‘জাওয়াদ’ কেড়ে নিয়েছে মুন্সীগঞ্জের আলুচাষিদের মুখের হাসি

Looks like you've blocked notifications!
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে মুন্সীগঞ্জের চাষিদের ক্ষতিগ্রস্ত আলুক্ষেত। ছবি : এনটিভি

ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাব কেড়ে নিয়েছে মুন্সীগঞ্জের আলুচাষির মুখের হাসি। চাষিদের বুকে চাপা আর্তনাদ। দুই দিনের টানা বৃষ্টি নষ্ট করে দিয়েছে আবাদি আলুর জমি। গতবারের লোকসান পুষিয়ে নিতে নতুন আশায় আলু আবাদে জমিতে নামলেও শুরুতেই ভেঙেছে লাখো কৃষকের স্বপ্ন।

১৭ হাজার হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তবে ১১ হাজার হেক্টর জমিতে বৃষ্টির পানিতে আক্রান্ত হয়েছে।   বীজ ও চারা বাঁচাতে দ্রুত জমি থেকে পানি সরানোর পরামর্শ কৃষি দপ্তরের।

গত বছর মণপ্রতি আলুতে তিন থেকে ৪০০ টাকা লোকসান গুনেছে মুন্সীগঞ্জের চাষিরা। সেই লোকসান পুষিয়ে লাভের আশায় এ বছর দুই সপ্তাহ ধরে আলু আবাদ করছেন এখানকার চাষিরা। কারও জমিতে চারা জেগে উঠেছে, কেউবা মাত্র দুই চার দিন ধরে বীজ বপন করেছে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে টানা বৃষ্টির পানিতে তছনছ করে দিয়েছে সব কিছু। জেলার চল্লিশ শতাংশ জমিতে আলু আবাদ করা সম্পন্ন হয়ে গেছে, আর এসব আবাদ করতে চাষিরা একেকজন ধারদেনা করেছে লাখ লাখ টাকা। কিন্তু জমিতে বিনিয়োগ করা টাকা যেন পানিতে ভেসে যাচ্ছে সব। তাদের বুকে চাপা আর্তনাদ নিয়ে বাঁচবার শেষ চেষ্টাটা চালাচ্ছে জমিতে লড়াই করে। চারা ও রোপণকৃত বীজ বাঁচাতে জমি থেকে দ্রুত যাতে পানি সরানো হয় সেই পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। আর বৃষ্টি কমলে গাছের চারায় কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শও রয়েছে তাদের।

বাঘাইকান্দি গ্রামের কৃষক জসিম প্রধান আলী নামের এক আলুচাষি বলেন, ‘পানির নিচে থাকলে আলুগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। কিছু দিন আগেই লাগিয়েছিলাম। আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। জানি না কীভাবে ঋণ শোধ করব।

মুন্সীগঞ্জ সদরের টরকি গ্রামের কামাল হোসেন বলেন, ‘এবার দুই কানি জমিতে আগাম আলু রোপণ করেছি। গতবার আলুতে অনেক লোকসান হয়েছে। তাই এবার আগাম আলু চাষ করে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু সব স্বপ্ন পনিতেই ডুবে গেল।’

 গজারিয়া ষোলআনী গ্রামের ওমর ফারুক নামের এক আলু চাষি বলেন, ‘প্রতিবছর অধিক লাভের আশায় এ এলাকার লোকজন আগাম জাতের আলুর বীজ লাগায়। গত বুধবার সকালে ৪০ শতক জমিতে আলুর বীজ লাগিয়েছি। কিন্তু টানা বৃষ্টির কারণে আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছি। আজ জমি থেকে আলুর বীজগুলো তুলতে না পারলে সব পচে যাবে।’

সিরাজদিখানের লতিফদি গ্রামের গ্রামের সালাউদ্দিন মিয়া নামের একজন বলেন, ‘এবার আমি ১৪ কানি জমিতে ৫৬ বস্তা আলুর বীজ লাগিয়েছি। সার, শ্রমিক খরচ ও জমি চাষের খরচসহ সব মিলে শুধু বীজ লাগাতেই প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। দুদিনের টানা বৃষ্টিতে আমার অনেক ক্ষতি হয়ে গেল।

লৌহজং উপজেলার গাওদিয়া ইউনি হাড়িদিয়া গ্রামের আলুচাষি কার্তিক দাস বলেন, ‘এবার আমি সাড়ে ১৫ একর জমিতে আলুর বীজ লাগিয়েছি। সার, শ্রমিক খরচ ও জমি চাষ বর্গা জমির মালিককের টাকা দিয়ে প্রচুর টাকা খরচ হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে আমার সব জমিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। লাভের আশায় লগ্নি করে এবং আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে টাকা ধার এনে আলু চাষ করেছিলাম কিন্তু বৃষ্টি আমার সব কিছু শেষ করে দিল।’

প্রায় একই বক্তব্য আলুচাষি হাজি মেরাজ মিয়ার।

মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. খুরশিদ আলম জানান, মুন্সীগঞ্জে চলতি বছর ৩৭৯০০ হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা রয়েছে। যার মধ্যে ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তবে ১১ হাজার হেক্টর জমিতে বৃষ্টির পানিতে আক্রান্ত হয়েছে। যাদের জমিতে আলু গাছ হয়ে গেছে তারা কিছুটা পরিত্রাণ পাবে। যারা দুএকদিনের মধ্যে বীজ লাগিয়েছে তাদের বীজগুলি নষ্ট হয়ে যাবে, পুনরায় বীজ লাগাতে হবে। কৃষকের শ্রম আর বীজ ক্ষতি হয়েছে। পুরো জেলাতে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনও নিরূপণ করা সম্ভব নয়, আরও সাত দিন লেগে যাবে।’