টার্গেটে পৌঁছানোর পর আমি টিকা নেব : প্রধানমন্ত্রী

Looks like you've blocked notifications!
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শনিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন। ছবি : এনটিভি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনার টিকা আমি অবশ্যই নেব। আগে আমার দেশের সব মানুষকে দেওয়া হোক। দেশের কতভাগ মানুষকে দিতে পারলাম, নিতে পারল, সেটা আগে দেখতে চাই। আমার একটি টিকা না নেওয়ার কারণে যদি আরও একটি প্রাণ বাঁচে, সেটা ভালো, তাই না?

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমার তো ৭৫ বছর বয়স। আজ আছি, কাল নাই। জীবন-মৃত্যুর তো বিশ্বাস নাই। যে কোনো সময় যে কেউ মারা যেতে পারি। আমাদের একটি নির্দিষ্ট টার্গেট আছে। ওই টার্গেটে পৌঁছানোর পর টিকা আমারটা আমি নেব। যদি টিকা সবাইকে দেওয়ার পর থাকে, তাহলে দেব।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শনিবার বিকেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে করোনার টিকা গ্রহণ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রান্তে ছিলেন গণমাধ্যমকর্মীরা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার কিছু দিন পরই আমি টিকার জন্য অগ্রিম বুকিং দিয়ে রেখেছিলাম। দেশের  সব মানুষের জন্য টিকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমরা প্রথমে চেষ্টা করছি সম্মুখ সারির লোকজনকে টিকা প্রদানের জন্য। ইতোমধ্যে আরও তিন কোটি টিকা আনার ব্যবস্থা করছি। একই সঙ্গে দেশের বাইরে কেউ যদি উৎপাদন করতে ব্যর্থ হয় তখন দেশে উৎপাদন করা যায় কিনা সেটার চেষ্টা করছি।    

ডিজিটাল নিরাপত্তা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলে। কেউ অপরাধ করলে তার বিচার হবে। মাঝখানে কিছু হলে সেটার জন্য তো দায়ী করা যাবে না। আমি বলব আইন তার নিজস্ব গতিতে চলছে।  

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমালোচনা যারা করার তারা তো করবে। যারা বলছে, বলতে থাকুক। দেশের পরিস্থিতিতে এ আইন করা হয়েছে। আমার বয়স তো ৭৫ বছর। স্কুলজীবন থেকে রাস্তায় নামার অভ্যাস আছে। ১৯৬২ সাল থেকে রাজনীতি করে আসছি। দেশের সবাইকে আমার চেনা আছে। কারাগারে অসুস্থতার কারণে কেউ মারা গেলে কার কী করার আছে?      

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ অবশ্যই আমাদের জন্য গর্বের ও এক ঐতিহাসিক ঘটনা। এটি এমন এক সময়ে হয়েছে যখন আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালন করছি। এ কৃতিত্ব সম্পূর্ণই দেশের নাগরিকদের।

প্রধানমন্ত্রী দেশে ও দেশের বাইরে অবস্থানরত সর্বস্তরের নাগরিকদের ধন্যবাদ জানান। নিজেকে দেশের একজন সেবক হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি দেশের একজন নগণ্য সেবকমাত্র। সব কৃতিত্ব দেশের মানুষের।’

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতেই স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আর এই সুখবর দিতে সংবাদ সম্মেলন করেন সরকারপ্রধান। স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে থাকা বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে সিডিপির সব শর্ত পূরণ করে ২০১৮ সালে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- মাথাপিছু আয় যেখানে হতে হয় কমপক্ষে এক হাজার ২৩০ মার্কিন ডলার—সেখানে ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল এক হাজার ৮২৭ ডলার। মানবসম্পদ সূচকে উন্নয়নশীল দেশ হতে ৬৬ পয়েন্টের প্রয়োজন আর বাংলাদেশের পয়েন্ট এখন ৭৫ দশমিক ৩। জাতিসংঘের আইন অনুসারে, কোনো দেশ পরপর দুটি ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় উত্তরণের মানদণ্ড পূরণে সক্ষম হলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পায়। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি বা ইউএন-সিডিপির সভা থেকে তা ঘোষণা করা হয়। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পেলে পাঁচ বছরের প্রস্তুতিকাল শেষে ২০২৬ সালে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে আনুষ্ঠানিক উত্তরণ ঘটবে। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠলে সস্তায় ঋণ পাওয়া এবং বিভিন্ন রপ্তানি সুবিধা হারাবে বাংলাদেশ। ফলে সেই সুবিধাগুলো উত্তরণের প্রস্তুতি-পর্ব চেয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এমন একটি সময়ে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য চূড়ান্ত সুপারিশ পেতে চলেছে, যখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করছে জাতি।