জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ পেতে যাচ্ছে কুতুবদিয়া

Looks like you've blocked notifications!
কুতুবদিয়ায় জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। ছবি : এনটিভি

কক্সবাজারের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ কুতুবদিয়ায় অবশেষে বিদ্যুতের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। সাগরের তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবল লাইন স্থাপন করে কুতুবদিয়া দ্বীপে বিদ্যুৎ যাচ্ছে। ফলে কুতুবদিয়া দ্বীপ জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছে। কর্মকর্তাদের আশা, এ বছরের মার্চ অথবা এপ্রিল মাসে কুতুবদিয়া দ্বীপের বাসিন্দারা জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ পাবে। একইসঙ্গে কুতুবদিয়া দ্বীপ ইন্টারনেটের জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছে। কারণ, সাবমেরিন ক্যাবলের বিদ্যুতের লাইনের সঙ্গে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলও কুতুবদিয়া দ্বীপে আনা হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ছয় কিলোমিটারের প্রস্থ কুতুবদিয়া চ্যানেল। সাগরের তলদেশ দিয়ে দেশের মূল ভূখণ্ড পেকুয়া উপজেলার মগনামা প্রান্ত থেকে কুতুবদিয়া দ্বীপে চলে গেছে নেভেল সাবমেরিন ক্যাবল লাইন।

দক্ষিণ ধুরং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আজাদ বলেন, ‘এখানে বিদ্যুৎ এলে কুতুবদিয়া দ্বীপ একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে।’

কুতুবদিয়া উপকূলীয় ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি আকবর খান বলেন, ‘এই দ্বীপের রয়েছে অর্থনৈতিক গুরুত্ব। দ্বীপের পাশেই মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্র বন্দর দুটি বিদ্যুৎ প্রকল্প ধলঘাটা অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং দ্বীপের পূর্ব প্রান্ত মগনামায় হতে যাচ্ছে শেখ হাসিনা নৌঘাঁটি।’

পাওয়ার সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির সাইট ইন্জিনিয়ার আল মুজাহিদ বলেন, ‘বর্তমানে সাগরের তলদেশ দিয়ে ডবল লেনের ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ সাবমেরিন ক্যাবল লাইন স্থাপন এবং ল্যান্ডিং স্টেশনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। কুতুবদিয়া দ্বীপের আভ্যন্তরিন বিদ্যুতের বিতরণ  লাইনের কাজ ৬০ ভাগ শেষ হয়েছে। মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে কয়লাভিত্তিক যে বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করা হচ্ছে, সেখানে ইতোমধ্যে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুতের ল্যান্ডিং স্টেশন করা হয়েছে। মাতারবাড়ীর বিদ্যুতের সাব স্টেশন থেকে ওভারহেড সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে মগনামা সাব স্টেশনে বিদ্যুৎ আসবে। মগনামা সাব স্টেশন থেকে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে কুতুবদিয়ায় জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।’

কুতুবদিয়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আবাসিক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবুল হাসানাত বলেন, ‘কুতুবদিয়া দ্বীপের প্রতিটি বাড়িতে শতভাগ বিদ্যুদায়ন করতে মাত্র চার মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুতের প্রয়োজন রয়েছে। বর্তমানে কুতুবদিয়া দ্বীপে যে সাব স্টেশন হচ্ছে তাতে ১২ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুতের লোড নেওয়ার সক্ষমতা থাকবে। সাধারণ গ্রাহক ছাড়াও কুতুবদিয়ায় জাতীয় গ্রিড থেকে পাওয়া বিদ্যুৎ দিয়ে ফিশ প্রসেসিং লবণ-বরফ মিলসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের শিল্প কারখানা স্থাপন করা যাবে। প্রায় ১৫ হাজার আবাসিক গ্রাহকের মধ্যে বিদ্যুৎ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে আড়াই হাজার গ্রাহককে দিয়ে এই বিদ্যুৎ বিতরণ শুরু করা হবে।’

আবাসিক প্রকৌশলী আবুল হাসানাত আরও বলেন ‘সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলও নিয়ে আসা হয়েছে। এর ফলে কুতুবদিয়া দ্বীপ হাই স্পিড ইন্টারনেটের সুবিধা পাবে। পুরো কুতুবদিয়া দ্বীপ ব্রডব্র্যান্ডের আওতায় চলে আসবে।’

কুতুবদিয়ায় জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। ছবি : এনটিভি

বঙ্গোপসাগরের বেষ্টিত ২১৫ দশমিক ৮০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় দেড় লাখ মানুষের বসবাস। ইউনিয়ন রয়েছে ছয়টি। ১৯৮০ সালে জেনারেটরের মাধ্যমে সন্ধ্যায় কয়েক ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করেছিল বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। ১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্কারী ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের সময় জেনারেটর ক্ষতিগ্রস্ত হলে দ্বীপে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। পরে পিডিবি তা সংস্কার করে উপজেলা সদর ও আশপাশের কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করে।

এরও পর কুতুবদিয়া দ্বীপের আলীআকবর ডেইল এলাকায় পিডিবি একটি বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করে এবং ২০০৮ সালের দিকে তা চালু করে। কিন্তু বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সমস্যার কারণে সম্পূর্ণ চালু করা যায়নি। কুতুবদিয়া দ্বীপের বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার দ্বীপে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেয়।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, ২০২০ সালের দিকে কুতুবদিয়া, হাতিয়া ও নিঝুম দ্বীপে শতভাগ নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুতায়ন নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। সাগরের তলদেশ দিয়ে নেভেল সাবমেরিন ক্যাবল লাইন স্থাপন করে এই প্রকল্পে চারশ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ দেওয়া হয়। দ্বীপে শতভাগ নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের অধীনে গত ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ লাইন স্থাপনের কাজ শুরু হয়। পাওয়ার সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট কোম্পানিসহ কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করছে।