ঝিনাইদহে আমরণ অনশনে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ঢাবি শিক্ষার্থী শাহীন
ঝিনাইদহ জেলা শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে আমরণ অনশন শুরু করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে স্নাতক পাস করা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মোহাম্মদ শাহীন আলম। আজ সোমবার সকাল ৯টা থেকে এ কর্মসূচি শুরু করেন তিনি। তার স্পষ্ট বক্তব্য সরকারি চাকরির নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত এ অনশন ভাঙবেন না তিনি।
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার আলমপুর গ্রামের কৃষক আবদুল কাদের ও মোছা. ফারা বেগমের দ্বিতীয় সন্তান শাহিন আলম। তিনি তখন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। বাড়ির কাছে আলমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়েন। হঠাৎ একদিন জ্বর হয়। ডাক্তার কবিরাজ দেখিয়ে জ্বর সেরে যায়। কিন্তু ধীরে ধীরে চোখের দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণ হারিয়ে যায় তার। তবুও থেমে থাকেনি পড়ালেখা। ২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করেছেন। এখন মাস্টার্স শেষ করার অপেক্ষায় আছেন তিনি।
২০২০ সালের জুলাই মাসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিনা পয়সায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেওয়ার ঘোষণা দেন। করোনাকালে দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু করার চিন্তা থেকে এ উদ্যোগ নেন শাহিন। দেশ-বিদেশের শিক্ষার্থীদের কম্পিউটারে পারদর্শী করে তোলেন তিনি। তিনি প্রমাণ করেছেন, তারাও পারেন। কিন্তু তার ভাগ্যে জুটেনি সরকারি চাকরি। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও শেষ পর্যন্ত চাকরি হয়নি তার। টাকা নেই। খুঁটির জোরও নেই। চরম অবহেলা থেকে প্রতিবাদী হয়ে উঠেছেন তিনি।
করোনাকালীন দেশ বিদেশের ১১৩ জন শিক্ষার্থীকে অনলাইনে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিয়ে সাড়া ফেলে দেন শাহিন। অনলাইন মাধ্যমে এ প্রশিক্ষণ দিতে কারো কাছ থেকে একটি কানাকড়িও নেননি তিনি। নিজে একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী প্রশিক্ষণও দেন দেশ-বিদেশের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের। সে সময় এনটিভিসহ একাধিক গণমাধ্যম তাকে নিয়ে চমৎকার প্রতিবেদন প্রচার হয়। সেই থেকে আলোচনায় উঠে আসেন তিনি।
এখন হতাশায় ঘিরে ধরেছে শাহীনকে। তিনি উল্লেখ করেছেন ‘যতক্ষণ না সরকারি চাকরি পাওয়ার নিশ্চয়তা পাব, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরণ অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাব। শুধু নিজের জন্য নয়, দেশের সব শিক্ষিত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর জন্য একই দাবি তুলেছেন তিনি।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শাহীন আলমকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন ঝিনাইদহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আসেন। বিকেল অনুমান ৪টার দিকে তিনি শাহীন আলমকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। এ সময় স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, সরকারি চাকরির নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত অনশন ভঙ্গ করবেন না তিনি। সন্ধ্যায় আসেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সেলিম রেজা। তাকেও জানিয়ে দেন সরকারি চাকরির নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত অনশন ভঙ্গ করবেন না তিনি। এতে তার মৃত্যু হলেও অনশন চালিয়ে যাবেন।
এদিকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এই বৃষ্টির মধ্যেও শাহীন আলম খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নিয়েছেন। মাঝেমধ্যে মাইকে তিনি তার একমাত্র দাবির কথা তুলে ধরে বক্তব্য দিচ্ছেন।