জিডি করে উল্টো হয়রানি? ফোন দিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ

Looks like you've blocked notifications!

হুমকি, নিখোঁজ কিংবা জমি দখলের ফলে হয়রানির শিকার হওয়া ভুক্তভোগীরা নিষ্কৃতি পেতে থানায় গিয়ে নিয়মিত সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। কিন্তু জিডি করার পর পুলিশের কাছে ঘুষসহ নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয় ভুক্তভোগীদের।

জিডি করতে গিয়ে সাধারণ মানুষ যেন আর হয়রানির শিকার না হয়, সে জন্য তৎপর হয়েছে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জ। পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়াতে হয়রানির শিকার হওয়া ভুক্তভোগীর কাছ থেকে তথ্য নিচ্ছে ঢাকা রেঞ্জ অফিস। এ জন্য জিডি করা ব্যক্তির কাছে ফোন দিচ্ছে তারা। ফোনে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে, আপনি কি থানায় জিডি করেছেন? জিডি করতে কি আপনার কাছে টাকা চেয়েছে পুলিশ? কত সময় লেগেছে? পুলিশ কি ভালো ব্যবহার করেছে? পুলিশ কি একপক্ষে অবস্থান নিয়েছে?

জিডি করা ব্যক্তির দেওয়া তথ্যের ওপর তদন্ত শেষে কোনো পুলিশ সদস্যের অপরাধ প্রমাণ হলে নেওয়া হচ্ছে বিভাগীয় ব্যবস্থাও।

ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর—এই ১৩ জেলা নিয়ে ঢাকা রেঞ্জ। এতে থানার সংখ্যা ৯৬টি। ঢাকা মহানগর ও গাজীপুর মহানগর এলাকা ঢাকা রেঞ্জের বাইরে। কাজেই ফোনের সুবিধা আপাতত পাচ্ছে শুধু ১৩ জেলার বাসিন্দারা। চার মাস ধরে জিডি করা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে মতামত নিচ্ছে রেঞ্জ পুলিশ। আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি-অপারেশন অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স) জিহাদুল কবির এনটিভি অনলাইনকে এসব তথ্য জানান।

জিহাদুল কবির বলেন, ‘কারো কাছ থেকে হুমকির শিকার হয়ে, নিখোঁজ ব্যক্তির খোঁজে, জমি দখল কিংবা অন্যান্য হয়রানির শিকার হওয়া ভুক্তভোগীরা নিষ্কৃতি পেতে থানায় গিয়ে জিডি করেন। অনেক সময় দেখা যায়, জিডি করার পরও তাঁরা পুলিশ কিংবা বিবাদীর পক্ষ থেকে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এতে করে আইনের প্রতি অনাস্থা বাড়ে। তাই ঢাকা রেঞ্জ পুলিশ পদক্ষেপ নিচ্ছে, যাতে সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার না হয়।’

অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, ‘চার মাস ধরে এসব বিষয় তদারকি করার ফলে হয়রানির শিকার হওয়া মানুষের সংখ্যা কমছে। প্রথম মাসে ঢাকা রেঞ্জ অফিস যখন তদন্ত শুরু করে, তখন দেখা যায় যে শতকরা ২৫ ভাগ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছিল। পরের মাসে দেখা যায়, ১৫ ভাগ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছিল। গত নভেম্বরে ওই সংখ্যা ২ ভাগে চলে এসেছে। এতে সাধারণ মানুষের ভেতরে আস্থা বাড়বে। কমবে হয়রানিও। প্রতি মাসে অন্তত পাঁচ হাজার জিডি করা হয় ৯৬টি থানায়।’

তদন্ত প্রক্রিয়া কেমন হচ্ছে, তা নিয়ে বলতে গিয়ে জিহাদুল কবির বলেন, ‘থানায় গিয়ে সাধারণ মানুষ জিডি করে ঘরে যান। পরের দিন ওই জিডির কপি সংশ্লিষ্ট জেলার সার্কেল এসপির অফিসে পাঠানো হয় থানা থেকে। তারপর সার্কেল অফিস থেকে ওই জিডির কপি যাচাই-বাছাই করা হয়। গুরুত্ব অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনাও দেওয়া হয় থানা পুলিশকে। এরপর জিডির কপি চলে যায় ঢাকা রেঞ্জ অফিসে। রেঞ্জ অফিস থেকে জিডি করা ভুক্তভোগীকে ফোন দেওয়া হয়। জানতে চাওয়া তাঁর মতামত। যদি ভুক্তভোগী জিডি করার পরও রেঞ্জ অফিসে হয়রানির অভিযোগ করেন, তাহলে শুরু হয় তদন্ত। তদন্ত শেষে পুলিশের অপরাধ প্রমাণ হলে নেওয়া হচ্ছে বিভাগীয় ব্যবস্থা। পরে মাসিক ক্রাইম কনফারেন্সে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপারদেরও (এসপি) এ বিষয়ে জানানো হয়। এখন পর্যন্ত কয়েকজন পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে কতজন, সেটা কাগজ দেখে বলতে হবে। ’