জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে সাবরীনার সহযোগীদেরও : ডিবি
জেকেজি হেলথ কেয়ারকে করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহের কাজ পাইয়ে দিতে ডা. সাবরীনা আরিফ কারো না কারো সহযোগিতা পেয়েছিলেন বলে দাবি করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
আজ শনিবার রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘যারা সাবরীনাকে সহযোগিতা করেছিলেন তদন্তের জন্য তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
নমুনা সংগ্রহের কাজ পেতে জেকেজি অনেকের সহযোগিতা পেয়েছিল বলে শোনা যাচ্ছে। এমন কথার জবাবে আবদুল বাতেন বলেন, ‘নিশ্চয়ই কোথাও না কোথাও তারা সহযোগিতা পেয়েছেন। সহযোগিতা না পেলে একাজগুলো করার কথা না। সাবরীনা সরকারি চিকিৎসক হিসেবে তাঁর ফেসভ্যালু ব্যবহার করে জেকেজির স্বার্থ হাসিল করেছেন।’
আবদুল বাতেন বলেন, ‘যেমন প্রাথমিকভাবে নমুনা সংগ্রহ করার জন্য ঢাকা-নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় একটা প্রজেক্ট তৈরি করেছিল। সেই প্রজেক্টটাও তারা যে পদ্ধতিতে নমুনা সংগ্রহ এবং কোভিড রোগীদের যে সার্ভিস দেওয়ার কথা ছিল, তা তারা দেয়নি।’
অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘আমাদের তদন্ত এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তদন্ত শেষে অনিয়ম পেলে অপরাধগুলো রেকর্ডে নেওয়া হবে। আর যে অনিয়মগুলো ডিপার্টমেন্টাল, সেগুলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।’
করোনার নমুনা সংগ্রহের পর তা পরীক্ষা না করে ইচ্ছেমতো রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগে গত ২৩ জুন ওভাল গ্রুপের মালিক ও জেকেজির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ চৌধুরীসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। জেকেজির চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন ডা. সাবরীনা আরিফ। তিনি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার। ১২ জুলাই ওই হাসপাতাল থেকে সাবরীনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ হারুন অর রশিদের কার্যালয়ে নেওয়া হয়। পরে তাঁর স্বামী আরিফুল চৌধুরীর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া প্রতারণার মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ডা. সাবরীনা ও আরিফুল চৌধুরীকে রিমান্ডে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি। গত শুক্রবার দুপুরে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ উর রহমান ডা. সাবরীনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
এর আগে সাবরীনার বিরুদ্ধে আদালতে রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক লিয়াকত আলী।
আবেদনে পরিদর্শক বলেন, ‘সাবরীনাকে তিন দিনের রিমান্ডে থাকা অবস্থায় দফায় দফায় মামলার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনি মামলা সংক্রান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। যা যাচাই-বাছাই চলছে। সাবরীনা তাঁর সহযোগীদের নিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানের নাম ও লোগো ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে করোনাভাইরাসের পজিটিভ ও নেগেটিভের জাল রিপোর্ট সরবরাহ করেছিলেন।’
আবেদনে আরো বলা হয়, ‘সাবরীনা নিরীহ লোকদের টাকা আত্মসাৎ এবং অবহেলার মাধ্যমে রোগের সংক্রমণ বিস্তারে সহায়তা করে আসছেন। তিনি (সাবরীনা) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন সূত্রে প্রভাব খাটিয়ে স্বামী আরিফুল চৌধুরীর জেকেজি হেলথ কেয়ারকে সরকারি কাজের আদেশ পাইয়ে দিতেন। এতে জেকেজি হেলথ কেয়ার বেপরোয়াভাবে সমাজে এ ক্ষতিসাধন করে এবং বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলে সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়।’
এর আগে গত মঙ্গলবার ডা. সাবরীনার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এর পরের দিন বুধবার ডা. সাবরীনার স্বামী আরিফুল চৌধুরীর চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
গত ২৩ জুন জেকেজির বিরুদ্ধে ‘করোনার নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা না করে ইচ্ছেমতো রিপোর্ট দেওয়ার’ অভিযোগে তেজগাঁও থানা পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানের সময় প্রতিষ্ঠানটির সিইও আরিফুল চৌধুরীসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর পর থেকেই সরকারি চিকিৎসক হয়ে একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদে থাকা সাবরীনার নাম এবং জালিয়াতির তথ্য নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়। এ সময় একটি ল্যাপটপে ১৫ হাজার ভুয়া রিপোর্ট তৈরির আলামত পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করা হয়।
জেকেজি হেলথ কেয়ার থেকে ২৭ হাজার রোগীকে করোনা টেস্টের রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১১ হাজার ৫৪০ জনের করোনার নমুনা সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) মাধ্যমে সঠিক পরীক্ষা করানো হয়েছিল। বাকি ১৫ হাজার ৪৬০ জনের ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করা হয়, যা জব্দ করা ল্যাপটপে পাওয়া গেছে।
শুধু জেকেজি-ই নয়, আরিফ চৌধুরীর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ওভাল গ্রুপেরও চেয়ারম্যান ছিলেন ডা. সাবরীনা। আরিফ গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে ওভাল গ্রুপের ওয়েবসাইট ডাউন পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু ওভাল গ্রুপের ঢাকা এক্সপো-২০১৯ নামের একটি ওয়েবসাইটে ডা. সাবরীনা চৌধুরীকে ওভাল গ্রুপের চেয়ারম্যান পরিচয় দেওয়া হয়েছে। সেখানে ১১ বার চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর নাম লেখা হয়েছে। ওভাল গ্রুপের প্রোফাইলেও চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছে সাবরীনার নাম।