ঝিনাইদহে গ্রামাঞ্চলেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস
ঝিনাইদহে গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। সর্বাত্মক লকডাউন দিয়েও কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। আজ মঙ্গলবার ১৪৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৯৩ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তের হার ৬৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ।
ঝিনাইদহে করোনা রোগীর আর্তনাদ ও স্বজনদের আহাজারিতে হাসপাতালগুলোর বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। মৃত্যুর তালিকা লম্বা হচ্ছে। এ অবস্থায়ও অবৈধ পথে ভারতে যাতায়াত অব্যাহত রয়েছে। এতে ঝিনাইদহসহ সীমান্ত সংলগ্ন জেলাগুলোতে করোনা সংক্রমণ এখন তুঙ্গে। দালালের হাত ধরে ভারত থেকে আসা নারী-পুরুষ ও শিশু করোনাভাইরাস ছড়াতে ছড়াতে গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছে। কেউ ধরা পড়ে, কেউ পড়ে না।
ঝিনাইদহের মহেশপুর ব্যাটালিয়ন (৫৮ বিজিবি) অবৈধ পথে ভারত যাওয়ার সময় নতুন করে নয়জনকে আটক করেছে।
সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম খান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, আজ মঙ্গলবার বেলা ১টার দিকে সীমান্তের বেনীপুর বিওপির অধীনস্থ জীবননগর উপজেলার আটপিকা এলাকা থেকে আটক করা হয় তাদের। এরা হলেন বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলার হোন্দাঘাটা গ্রামের মো. সোলেমান খান (৪২), একই উপজেলার পশ্চিমখাদা গ্রামের মো. সবুর খান (২৩), পূর্ব খুন্তাকাটা গ্রামের মোছা. সালমা বেগম (৩০), যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার আমিনী গ্রামের মো. ইমন হোসেন (১৯), বাঘারপাড়া উপজেলার মাইঝালী গ্রামের মো. মোজাম্মেল হোসেন (৪০), ফরিদপুর জেলার সালতা উপজেলার ফুলবাড়িয়া গ্রামের রুমা শেখ (২৪), একই গ্রামের মোছা. অন্তরা শেখ (১৮), শরীয়তপুর জেলার পালং থানার চরযাদবপুর গ্রামের মো. এনায়েত হোসেন (৩৮) এবং ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ থানার ছোটঘাটপাড়ার মোছা. সোহাগী (৩০)। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করার অপরাধে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করেছে বিজিবি। এর আগে গতকাল সোমবার বেলা দেড়টার দিকে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর থানার লেবুতলা গ্রাম থেকে বাংলাদেশি নাগরিক অবৈধ পথে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করার অপরাধে আটক করা হয়। তিনি চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি থানার গোপালঘাটা গ্রামের মো. আব্দুর রহিম (২২)। এ ছাড়া সকাল সাড়ে ৮টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবনগর উপজেলার করিমপুর বাজার থেকে চার বাংলাদেশিকে অবৈধ পথে ভারত থেকে বাংলাদেশ প্রবেশ করার অপরাধে আটক করা হয়। এরা হলেন মাগুরা সদর উপজেলার দক্ষিণ শিমুলিয়া গ্রামের সুভন বিশ্বাস (২৪) ও তার স্ত্রী প্রিয়াংকা বিশ্বাস (২২), একই গ্রামের সুরঞ্জিত বিশ্বাস (২২) ও তরুণ বিশ্বাস (২৩)।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম বলেন, ‘অবস্থা ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২২৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪৪ জনের পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া গেছে। নতুন করে ৯৩ জনের শরীরে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষা অনুপাতে আক্রান্তের হার ৬৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ। মারা গেছে একজন।’
অপরদিকে, ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘সব শেষ ২৪ ঘণ্টায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে একজনের করোনা পজিটিভ ছিল। বাকিরা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়ার পর মৃত্যুবরণ করেছেন। এই মুহূর্তে করোনা ওয়ার্ডে ৮৫ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় ৩০ জন আক্রান্ত ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এরই মধ্যে একজন চিকিৎসক, নয় জন নার্স ও সাতজন কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অক্সিজেন যা আছে, তা দিয়ে আগামীকাল (বুধবার) পর্যন্ত চলবে। রোগীর চাপ সামাল দিতে আজ থেকে হাসপাতালের পুরাতন ভবনে ১০০ বেডের করোনা ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। তবে করোনার নমুনা সংগ্রহে চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নমুনা না দিতে পেরে অনেকেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছে।’
আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসায় ভাইরাসটি দ্রুত সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের এ কর্মকর্তা।
প্রশাসনের জারি করা সর্বাত্মক লকডাউন আংশিকভাবে পালিত হচ্ছে। জেলা শহরের দোকানপাট বন্ধ থাকলেও চোরাগুপ্তা কেনা-বেচা চলছে। সড়কে ইজিবাইক, নসিমন-করিমন, মাহেন্দ্রসহ বিভিন্ন যানবাহনের চাপও বেড়েছে। সপ্তম দিনের মতো চলছে এ লকডাউন। গ্রামাঞ্চলের হাটবাজারে মানুষের ভিড় লেগেই আছে।