জাতীয় কবির সমাধিতে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছে কবির পরিবার, রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদসংলগ্ন কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে শত শত মানুষের ঢল দেখা গেছে। এ সময় কবিকে বাংলার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে তাঁর সৃষ্টিকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানায় কবির পরিবার।
জাতীয় কবির নাতনী খিলখিল কাজী বলেন, ‘তাঁর রচনাবলী আমাদের জাতীয় সম্পদ। এটা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব যে, তাঁর রচনাবলী আজও কিন্তু অনুবাদ হলো না। বাংলাদেশের বাঙালিদের মধ্যেই এটা বেঁধে রাখা হয়েছে। আমার মনে হয়, রচনাবলীগুলো অবিলম্বে ইংরেজিসহ সারা পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ ভাষায় অনুবাদ করে তাঁকে পৌঁছে দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।’
এ সময় জাতীয় কবির কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা নানাভাবে, নানা উপায়ে কবির নিকট গভীরভাবে ঋণী, যার কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাঁর অমর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।’
এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন নিজ নিজ দলের নেতাকর্মীরা। এ সময় তাঁরা বিদ্রোহী কবির অসাম্প্রদায়িক চেতনার আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে দেশ গড়ার সংকল্পের কথা জানান।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আজ আমাদের জাতীয় কবির অসাম্প্রদায়িক মানবতাবাদী চেতনায় বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িকতার যে বিষবৃক্ষ, সেই বিষবৃক্ষকে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমূলে উৎপাটন করতে হবে।’
কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারাও। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে শ্রদ্ধা জানান তাঁরা। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রিজভী বিদ্রোহী কবির লেখনি থেকে জাতিকে সব শৃঙ্খল থেকে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা নতুন করে সৃষ্টি করব গণতন্ত্র। আমরা মানুষের নাগরিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করব। সৃষ্টি সুখের উল্লাসে এখানে অমানিশা দূর করে সূর্যের আলো নিয়ে এসে বাংলাদেশকে ভরিয়ে তুলবে এ জাতীয়তাবাদী শক্তি।’
এদিকে, শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসে কয়েকটি দাবি জানিয়েছে কবি নজরুল সাহিত্য মঞ্চ। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—বাংলাদেশের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি ঘোষণা করা, কবির জন্ম ও মৃত্যুর দিনে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা, কবির নামে সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক সাহিত্য পদক দেওয়া, ধানমণ্ডির কবি ভবনকে আন্তর্জাতিক মানের সাহিত্য জাদুঘর হিসেবে স্থাপন করা, কবির জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠান রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা। এ ছাড়া সড়ক ও জেলার নামকরণ কবির নাম দিয়ে করার দাবি জানানো হয়।
সকাল সোয়া ৭টার দিকে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করা হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক ভূঁইয়া, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর, সহকারী প্রক্টর ড. আবদুর রহিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে, যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় কবির ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী পালনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ঢাবি কর্তৃপক্ষ। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে সব কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে প্রশাসনিক ভবনের অধ্যাপক আব্দুল মতিন চৌধুরী ক্লাসরুমে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। আলোচনা সভায় নজরুল বিশেষজ্ঞ হিসেবে জাতীয় অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম বক্তব্য রাখবেন।