খাত ধ্বংস করেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বলতে কিছু নেই।’
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আজ দুই বছর হয়ে গেল, সরকার এ সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। আজ অনেকে বলে, সরকার ইচ্ছে করে এটাকে জিইয়ে রেখেছে। কারণ, এতে তাদের লাভ হয়। পশ্চিমা বিশ্ব থেকে সমর্থন পাওয়া যায়। আর যে সাহায্য-সহযোগিতা আসে, তার থেকে ভাগ-বাটোয়ারা পাওয়া যায়।’
মানববন্ধনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান ও সেলিমা রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি ও দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, শহিদুল ইসলাম বাবুল, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, কৃষক দলের সদস্য সচিব কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিনসহ বিএনপি এবং এর সহযোগী সংগঠনের বিপুল নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।