ঝালকাঠিতে স্বাস্থ্যবিধি মানছে না জনসাধারণ, টিকা নিতেও আগ্রহ কম
সম্প্রতি করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য সরকারি নির্দেশনাগুলো প্রচার করার পরও স্বাস্থ্যবিধি মানছে না ঝালকাঠির জনসাধারণ। শহরে কিংবা গ্রামে সবখানেই মাস্ক ছাড়াই ঘর থেকে বের হচ্ছে মানুষ। বাজারেও প্রচণ্ড ভিড়ে চলছে বেচাকেনা। ছোট যানহাবনে একাধিক যাত্রী একসঙ্গে বসে যাতায়াত করছে। এতে সংক্রমণ আরো বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সবাই। এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতারা।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার চারটি উপজেলায় সাত লাখ মানুষের বসবাস। এর মধ্যে এক লাখ ২০ হাজার মানুষকে টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের। গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে আজ ৩১ মার্চ বুধবার পর্যন্ত জেলায় ১৮ হাজার ২৩৫ জন টিকা নিয়েছে। এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৭০০ মানুষের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে এক বছরে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৮৮০। মৃত্যু হয়েছে ২১ জনের, আর সুস্থ হয়েছেন ৮২৮ জন। তবে করোনা উপসর্গে যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের কোনো তালিকা নেই স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে।
জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার সরকারি নির্দেশনা প্রচারের পাশাপাশি জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জনসাধারণের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে মাস্ক। এর পরও স্বাস্থ্যবিধি না মানলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এদিকে করোনা প্রতিরোধের টিকা নিতে আগ্রহ নেই অনেকের। ভয় ও আতঙ্কের কারণেও টিকা নেওয়ার হার কম।
বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা তাদের জরিপের দাবি করে, ঝালকাঠিতে করোনা উপসর্গে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যাও অনেক।
শহরের ফায়ার সার্ভিস মোড়, চৌমাথা, চাঁদকাঠি চৌমাথা, কলেজ মোড়, বিভিন্ন খেয়াঘাট, লঞ্চলাঘ, বাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাসা থেকে কাজে বের হওয়া বেশির ভাগ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। একসঙ্গে জটলাকরে হেঁটে হেঁটে গল্প করছে কেউ কেউ। গণপরিবহণে যাত্রীসংখ্যা কম নিলেও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। ছোট যানবাহনে একাধিক যাত্রী একসঙ্গে বসে যাতায়াত করছে। সকাল থেকেই বাজারে মাস্কহীন মানুষের ভিড় দেখা গেছে।
এ সময় কথা হয় বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সঙ্গে। করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে এখনো অনেকের ধারণা নেই। যারা সচেতন দাবি করেন, তাদের মুখেও মাস্ক দেখা যায়নি।
এখনো টিকা নেয়নি এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেকেই ভয়ের কারণে টিকা নিচ্ছে না। অজানা অতঙ্ক রয়েছে কারো কারো মধ্যে। কেউ বলছেন, টিকা নেওয়ার পরও অনেকে আক্রান্ত হয়েছে, তাই টিকা নিতে আগ্রহ কমে যাচ্ছে।
ঝালকাঠি সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি হেমায়েত উদ্দিন হিমু বলেন, সব শ্রেণির মানুষ এখনো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে না। যারা সচেতন দাবি করে, তাদের মুখেও মাস্ক দেখা যায় না। টিকা নিতেও মানুষের আগ্রহ কম। এ ব্যাপারে প্রশাসনের আরো কঠিন হওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে রাজনীতিবিদ ও জনপ্রনিধিদের আরো সচেত হতে হবে, যাতে নেতাদের দেখে কর্মীরাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে।
ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য সরকারি নির্দেশনা প্রচার করা হচ্ছে। আমরা শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য জনসাধারণকে পরামর্শ দিচ্ছি। ইতোমধ্যেই জেলার বিভিন্ন স্থানের মেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রয়োজনে আরো কঠোর অবস্থানে যাবে জেলা প্রশাসন।
ঝালাকঠির সিভিল সার্জন ডা. রতন কুমার ঢালী বলেন, করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। করোনার টিকা নিতে মানুষের মাঝে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।