ট্রিপল হত্যা মামলায় চেয়ারম্যানসহ ১৪ জনের যাবজ্জীবন

Looks like you've blocked notifications!
খুলনা বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। ফাইল ছবি

বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জের দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান ট্রিপল হত্যা মামলার প্রধান আসামি শহিদুল ইসলাম ফকিরসহ ১৪ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ রোববার দুপুর দেড়টার দিকে খুলনা বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নজরুল ইসলাম হাওলাদার এ রায় ঘোষণা করেন।

একইসঙ্গে দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিদের প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা করে জ‌রিমানা, অনাদা‌য়ে আরও এক বছ‌রের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলা থেকে ৪২ জনকে খালাস দিয়েছেন আদালত। এ সময় আদাল‌তে সুব্রত কুমার সাহা ছাড়া সব আসামিই উপ‌স্থিত ছি‌লেন।

সাজাপ্রাপ্ত অন্য ১৩ আসামিরা হলেন আবুয়াল ফকির, মো. হুমায়ুন হাওলাদার, মিল্টন খান, মো. মফিজ খান, মো. ফারুক, মো আবুল হোসেন শেখ, মো. মোদাচ্ছের শেখ, সুনীল দাস, বিশ্বনাথ ওরফে বিশ্ব প্রমানিক, মো. লিয়ন শিকদার, সুব্রত কুমার সাহা ওরফে পল্টু (পলাতক), মেহেদী ওরফে রুবেল ফকির ও মো. মহি মোল্লা।

রায় ঘোষণার পর ক্ষোভ প্রকাশ করেন নিহত আনসার আলী দিহিদারের ছেলে মেহেদী হাসান শাওন। তিনি দাবি করেন, হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম ফকিরসহ আমার বাবা-মায়ের হত্যাকারীদের মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে আপিল করা হবে। আমরা এই রায়ে মোটেও সন্তুষ্ট নই।’

জানা গেছে, দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনছার আলী দিহিদার (৫৩) ও কর্মী শুকুর শেখকে (৪২) কুপিয়ে, পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়।

মামলা সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগের স্থানীয় রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম ফকির ও আনসার আলী দিহিদারের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। সেই বিরোধের জের ধরে এ ট্রিপল হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওই সময় চেয়ারম্যান শহীদুল ফকিরের লাইসেন্স করা একটি বিদেশি শটগান, একটি রিভলবার, একটি দেশি তৈরি ওয়ান শুটার গান, একটি কুড়াল ও তিনটি গুলি পুলিশ জব্দ করে।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১ অক্টোবর ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ফকিরের নেতৃত্বে তার লোকজন দৈবজ্ঞহাটি বাজার থেকে দুপুর আড়াইটায় দিকে যুবলীগনেতা শুকুর শেখকে সেলিমাবাদ ডিগ্রি কলেজ মাঠে গুলি করা করে ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে নিয়ে ফেলে রাখে। বেলা সাড়ে ৩টায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনসার আলী দিহিদারের বাড়িতে হামলা করা হয়। এ সময় আনসার আলী তার ঘরের পাটাতনে গিয়ে পালান। আসামিরা ঘরের চালার টিন কেটে পাটাতনে প্রবেশ করেন। সেখান থেকে টানাহ্যাচড়া করে বের করে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে পিটিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে নিয়ে যান। পরে সেখানে একটি কক্ষে নিয়ে শুকুর শেখ ও বাবলু শেখকে বোরকা পরিয়ে নির্যাতন করা হয়। একাধিক গুলি ও মারধরে শুকুর শেখ ঘটনাস্থলেই মারা যান। বাগেরহাট থেকে খুলনা নেওয়ার পথে মারা যান আনসার দিহিদার। ওই দিন আনসার আলী দিহিদারের স্ত্রী মঞ্জু বেগম এবং শ্রমিকনেতা বাবলু শেখকেও বেধরক মারধর করে সন্ত্রাসীরা। মারপিটে মঞ্জু বেগমের দুই পা ও বুকের হাড় ভেঙে যায়। দীর্ঘ ২২ মাস বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর তিনিও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০২০ সালের ৩০ জুলাই দিবাগত রাত ১২টায় মারা যান।

২০১৮ সালে শুকুর শেখের মৃত্যুর খুনের ঘটনায় তার ভাই শেখ ফারুক হোসেন বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। ৪ অক্টোবর রাতে আনসার দিহিদার ও শুকুর শেখ হত্যার ঘটনায় মোড়েলগঞ্জ থানায় এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে আরও একটি মামলা করেন। পরে ২০১৯ সালের ৪ জুন ৫৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন তৎকালীন দৈবজ্ঞহাটি ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম ফকির, ইউপি সদস্য আজিম, আল আমিন, সুনীল, শ্যাম ও মোদাচ্ছের,গ্রাম পুলিশ সদস্য আবুয়াল হোসেন ফকির, আবুল শেখ ও জুলহাস ডাকুয়া। এরা সবাই আওয়ামী লীগদলীয় চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম ফকিরের অনুসারী এবং দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থক।

থানা সূত্রে জানা গেছে শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ২৩টি হত্যা মামলাসহ ৭১টি মামলা রয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রোমানা তানহা জানান, রাজনীতি নিয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনছার আলী দিহিদারের সঙ্গে দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম ফকিরের বিরোধ ছিল। এর জেরে শুকুর শেখ, আনছার আলী দিহিদার, তার স্ত্রী মঞ্জু বেগম হত্যা মামলায় প্রধান আসামি বহিষ্কৃত ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম ফকিরসহ ১৪ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলা থেকে ৪২ জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।