জুয়া খেলায় বাধা দেওয়ায় ৩ শিক্ষার্থীকে পেটাল বখাটেরা
ব্র্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে জুয়া খেলায় বাধা দেওয়ায় স্কুল গেইটের সামনে তিন শিক্ষার্থীকে বেধড়ক পিটিয়েছে বখাটেরা। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৬ ফেব্রুয়ারি আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর উচ্চবিদ্যালয়ের গেইটের সামনে।
আহত তিন শিক্ষার্থী হলেন এসএসসি পরীক্ষার্থী মারুফ, নাইম ও আনাস সরকার। এ ঘটনায় আহত শিক্ষার্থী নাইমের বাবা আব্দুল হামিদ বাদী হয়ে আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় আশুগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন।
ঘটনা জানতে সরেজমিনে গেলে দুর্গাপুর উচ্চবিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, খড়িয়ালা গ্রামের অলিউল্লাহ শাহর ওরসে গত ২১ জানুয়ারি জুয়া খেলতে যায় দুর্গাপুর গ্রামের কামাল মিয়া, শফিক মিয়া ও সেলিম মিয়ার নেতৃত্বে ১৫-২০ জন জুয়াড়ি। জুয়া খেলতে দেখে খড়িয়াল গ্রামের আবদুল হামিদ, মোমিন মিয়াসহ পাঁচ-ছয়জন মিলে জুয়া খেলা বন্ধ করে দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে দুর্গাপুর গ্রামের কামাল মিয়া, শফিক মিয়া এবং সেলিম মিয়া আবদুল হামিদ, মোমিন মিয়াকে শাসিয়ে বলে, এর পরিণতি ভালো হবে না।
পরে তারা এটা দেখে নেবে বলে হুমকি দিয়ে চলে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৬ ফেব্রুয়ারি মারুফ, নাইম ও আনাস সরকার স্কুলের এসাইনমেন্ট এবং ইউনিক আইডির ফরম জমা দিয়ে আনুমানিক সকাল সাড়ে ১০টায় গেইটের সামনে আসার সঙ্গে সঙ্গে দুর্গাপুর গ্রামের নজার বাড়ির কামাল মিয়া, শফিক মিয়া, সেলিম মিয়া, মানিক, ইয়াদুল, কাকন, আনিছ, নিয়ামের নেতৃত্বে ১৫-২০ জন বখাটে তাদের ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে মারাত্মক আহত করে ওই তিন শিক্ষার্থীকে। এ সময় মারামারি থামাতে গিয়ে বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকও আহত হন। পরে খবর পেয়ে আশপাশের লোকজন এবং তাদের অভিভাবকরা এসে আহত শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। আহত শিক্ষার্থীরা এখনও হাসপাতালে ভর্তি আছে।
এ বিষয়ে আহত শিক্ষার্থী নাইমের বাবা আবদুল হামিদ বলেন, বখাটেরা শুধু মেরেই ক্ষান্ত হয়নি। তারা এই বলে শাসিয়েছে যে, মামলা করলে মেরে লাশ ফেলে দেবে। এই অবস্থায় আমি পরিবার নিয়ে আতঙ্কে আছি। তা ছাড়া মারুফ, নাইম, আনাস স্কুলের মেধাবী শিক্ষার্থী। স্কুলের মেধাবী শিক্ষার্থীরা যদি জুয়া খেলায় বাধা দেওয়ায় বখাটেদের অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়, তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তা কোথায়? আমার ছেলে এখনও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি আছে। চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে কি না, তা নিয়ে আমি সন্দিহান। আমি এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে।
এসএসসি পরীক্ষার্থী মারুফের বাবা আব্দুল্লাহ বলেন, আমার ছেলে মারুফের মাথার পিছনের আঘাত গুরুতর। ডাক্তাররা বলছেন তাকে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা দিতে হবে। শিক্ষার্থীরা যদি তাদের জীবনের নিরাপত্তা না পায়, তবে এই কোমলমতি শিক্ষার্থীরা কীভাবে লেখা পড়া করবে। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং দায়ীদের কঠিন শাস্তি দাবি করছি প্রশাসনের কাছে।
দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, ঘটনাটি খুবই ন্যক্কারজনক। আমি এই বিষয়ে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং আশুগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
এই বিষয়ে আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আজাদ রহমান বলেন, আমি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি এবং আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে অভিযান চলছে।