জয়-লেখকের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের দুই বছর

Looks like you've blocked notifications!

নানা বির্তকের কারণে ২০১৯ সালে শোভন-রাব্বানীকে সরিয়ে ছাত্রলীগের র্শীর্ষ দুই পদে দায়িত্ব দেওয়া হয় আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্যকে। দায়িত্ব নেওয়ার কিছুদিন পর করোনা মহামারির কারণে ভাটা পরে সাংগঠনিক কার্যক্রমে। হেফাজত ইস্যু ছাড়া  রাজপথে অতটা সরব না থাকলেও মানবিক কাজ করে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি দৃষ্টি আর্কষণ করে দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে।

দায়িত্ব গ্রহণের দুই বছর পূর্তিতে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা হয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের। তিনি বলেন, আমরা একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছি। দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথম চ্যলেঞ্জ ছিল সংগঠনকে বিতর্কমুক্ত করা। আপনারা দেখেছেন যারা বিতর্কিত ছিল তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছি।

জয় বলেন, সংগঠনকে গতিশীল করার জন্য করেনার এ মহামারির মধ্যেও দুটি মহানগরসহ ৩১টি সাংগঠনিক জেলা কমিঠি ঘোষণা করেছি। হেফাজত মামুনুল হকদের উগ্রসাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধেও ছিলাম সোচ্ছার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে মৃত্যু ভয়কে উপেক্ষা করে করোনা মহামারিতে তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত প্রতিটি নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশে ছিলাম। খাদ্য চিকিৎসা থেকে শুরু করে করোনা রেগীর মৃত্যু লাশ দাফনেও ছিল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

সম্মেলনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের একমাত্র অভিভাবক জননেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সম্মেলনের প্রধান অথিতি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন এবং তিনি যখনই নির্দেশনা দেবেন তখনই সম্মেলন হবে।’

বিতর্কিতদের বহিষ্কার, শূন্যপদ পূরণ :  আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য দায়িত্বে আসার পর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সংগঠনকে বিতর্কমুক্ত করা। আর তারা দায়িত্ব নেওয়ার তিন মাসের মাথায় এক সঙ্গে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য ২১ জন ও নিজ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১১ জনসহ একদিনে ৩২ জনকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে কেন্দ্র ও ইউনিটসমুহের প্রায় ১০০ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়।

সাংগঠনিক জেলা কমিটি গঠন: জয়–লেখক দায়িত্ব পাওয়ার পর গত দুই বছরে দুটি মহানগর ১৮টি জেলাসহ আরও ১১টি সাংগঠনিক কমিটি ঘোষণা করেছেন। কমিটিগুলো হলো- রাজশাহী ও ময়মনসিংহ মহানগর। পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রাম, ভোলা, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার, চাঁদপুর, নড়াইল, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, যশোর, মানিকগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা জেলা কমিটি। এ ছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, রংপুর মেডিকেল কলেজ, সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ, বগুড়া মেডিকেল কলেজ, যশোর মেডিকেল কলেজ, নোয়াখালী আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ, টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ।

করোনায় ছাত্রলীগের মানবিক কর্মকাণ্ড : করোনার শুরু থেকেই সাধারণ মানুষের পাশে থেকে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে ছাত্রলীগ। করোনায় শুরু থেকেই সাধারণ মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, ত্রান দেওয়া, করোনা রোগীদের জন্য বঙ্গমাতা অক্সিজেন সেবা চালু, স্বাস্থ্যসেবায় বুথ স্থাপন, করোনা রোগী পরিবহণের অ্যাম্বুলেন্স সেবা, করোনা রোগীর দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করা, হ্যালো ছাত্রলীগের মাধ্যমে চিকিৎসা ও সেবা খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, রমজানে ভাসমান মানুষের জন্য সেহেরি ও ইফতারের ব্যবস্থা ও টেলি মেডিসিন সেবা চালু করে ছাত্রলীগ। এ ছাড়া কৃষকের পাশে থেকে কৃষকের ধান কেটে দেয় ছাত্রলীগ। তাই করোনাকালে ছাত্রলীগের মানবিক কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, ছাত্রলীগ মানুষে কল্যাণে কাজ করে, মানবতার কল্যাণে কাজ করে। ছাত্রলীগ ধান কেটে গোলায় তুলে দেওয়ায় আমরা বিশাল একটা খাদ্যসংকট থেকে বেঁচেছি।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ছাত্রলীগের এসব কর্মকাণ্ডে প্রশংসা করে বলেন ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে করোনার এই সময় ছাত্রলীগ যে মানবিক ছাত্রলীগে পরিণত হয়েছে আমরা তাকে সাধুবাদ জানাই।

করোনায় ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমার ছাত্রলীগের ছেলেরা করোনা দুর্যোগে এগিয়ে এসেছে। তারা কৃষকের ধান কেটে সহযোগিতা করছে। নিজেরা ফর্মুলা নিয়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বানিয়েছে এবং বিতরণ করেছে।’

২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়। এরপর ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সম্মতিতে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।

দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রায় এক বছরের মাথায় ২০১৯ সালের ১৩ মে ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন শোভন-রাব্বানি। তবে অর্থের বিনিময়ে মূল্যায়ন, শিবির কর্মীদের কমিটিতে অনুপ্রবেশ ও ত্যাগীদের অবমূল্যায়নের বিস্তর অভিযোগ আসে শোভন রাব্বানির করা এই কমিটির বিরুদ্ধে। এর পর পদবঞ্চিত অনেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাতে মাসব্যাপি আন্দোলন ও অনশন কর্মসূচি পালন করেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে চাঁদা দাবি, কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদদের পদ পেতে অর্থনৈতিক লেনদেনের অডিও ফাঁস, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলনে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত অপেক্ষমান রাখা, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিকে ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানে পৌঁছানোর পর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক অনুষ্ঠানে যাওয়া, জ্যেষ্ঠ নেতা তোফায়েল আহমেদকে বসিয়ে রাখা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলনের দুই মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও কমিটি না দেওয়া, কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিতর্কিত বিষয় এবং বিবাহিত ও জামায়াত-বিএনপি সংশ্লিষ্টদের পদায়ন করা, ছাত্রলীগের কমিটি থেকে বাদপড়া নেতাদের সঙ্গে মধুর ক্যান্টিনে মারামারি করা, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের নতুন ভবনে ছাত্রলীগের জন্য বরাদ্দ করা ফ্লোরের বাথরুমে মাদক পাওয়ার বিষয়গুলো উঠে আসে।

এর পর ২০১৯ সালে ১৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভা শেষে তাদেরকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। একই সঙ্গে আল নাহিয়ান খান জয়কে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও লেখক ভট্টাচার্যকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর পর ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সেতু ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের অনুরোধের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব তুলে দেন।