ঝালকাঠিতে লকডাউনে হালখাতায় ভাটা

Looks like you've blocked notifications!

নতুন বছরে নতুন করে বাকির খাতা খোলার প্রাচীন রীতি প্রচলিত আছে আমাদের দেশে। এ রীতি পালনে অভ্যস্ত ঝালকাঠির ব্যবসায়ীরাও। পহেলা বৈশাখ পুরাতন হিসাবের খাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আয়োজন করা হয় হালখাতা উৎসব। মিষ্টিমুখের আমন্ত্রণ জানানো হয় গ্রাহকদের। ক্রেতারাও তাদের বকেয়া পরিশোধ করে। কিন্তু এ বছর পহেলা বৈশাখ শুরু হয়েছে কঠোর লকডাউনের মধ্য দিয়ে। তাই ঝালকাঠির ব্যবসায়ীদের বকেয়া ওঠানোর সেই হালখাতা উৎসবে ভাটা পড়েছে।

একদিকে বকেয়া না পাওয়ার যন্ত্রণা, অন্যদিকে লকডাউনে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখায় দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। শুধু এ বছরই নয়, গত বছরও একই অবস্থার শিকার হয়েছেন তাঁরা।

জানা যায়, সুগন্ধা ও বাসন্ডা নদীর তীর ঘেঁষা প্রাচীন জনপদ ঝালকাঠি। ১৮৭৫ সালে ব্রিটিশ সরকার ঝালকাঠি বন্দরকে পৌরসভা ঘোষণা করে। সেই থেকে পালতোলা সাম্পান (ট্রলার) ভিড়তো সুগন্ধা ও বাসন্ডা নদীর বিভিন্ন ঘাটে। আস্তে আস্তে গড়ে ওঠে নানা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। ঝালকাঠিকে তখন বলা হতো দ্বিতীয় কলকাতা। ব্যবসা-বাণিজ্যে সমৃদ্ধ ঝালকাঠির ব্যবসায়ীরা স্থানীয় গ্রাহকদের বাকিতে কেনাকাটার সুযোগ দিতেন। নিত্যপণ্য, স্টেশনারি, খাবার, পোশাক ও নির্মাণ সামগ্রীর দোকানে হাজার হাজার টাকা বাকিতে কেনাকাটা চলতো বছরজুড়ে। আবার বাংলা বছরের শুরুতেই পহেলা বৈশাখে সেই টাকা পরিশোধ করা হতো আনন্দ উৎসবে। হালখাতা উৎসব চলতো ছোট-বড় প্রতিটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে। এক সময় এই হালখাতা উৎসব বাঙালির প্রাণের উৎসবে রূপ নেয়। কিন্তু করোনাভাইরাসের মহামারিতে আজ সেই উৎসবে ভাটা পড়েছে। দুই বছর ধরে ব্যবসায়ীরা এ উৎসব করতে পারছেন না। হালখাতা থেমে যাওয়ায়, আটকে আছে বকেয়া টাকাও।

ঝালকাঠির অন্যতম নিত্যপণ্যের আড়ত ‘মেসার্স খোকন লাল ব্রহ্ম’-এর মালিক খোকন লাল বলেন, ‘প্রতি বছর আমরা লাখ লাখ টাকা মানুষের সুবিধার্থে বাকি দেই। পহেলা বৈশাখে এ টাকা পরিশোধের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। ক্রেতারাও দোকানে এসে মিষ্টিমুখ করে আনন্দে টাকা পরিশোধ করে যান। কিন্তু দুই বছর ধরে করোনার কারণে আমরা হালখাতা অনুষ্ঠান করতে পারছি না। আর বকেয়া ঠিকমতো দিতেও পারছে না অনেকেই। তবে যারা সচেতন, তাঁরা আগেভাগেই বকেয়া পরিশোধ করছেন।’

শহরের কাপড় ব্যবসায়ী মঞ্জুর মোর্শেদ লিটু বলেন, ‘কাপড়ের দোকানে প্রতি বছরই অনেক টাকা বকেয়া পড়ে। গ্রাহকরা চৈত্র মাসেই বকেয়া পরিশোধের প্রস্তুতি নেন। পহেলা বৈশাখে পরিবারের সবাইকে নিয়ে আসেন হালখাতা উৎসবে, বকেয়া পরিশোধ করতে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে হালখাতা অনুষ্ঠান তো দূরের কথা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানই বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এতে একদিকে লোকসান গুনতে হচ্ছে, অন্যদিকে বকেয়া আদায় হচ্ছে না। ঝালকাঠির অধিকাংশ ব্যবসায়ীই এমন অসুবিধার মধ্যে আছে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

শহরের সূর্য ভাণ্ডারের মালিক অশোক বণিক বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ বাঙালিদের জন্য আনন্দের একটি দিন। নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকে এদিনে। এর মধ্যে হালখাতা একটি বড় অনুষ্ঠান। গ্রাহকেরা তাদের বকেয়া পরিশোধ করেন এই উৎসবে। কিন্তু করোনা আমাদের সেই উৎসব কেড়ে নিয়েছে। সরকার ঘোষিত লকডাউনের কারণে আমরা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছি। হালখাতা অনুষ্ঠান করতে না পারায় অনেকেই বকেয়া টাকা পরিশোধ করছেন না। তাই বিপদে রয়েছেন অধিকাংশ ব্যবসায়ী।